সকল মেনু

ঘাট দিয়ে নিয়মিত পারাপার হচ্ছে মাদকের বড় চালান

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: বিগত বছরগুলোর চাইতে ইজারা মূল্য কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসে জনসেবা বিঘিœত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। চাঁদপুরস্থ হরিণা ফেরিঘাটের ইজারা এবার প্রায় অর্ধ কোটি টাকায় নেয়া হয়েছে। শুরুর দিকে ৮০ হাজার টাকায় এটি ইজারা দেয়া হলেও মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার অর্ধকোটি টাকার ইজারা মূল্য হওয়ায় সবাই হতবাক। ৮০ হাজার থেকে ধাপে ধাপে ২ লাখ, ২ লাখ থেকে ১০ লাখ এবং সর্বশেষ ১৫ লাখ টাকায় এ ঘাটটির ইজারা হয়। আর এবার ১৫ লাখ থেকে এক লাফে অর্ধকোটি টাকায় গিয়ে উঠে ইজারা মূল্য। তবে এর ফলে সরকার অনেক রাজস্ব পাবে বলে ইজারাদার দাবি করলেও এর খেসারত ওই রূটে চলাচলকারী যানবাহনকেই দিতে হবে বলে মনে করছেন পরিবহন মালিকরা। চাঁদপুর-শরীয়তপুর জেলার সাধারণ মানুষসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২০০১ সালের ২৫ এপ্রিল মেঘনা নদীর দু’ পাড়ে এই ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন তৎকালীন আ’লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুরের এলাকায় ১৩নং হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ও শরীয়তপুর জেলার নরসিংহপুর ফেরিঘাট নামে এই ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। উদ্বোধনের পর কিছুদিন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঘাটটি পরিচালনা শুরু হয়। তখন দু’ পাড়েই গাড়ি চলাচলের সংখ্যা ছিলো খুবই কম। আস্তে আস্তে বন্দর নগরী চট্রগ্রাম থেকে খুলনা সুন্দরবন রোডে যাতায়াতের জন্য এ রূটটি চালকদের জন্য খুব সহজ হয়ে পড়ে। আর তখন থেকে দু পাড়েই গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যায়। শুরু হয় ঘাট দুটির ইজারা। স্থানীয় কয়েকজন দোকানদার ও এলাকাবাসী জানান, এ ঘাটটির ইজারা শুরু হয় ৮০ হাজার টাকায়। বাড়তে বাড়তে ২ থেকে ১০ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এটির অর্ধকোটি টাকায় ইজারা মূল্য এসে দাঁড়িয়েছে।

আগামী অর্থ বছরের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হোসেন টিটু প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে এ ঘাটটি ইজারা নেন। দেশের অনেক ফেরিঘাটের ইজারাদার এ ঘাটের আকাশচুম্বী দরপত্র দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। হরিণা ফেরিঘাটের অর্ধকোটি টাকার ইজারা প্রসঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে আরো নতুন নতুন অনেক খবর পাওয়া যায়। তারা জানান, চাঁদপুর জেলার ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন লোক এখন রীতিমতো ঢাকাসহ বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির পেছন পেছন ঘুরছেন টিটুর দরপত্রের চেয়ে আরো ১০ লাখ টাকা বেশি দিয়ে তাদের নামে ঘাটটি ইজারা আনতে।
ওই রূটে চলাচলকারী যানবাহনের কয়েকজন চালকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আমরা যে কোনো ঘাটেই সিরিয়াল অনুযায়ী পারাপার হই। অনেক সময় ক্রেতাদের মাল দ্রুত পৌঁছানোর জন্য ঘাট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে পারাপার হই। কিন্তু চাঁদপুরের হরিণা ফেরিঘাটটি অনেকটা ব্যতিক্রম। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ট্রাক, মাছ বোঝাই গাড়ি, পিকআপ ও কাঁচামালের গাড়িতে লাখ লাখ টাকার ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় জিনিস পারাপার হয়। অনেক সময় ইজারাদারদের লোকজন কোনো গাড়িকে স্পেশাল না দিতে চাইলেও ১শ’ টাকার রোড খরচ ৮ হাজার টাকার বেশি দিয়েও সিরিয়াল আগে নিয়ে ফেরি পারাপার হচ্ছে। সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা হিসেবে মাদকের গডফাদাররা মাদকের বড় চালান এ রূট দিয়ে পারাপার করছে। এ রূট দিয়ে বিভিন্ন সময় পাহাড় থেকে কাটা বিভিন্ন জাতের দামী কাঠও পাচার হয়। ঘাটের লোকজন আটক করলে মোটা অঙ্কের টাকা নজরানা দিয়ে গাড়ির চালকরা গাড়ি নিয়ে নদী পার হচ্ছেন।
হরিণা ফেরিঘাট দিয়ে নরসিংহপুর (শরীয়তপুর) ফেরিঘাটে যেতে হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভারি যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খরচ হওয়ার কথা ১হাজার ১শ’ থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা। কিন্তু সেখানে গাড়ি চালকদের ইজারাদার, বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পারাপারের জন্য দিতে হয় সাধারণভাবে আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকার মতো। প্রতিদিন স্পেশাল গাড়ি পারাপার হিসেবে ইজারাদারদের লোকজন নিচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এতে করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। বর্তমানে ফেরিঘাটের ইজারাদার রয়েছেন জনৈক আক্তার হোসেন। তিনি যে দামে দরপত্র নিয়ে ফেরিঘাট পরিচালনা করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ টাকা বাড়িয়ে জুলাই মাস থেকে অর্ধ কোটি টাকার ঘাট পরিচালনা করবেন টিটু। হরিণা এলাকার খেটে খাওয়া ও সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন, যে ঘাটটি আমাদের জানামতে ছিলো ৮০ হাজার টাকা আর সেই ঘাটটিতে কী আছে যেটার নতুন অর্থ বছরের জন্য ইজারা দাঁড়িয়েছে অর্ধকোটি টাকায়। এ ঘাটটিতে যে কোম্পানীরই গাড়ি পারাপার হবে তাদেরকে এখন অধিক টোল দিয়ে পারাপার হতে হবে। একদিকে অধিক টাকায় ইজারা নেয়ায় সরকারের রাজস্ব বেড়েছে। তেমনি ইজারাদারদের অত্যাচারে এ ঘাট দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা কমে যাবে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top