নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল রোববার। এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া আটজনের মধ্যে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ এবং রফিউর রাব্বিসহ দুজনের মনোয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসার মিহির সারোয়ার মোর্শেদ এ ঘোষণা দেন। নিজের পক্ষে কোনো প্রস্তাবকারী না থাকায় বিএনএফের হামিদুর রহমান খান ভাসানী এবং প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির কারণে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। এর প্রতিক্রিয়ায় রফিউর রাব্বি জানান, তিনি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং আশা করছেন নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবেন। যাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন আহ্বায়ক ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য এস এম আকরাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুন সিরাজুল মজিদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের শফিকুল ইসলাম ও ইকবাল সিদ্দিকী।
জেলা রিটার্নিং অফিসার মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আটজনের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। ব্যাংক থেকে সাতজনকে ঋণমুক্ত ও রফিউর রাব্বিকে ঋণখেলাপি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখায় সানসাইন নিট ওয়্যারের মালিক হিসেবে রফিউর রাব্বির নামে ১ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার ১০৪ টাকার খেলাপি ঋণের কথা উল্লেখ করে তাকে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
প্রার্থিতা বাতিল হওয়া অপর প্রার্থী আবু হামিদুর খান ভাসানী সম্পর্কে তিনি জানান, হামিদুরের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী এই নির্বাচনী এলাকার না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে এই দুজন মনোনয়নপত্র বাতিলের ব্যাপারে আপিল করতে পারবেন। আগামী তিন দিন পর্যন্ত তাদের সময় রয়েছে।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ভুল দাবি করে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘যে গ্রাউন্ডে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। ১৯৯৬ সালে আমার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল তাতে আমার ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘যৌথ মালিকানার ওই ব্যবসায় ব্যাংক ৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পাবে। কোম্পানির দায় এককভাবে কোনো অংশীদারের ওপর আসতে পারে না। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোথাও কোনো ঋণ নেই। খেলাপির সংজ্ঞায় আমি পড়ি না।’
আগামী ৯জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনই তা চূড়ান্ত হবে জানিয়ে রাব্বি বলেন, ‘এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমি প্রমাণ করতে চাই, নারায়ণগঞ্জবাসী সন্ত্রাস চায় না। তারা একটা সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ দেখতে চায়।’
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সাংসদ এস এম আকরাম আশা করেন একক প্রার্থী হিসেবে তিনিই ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে থাকবেন। আলোচনার মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তার জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে দলের কোনো বাধা নিষেধ নেই বলে জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। সে সময় তিনি নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা দেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতি দলের নেতাকর্মীদের সমর্থন আছে। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমি অবশ্যই নির্বাচন করব। নির্বাচন থেকে আমার সরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
আগামী ৯ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর ২৬ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নারায়নগঞ্জ সদর থানার একাংশ ও বন্দর থানা নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৯ জন। সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে আসনটিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।