সকল মেনু

সহজিয়া জীবনে শাহ আবদুল করিম (ভিডিও)

 বিনোদন ডেস্ক : যাপিত জীবনের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নির্মাণ করেছেন জীবনের সহজিয়া শিল্পরূপ। জীবনকে মিশিয়ে দিয়েছেন কালনী নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে। উজানধল গ্রামের মানুষ আর স্রষ্টার সাধনায় মগ্ন থেকে লিখেছেন গান। সেই গানই হয়ে উঠেছে কোটি মানুষের আনন্দ-বেদনার সঙ্গী। তিনি কিংবদন্তি মরমী সাধক শাহ আবদুল করিম। স্কুলে গিয়েছিলেন মাত্র আট দিন। কিন্তু সমস্ত জীবটাকেই তিনি বানিয়ে তুলেছেন পাঠশালা। নিজেই হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠান। এখন শাহ আবদুল করিম নামের পাঠশালায় পড়তে আসেন প্রথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ। আবদুল করিমের মাধ্যমে খোঁজে বেড়ান জীবনের সহজিয়া শিল্পরূপ।

১২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার শাহ আবদুল করিমের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালে জীবনের অধ্যায় শেষ করে তিনি মিশে গিয়েছেন মহকালের মহাযাত্রায়। কিন্তু রেখে গেছেন এক সৃষ্টিশীল কর্মজীবন। এ জীবনের পথ ধরেই হাজার বছর তাকে খোঁজে বেড়াবে মানুষ। শাহ আবদুল করিমের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়েই সাজানো হয়েছে রাইজিংবিডি’র বিনোদন বিভাগের এ প্রতিবেদন।

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন শাহ আবদুল করিম। কালনীর তীরে বেড়ে উঠা শাহ আব্দুল করিমের গান গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত এলাকার মানুষের কাছে সমানতালে জনপ্রিয়।

দারিদ্রতা ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত সাধনার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। বাউল সম্রাটের গানের অনেক বড় প্রেরণা হয়ে আছেন তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা যাকে তিনি আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’।

ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সকল অন্যায়,অবিচার,কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে। তিনি তার গানের অনুপ্রেরনা হিসেবে পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ এর দর্শন থেকে।

তিনি আধ্যাত্নিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়তী, মারফতি, নবুয়ত, বেলায়া সহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চাও করেছেন।

স্বল্পশিক্ষিত বাউল শাহ আব্দুল করিম এ পর্যন্ত প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান লিখেছেন এবং সুরারোপ করেছেন। বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে তাঁর ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী এ বছরের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

বাউল শাহ আবদুল করিমের এ পর্যন্ত ৬টি গানের বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো হলো- আফতাব সংগীত, গণ সংগীত, কালনীর ঢেউ, ভাটির চিঠি, কালনীর কূলে এবং দোলমেলা।

বাউল শাহ আব্দুল করিম ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বাংলা একাডেমি তার দশটি গানের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। এছাড়া দ্বিতীয় সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে এই বাউল সম্রাটকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। এছাড়াও ২০০০ সালে কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক পান।

২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তীঃ বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২ টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। এই অ্যালবামের বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।

২০০৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর, শনিবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সিলেটের একটি ক্লিনিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শাহ আবদুল করিমের উল্লেখযোগ্য কিছু গান

১/ বন্দে মায়া লাগাইছে
২/ আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
৩/ গাড়ি চলে না
৪/ আমি কূলহারা কলঙ্কিনী
৫/ কোন মেস্তরি নাও বানাইছে
৬/ কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু
৭/ বসন্ত বাতাসে সইগো
৮/ আইলায় না আইলায় নারে বন্ধু
৯/ সখী কুঞ্জ সাজাও গো
১০/ রঙ এর দুনিয়া তরে চায় না

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top