সকল মেনু

স্বপ্নে বিভোর

 সাহিত্য ডেস্ক: সুমিত বণিক এক. সুপ্রিয় ফোন ধরছে না। অথচ এমন হবার কথা নয়। মোবাইলের পর্দায় বারবার ‘ওয়েটিং কল’ ভেসে উঠছে। কার সঙ্গে এতক্ষণ ধরে কথা বলছে সুপ্রিয়?

কৌতূহল দমাতে না পেরে নিজেই গিয়ে সুপ্রিয়র সঙ্গে দেখা করলাম। এবং যা জানতে পারলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। মোবাইলে সুপ্রিয়র ব্যস্ততার কারণ আর কিছু নয়, ‘পরমা’!

আমি রহস্যের সন্ধান পেয়ে সুপ্রিয়কে খুব করে ধরলাম। যাকে এই জীবনে কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখিনি তার মোবাইল এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যস্ত থাকে পরমার জন্য। এই পরমাটা কে?

প্রশ্ন করতেই সুপ্রিয় প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইল। তারপর দায়সারাভাবে শুধু বলল, ‘তেমন কিছু না, এক বছর আগে ফেসবুকে পরিচয়।’

‘সেই পরিচয় থেকে প্রণয়?’

‘ধুর!’

সুপ্রিয় এড়িয়ে যেতে চাইলেও আমি কিন্তু আঠার মতো লেগে রইলাম। বললাম, ‘তার নম্বর পেলি কোথায়?’

‘কোথায় আবার, অনেক অনুরোধের পর ফেসবুকেই পেলাম।’

‘অর্থাৎ শুধু চ্যাটিংয়ে আর কাজ হচ্ছিল না। এ জন্যই তুই নম্বরটা নিয়েছিস। অ্যাম আই রাইট?’

সুপ্রিয় হাসে। তারপর হাসতে হাসতেই বলে, ‘বুঝেছিস যখন তখন আর প্রশ্ন করছিস কেন?’

‘অস্বীকার করছিলি যে তাই।’

‘আসলে এই এক বছরে অনেক না বলা কথা জমে আছে। চ্যাটিং আর ভালো লাগে না।’

‘এটা কী এক পক্ষের অনুভূতি?’

‘সত্যি বলছি, শুধু আমার না পরমারও এখন ভালো লাগে না।’

‘শুধু আবেগ দিয়ে কি জীবন চলে? চিনিস না, জানিস না, কখনও যাকে চোখে দেখিসনি, তার জন্য এতটা অস্থিরতার কোনো মানে হয় না।’

‘আমি এখন আর কোনো মানে বুঝতেও চাই না। শুধু এটুকু জানি, ওর সঙ্গে কথা না বললে আমার ঘুম হয় না।’

‘তুই জানিস এর পরিণতি কী হতে পারে?’

‘এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। তবে এটুকু বুঝেছি, ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।’

‘পরমারও কি একই অভিমত?’

‘ও এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। কিন্তু ও যে আমাকে অনুভব করে সেটা আমি বুঝতে পারি।’

বন্ধুর পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আমার বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বিষয়টি সম্ভবত ও বুঝতে পারে। সুপ্রিয় আমার কাছে আরেকটু সরে এসে বলে, ‘কী করবো বল? আমি কী কখনো ভেবেছি ফেসবুকে পরিচয় হওয়া একটা অচেনা মানুষ এভাবে আমার জীবনে জায়গা করে নিবে!’

দুই.

এরপর অনেকদিন সুপ্রিয়র সঙ্গে দেখা হয়নি। একদিন হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল। আমি উৎসাহ নিয়ে ওকে বললাম, ‘তোর প্রেম কেমন জমলো? আপডেট জানালি না তো।’

সুপ্রিয়র মুখে চওড়া হাসি দেখেই বুঝলাম প্রেম অনেক দূর এগিয়েছে। ও বলল, ‘দোস্ত, ভালোই জমে উঠেছে, দিনে তো কথা হয়ই, এখন রাতেও কথা হয়। কথা বলতে বলতে কখন যে ভোর হয়ে যায় নিজেও বুঝতে পারি না। একদিন কথা না বললে মনে হয় অনন্তকাল।’

‘পরমারও কি একই অবস্থা?’

‘তাই তো মনে হয়।’

‘তার মানে তুই শিওর না। শোন, একটা গেম খেলে দেখতে পারিস।’

‘গেম!’

‘হুম। হঠাৎ একদিন যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখবি, কল দিবিও না, রিসিভও করবি না। পরদিন দু’জন দু’জনের অনুভূতি শেয়ার করবি। তাহলেই ওর অবস্থানটা বুঝতে পারবি।’

আমার পরামর্শ সুপ্রিয়র পছন্দ হয়। তবে দ্বিধাটা ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারে না। ও প্রশ্ন করে, ‘ফলাফল খারাপ হবে না তো?’

‘কী খারাপ হবে?’

‘ও যদি মাইন্ড করে!’

‘ও কী করে সেটাই তো দেখতে চাইছি।’

‘ঠিক আছে।’

তিন.

এরমধ্যে আমি একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সুপ্রিয়র আর খোঁজ নেয়া হয়নি। সেদিন হঠাৎ ওর সঙ্গে দেখা। আমাকে দেখে ও নিজেই এগিয়ে এলো। ওর মুখের হাসি আরও চওড়া হয়েছে। নিজেই কথা বলতে শুরু করল, ‘দোস্ত, তার সঙ্গে তো দেখা হয়েছে!’

‘সত্যি।’

‘মিথ্যা বলবো কেন?’

‘কেমন লাগলো তোর?’

‘তোর কথামতো আমি তো সারাদিন ওর ফোন রিসিভ করি নাই। বিকেলবেলা দেখি ঠিকানা খুঁজে নিজেই চলে এসেছে। এবার তুই বল, এই মেয়েকে ফিরিয়ে দেই কীভাবে?’

‘তারপর তুই কী করলি?’

‘আমার তো প্রথমে বিশ্বাসই হতে চাইছিল না। পরে কী আর করা, রিক্সা নিয়ে দু’জনে অনেকক্ষণ ঘুড়লাম।’

‘বাহ! কথা কী হলো?’

‘শুরুর দিকে তো কেউই কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।’

‘হুম। নীরবতারও একটা ভাষা আছে।’

‘কথাটা সেদিন খুব উপলব্ধি করেছি।’

‘মনের কথাটা বলে দিয়েছিস তো?’

‘ধুর! সে সুযোগ আর পেলাম কোথায়? বলে কিনা, যেতে হবে। নইলে বাসায় চিন্তা করবে।’

‘তুই যেতে দিলি কেন?’

‘আর বলিস না। দুই ঘণ্টা কীভাবে কেটে গেল টেরই পেলাম না। ফলে কী আর করা, আমিই বাসার কাছে ওকে নামিয়ে দিয়ে এলাম।’

‘কিন্তু প্রেমের ভূতটা আরো বেশি করে ঘাড়ে চেপে বসলো যে!’

‘দোস্ত, এই ভূত অনেক ভালো।’

‘তাহলে আর কী? চালিয়ে যাও।’

আমি মিটিংয়ের কথা বলে সুপ্রিয়র কাছ থেকে দ্রুত বিদায় নিলাম। কারণ একটু পরেই পরমা আসবে।

আমি পরমার মুখোমুখি হতে চাই না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top