ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ খুঁজতে গিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নেত্রকোণা শহরের নিজ বাসায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর কারা ন্যান্সিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তাদের সম্পর্কে জানতে পারেননি সাংবাদিকরা। নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে নিয়ে এসে ভর্তি করানো হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন তরুণ। সাংবাদিকরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কোনো কথা বলেননি তারা। গুরুতর অসুস্থ ন্যান্সিকে যখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হচ্ছিল তখন ধারে কাছে তার স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদকে দেখা যায়নি। পরে তিনি হাসপাতালে আসেন। তবে তার মেজাজ ছিল অনেকটাই উগ্র। সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
এসব ঘটনায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী ও কয়েকবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পাওয়া দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সির আত্মহত্যার চেষ্টার কারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
সংগীত ক্যারিয়ার তুঙ্গে ওঠার সময়ই সম্পর্কের সূত্র ধরে ন্যান্সি বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী সৌরভকে। এর দেড় বছরের মাথায় রোদেলা নামে এক মেয়ের মা হন তিনি। এরপর ছয় বছরের সংসারে ঘটে বিচ্ছেদ। গেল বছরের ৪ মার্চ আগের স্বামী সৌরভেরই পরিচিত ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর লেনের নাজিমুজ্জামান জায়েদকে তিনি বিয়ে করেন। এর পরের বছরেই নায়লা নামে আরেক মেয়ের মা হন।
স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে কর্মক্ষেত্র ঢাকা আর ময়মনসিংহে নিয়মিত যাতায়াত করতেন ন্যান্সি। তবে দ্বিতীয়বার মা হওয়ার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ যাতায়াত কষ্টকর হওয়ায় কিছুদিন আগে ঢাকার মগবাজারে বাসা ভাড়া নেন ন্যান্সি।
স্থানীয় সূত্রমতে, কিছুদিন আগে ন্যান্সির মা জোৎস্না হকের মৃত্যু হয়। এরপর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ ঘটনায় বাবার সঙ্গে তার দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় মনঃকষ্টে ছিলেন তিনি।
নেত্রকোণা ছোটগারা এলাকায় ন্যান্সি যে দোতলা বাসা নির্মাণ করেছেন সেখানে কেউ থাকতেন না। মাঝে মাঝে গিয়ে তিনি একাই থাকতেন।
গতকাল শনিবার ওই বাসাতেই ন্যান্সি অতিরিক্তি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীরা জানতে পেরে প্রথমে নেত্রকোনা হাসপাতালে নেয়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠায়।
ঘটনার সময় নেত্রকোনার ছোটগারা এলাকার বাসায় ন্যান্সি কি একাই ছিলেন, নাকি তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিলেন- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই বাসায় নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া আর কেউ ছিল না। আগের দিন তিনি সেখানে গিয়ে উঠেছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। যে তরুণরা ন্যান্সিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তাদের পরিচয় কেউ জানতে পারেননি।
হাসপাতালে নেয়ার সময় ন্যান্সিকে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতে দেখা গেছে। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সঙ্গে থাকা লোকজন বাধা দেন।
কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সির আত্মহত্যার চেষ্টার খবর তাৎক্ষণিকভাবে প্রচার করে বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টিভি চ্যানেল। স্থানীয় সাংবাদিকরা ভিড়ও করেন ময়মনসিংহ মেডিকেলে। ঘটনার অনেক পরে মেডিকেলে আসেন ন্যান্সির স্বামী জায়েদ। অসুস্থ অবস্থায় ছবি তুলতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কয়েকজনকে গালাগালিও করেন।
শুধু তাই নয়, ন্যান্সির সঙ্গে থাকা কয়েকজন তরুণও চড়াও হন সাংবাদিকদের ওপর। বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর স্বামীর ঘটনাস্থলে আসা আর সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রমতে, দুপুরে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ন্যান্সি ছোটগারা এলাকায় তার বাসায় ৬০টি ব্রোমাজিপাম গ্রুপের টেবলেট সেবন করেন। মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ার পর স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে নিঃসঙ্গ বাসায় কারা তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তা জানা যায়নি। তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খালেদ মোশারফ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠান।
মমেক হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে উপস্থিত হন স্বামী নাজিমুজ্জামান জাহেদ। কী কারণে তার স্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাংবাদিকদের ওপর। ধারণা করা হচ্ছে, পৌরসভার সাধারণ কর্মচারী নাসিমুজ্জামান জাহেদ ও তার পরিবার আর্থিকভাবে ন্যান্সির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া তার ঢাকায় নিয়মিত আসা যাওয়া ও বাসা ভাড়া নেয়া নিয়েও দুইজনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল।
ময়মনসিংহ মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাকির হোসেন হটনিউজ২৪বিডি.কমকেকে জানিয়েছিলেন, ন্যান্সি জিওনিল ট্যাবলেট ৪০টি ও লেক্সিন টেবলেট ২০টি সেবন করেন। ওষধ দুটি ব্রোমাজিপাম গ্রুপের।
শনিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে ন্যান্সিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পাঠানো হয়। পরে রোববার সকালে তাকে ল্যাবএইডে তাকে স্থানান্তর করা হয়। ন্যান্সির ছোট ভাই জনি হটনিউজ২৪বিডি.কমকেকে জানান, সকালে ন্যান্সিকে ঢামেক থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত। বিশ্রামে আছেন।
তবে কী এমন ঘটনা ঘটেছিল যে শান্ত স্বভাব ও দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন? এ প্রশ্নের এখনও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।