সকল মেনু

চাঁদপুরে এলজিইডি’র তৈরি প্রাথমিক বিদ্যালয় সতর বছরের মধ্যে পরিত্যাক্ত ঘোষণা

শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: নিজেদের তত্ত্বাবধানে তৈরি দ্বিতল বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। উপজেলার বলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেলচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া একই উপজেলার অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা না হলেও এর অবস্থা জরাজীর্ণ। বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও স্থান সংকুলান না হবার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে। জেলায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন স্বীকার করেছেন।
১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দ্বিতল ভবনের কাজের তদারকি, কাপাইকাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেলচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের কাজের বাস্তবায়ন ও নির্মাণ করে উপজেলা এলজিইডি। আর অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের কাজের বাস্তবায়ন করে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট। এর মধ্যে কাপাইকাপ সপ্রাবির পরিত্যক্ত ভবনটি ভেঙ্গে গত বছরে একই স্থানে আধুনিক আরেকটি ভবন করে এলজিইডি।
জানা যায়, জেলায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন আছে যেগুলোতে বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে কিংবা প্রতিনিয়ত পলেস্তরা খসে পড়ছে। আর এ জাতীয় বিদ্যালয়গুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা না করার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা অন্যরা জানতে পারছেন না তাদের বিদ্যালয়টি কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পলেস্তরা খসে পড়া বা পানি চুইয়ে ভবনগুলো পরীক্ষা করলে এ জাতীয় বহু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ পাওয়া যাবে বলে বেশ ক’জন শিক্ষক জানান।
সরজমিনে দেখা যায়, বলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণের অর্থায়নে ছিলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মাত্র ১৩ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এ ভবনের প্রতিটি পিলার ভেঙ্গে গেছে। পলেস্তরা খসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। নিচ তলার পূর্ব পাশের একটি বড় রুমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর। বাকি একটি রুমে নামাজের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ভবনের বাথরুমটি ব্যবহার করছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ২য় তলায় যাওয়ার পথ বন্ধ রাখা হয়েছে।
একই উপজেলার বেলচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরজমিনে গেলে দেখা যায়, পুরাতন মূল ভবনটি গত বছরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ভবনটি তৈরি করা হয় ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থ বছরে। বাস্তবায়নে উপজেলা এলজিইডি। প্রকল্প ব্যয় ছিলো ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পিলারের পলেস্তরা খসে পড়ে রডগুলো ঝং ধরে তাও খসে পড়ছে। রুমের ভেতরে ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তরা খসে পড়ছে। প্রতিটি ক্লাস রুমে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে কয়েক লাখ টাকার টেবিল।
একই অর্থ বছরে তৈরি হয় একই উপজেলার অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভবন। এ ভবনটি তৈরি করে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট। ভবনটি দোতলা ফাউন্ডেশন থাকার পরও ভবনের উপর কোনো ভবন করা যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এছাড়া এ ভবনে একটি পেরেক ঠুকতে গেলে তা অনায়াসে ঢুকে যায় বলে প্রধান শিক্ষক মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান।
বলাখাল সপ্রাবি ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় তা পরীক্ষার জন্য গত বছরের ২৮ এপ্রিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে আবেদন দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া আক্তার। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আশ্রাফ জামিল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। যার স্মারক নং এলজিইডি/উপ্র/হাজী/২০১৩/৩১২। তারিখ ১৩/০৫/১৩। এই চিঠিতে ওই কর্মকর্তা উক্ত বিদ্যালয়ের ছাদের ভীম ও দেয়ালে ফাটল লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে বিধায় দ্বিতল ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যায়িত করে পাঠ দান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। এর পরে দুর্ঘটনা ঘটলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে বলে ওই পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।
বেলচোঁ সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক নাজমুল হুদা পাটোয়ারী বলেন, মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হওয়ার পরে সাড়ে তিনশ’ শিক্ষার্থীকে নতুন ভবনের মাত্র দুটি রুমে বসে ক্লাস করাতে হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস হচ্ছে অফিস রুমে আর শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পড়ছে বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে। আমরা শ্রেণী কক্ষ সঙ্কটে আছি। বর্তমানে ৫টি ক্লাস দুটি রুমে ভাগ করে করতে হয়।
বলাখাল এলাকাবাসী ও এই বিদ্যালয়ের সাবেক সদস্য মোস্তফা মিয়া জানান, আমাদের দেশে একটি দোচালা টিনের ঘর ৩০-৪০ বছর অনায়াসে বাসযোগ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অথচ লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি একটি দোতলা ভবন তাও আবার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন কি করে নির্মাণের ১৭ বছর পরে নষ্ট হয়ে গেলো। এই জবাব আমরা কার কাছে চাইবো। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের এলাকার অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে ঠিক মতো বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না।
বলাখাল সপ্রাবির প্রধান শিক্ষিকা বারেয়া আক্তার জানান, শিক্ষার্থী হারে আমাদের শ্রেণীকক্ষ সঙ্কট চরমে। তাই বাধ্য হয়ে আমাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করাতে হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকতার হোসেন বলেন, এ জেলায় শতাধিক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ আছে। নতুন করে তালিকা করা হচ্ছে। তবে এর পরিমাণ বাড়তে পারে। মাত্র ১৬-১৭ বছরে একটি ভবন পরিত্যক্ত হলো কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ভবনের স্থায়ীত্ব ১৬/১৭ বছর হতে পারে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নূর-ই-আখতার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প, নদী ভাঙ্গন ছাড়া এমনতো হবার কথা নয়।
১৬/১৭ বছরে ভবন কি করে পরিত্যক্ত হয় এ বিষয়ে এলজিইডি চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৈাশলী মহসিন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, এমনটি হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে তারপরে মন্তব্য করবো

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top