সকল মেনু

অনুসন্ধানী সংবাদ;প্রতারনার ফাঁদে অগ্রনী ব্যাংক !

 হুমায়ুন কবীর, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) ও ঠাকুরগাঁও অফিস, ১২মে : সোনালী ব্যাংকের হল মার্ক ক্যালেংকারীর আদলে এবার ঋন ক্যালেংকারীর অভিযোগ উঠেছে অগ্রনি ব্যাংকের ঢাকা প্রধান শাখার বিরুদ্ধে। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় শামসুজ্জোহা, জোহরা বেগম ও নাজমুল ইসলাম রনি নামের ৩ ব্যক্তি অন্যের মালিকানাধীন মোট প্রায় ৪ একর জমি বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা ঋন মঞ্জুর করিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় এলাকায় আলোচনার ঝড় উঠেছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সদরের বাসিন্দা আঃ রশিদ মাষ্টার, জুলফিকার আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার সহ আরো কয়েকজন জানান, উপজেলা সদরের বাসিন্দা জাকের পার্টির সভাপতি মোঃ শামসুজ্জোহা সম্প্রতি অগ্রনী ব্যাংক মতিঝিল প্রধান কার্যালয় ১৫ কোটি টাকার একটি ঋন মঞ্জুর করেছেন। ওই ঋনের বিপরীতে শামসুজ্জোহা প্রায় ৪ একর জমি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে অগ্রনী ব্যাংক প্রধান শাখা বরাবরে বন্ধকনামা রেজিষ্ট্রি করেন। ওই ৪ একর জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১শ৫০ কোটি টাকা।
উল্লেখিত ব্যক্তিরা গত কয়েকদিন আগে লাহিড়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ওই বন্ধকীনামার নকল কপি তুলে দেখতে পান বন্ধক দেয়া ওই ৪ একর জমির মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার, জুলফিকার আলী, আঃ রশিদ মাষ্টার সহ আরো কয়েকজনের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দাগ, খতিয়ান এবং জমির পরিমান উল্লেখ করা হয়েছে। তারা আরো জানান, ওই ৪ একরের মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ জমির মালিক ঋন গ্রহীতাদের একজন মোঃ শামসুজ্জোহা। ঋন গ্রহীতাদের দু-জনের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও গ্রামে হলেও অপর ঋন গ্রহীতা মোঃ নাজমুল ইসলাম রনি নামে দুওসুও গ্রামে কোন ব্যক্তি নাই। তবে নাজমুল ইসলাম রনি, পিতা-মোঃ রেজাউল ইসলাম নামে যে ব্যক্তি দুওসুও গ্রামে রয়েছে সে একজন কলেজ পড়–য়া ছাত্র। নাজমুল বা তার পিতা রেজাউল ইসলাম এ ঋন সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
কিভাবে ভুয়া দলিলের সাহায্যে একটি বন্ধকীনামা রেজিষ্ট্রি হলো তা জানতে লাহিড়ী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গেলে সাব-রেজিষ্ট্রার আমজাদ হোসেন জানান, দলিলের বিপরীতে খারিজ ও খাজনা সহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকায় আমরা বন্ধকীনামা রেজিষ্ট্রি করেছি। এখানে যদি কোন কাগজপত্রের ঘাটতি থেকে থাকে এর দায় ভূমি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির।
এ ব্যাপারে জানতে লাহিড়ী ভূমি অফিস এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) সগির হোসেন জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকার তহশিলদারগন জমির বিধিমত খারিজের কাগজ তৈরী করে আনেন। আমি তা অনুমোদন দেই মাত্র। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট তহশিলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভুয়া বন্ধকীনামা বানিয়ে ১৫ কোটি টাকা ঋন মঞ্জুর করা হয়েছে, শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
ভুয়া বন্ধকীনামার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান, তালিবুর রহমান ও মোঃ মোস্তফা মাষ্টার জানান, বন্ধকীনামায় উল্লেখিত ১ একর ৭৮ শতক জমির স্থানীয় মূল্য প্রতি শতক ৫ হাজার টাকা। এ কৃষি জমিকে অকৃষি জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাকী ২ একর ১৩ শতাংশ জমির মধ্যে ঋন গ্রহীতা শামসুজ্জোহা মাত্র ৪৪ শতক জমির প্রকৃত মালিক। যার দাগ নং-৭৭৭৮। ওই ৪৪ শতাংশ জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৪ লাখ টাকা বলে তারা জানান। ওই বন্ধকীনামায় উল্লেখ করা ৭৭৭৯, ৭৭৯১, ৭৭২৯, ৬২৬৪, ৬২৬৫, ৬২৬৩, ৬৪১৬ নং দাগে শামসুজ্জোহার কোন জমি নাই বলে দাবি করেন তারা। তারা মন্তব্য করে বলেন, স্থানীয় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস এবং অগ্রনী ব্যাংক প্রধান শাখার কিছু কর্মকর্তা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এ ঋন মঞ্জুর করেছেন।
ঋন আবেদনে কোন কারচুপির আশ্রয় নেয়া হয় নাই, এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জাকের পার্টির সভাপতি মোঃ শামসুজ্জোহা বলেন, অটো রাইস মিল তৈরী করার জন্য মোট সাড়ে ১২ কোটি টাকার ঋন মঞ্জুর করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের কাছে তার কিছু জমি এবং তার অপর পার্টনার নাজমুল ইসলাম রনির ধানমন্ডি এলাকা ঢাকার বাড়ির ৩ টি ফ্লাট বন্ধক দিয়ে এ ঋন মঞ্জুর করানো হয়। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও গ্রামে নাজমুল ইসলাম রনি’র পিতা- রেজাউল ইসলাম নামে যে কিশোরের নাম ব্যবহার করা হয়েছে ইনিই কি সেই ব্যক্তি ?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে নাজমুলের বাড়ি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায়। ঋন মঞ্জুরের স্বার্থে তার বাড়ি এখানে দেখানো হয়েছে। বন্ধকীনামায় নাজমুল ইসলামের কোন বাড়ির কথা উল্লেখ নেই-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ৩ বছর থেকে চেষ্টা করছি এলাকায় একটি অটো রাইস মিল করার জন্য। প্রথম দফায় দেড় কোটি টাকা অবকাঠামো, ২য় দফায় যন্ত্রাংশ এবং তৃতীয় দফায় পূজি বাবদ সাড়ে ১২ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। স্থানীয় লোকদের অসহযোগিতার কারনে তিনি হতাশ বলে কারচুপির বিষয়টি বার বার এড়িয়ে যান। তিনি ইতোমধ্যে মঞ্জুরিকৃত ঋনের কোন টাকা ব্যাংক থেকে তুলেছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কোন টাকা তোলা হয়নি। এদিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত ২ মাসে শামসুজ্জোহা এবং তার স্ত্রী জোহরা বেগম প্রায় ১ কোটি টাকা সোনালী ব্যাংক বালিয়াডাঙ্গী শাখার মাধ্যমে অগ্রনী ব্যাংক মতিঝিল প্রধান শাখা থেকে উত্তোলন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে ঠাকুরগাঁও জেলা অগ্রনী ব্যাংক প্রধান শাখায় যোগাযোগ করা হলে অগ্রনী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আঃ মোত্তালিব জানান, অগ্রনী ব্যাংক প্রধান শাখার এ ঋনের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও অগ্রনী ব্যাংক কিছুই জানেনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top