সকল মেনু

সরকার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে: নজরুল

ঢাকা, ৮ এপ্রিল (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সরকার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক একাউন্ট জব্দ রাখার অন্যায় সরকারী কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন নিয়ে সরকার ও সরকারী দলের প্রতিক্রিয়া থেকে প্রমাণিত হয় – এই সরকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

তিনি বলেন, সবকিছু স্বচ্ছ ও আইনানুগভাবে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা অহেতুক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে নিজেরাই নিন্দার পাত্র হয়েছেন। এটা তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই বহি:প্রকাশ।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার ষড়যন্ত্রের দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগছে মন্তব্য করে  নজরুল ইসলাম বলেন, তারা সবকিছুতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজে পায়। সংসদ ও সংসদের বাইরে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ভাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে যে সব কথা বার্তা বলছে তা অশোভন ও নিন্দনীয়।

নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারী দলের আন্দোলনের ফসল ২০০৭ সালের অবৈধ ও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর তার সবগুলো ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে তার ব্যাংক একাউন্টও জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার ব্যাংক একাউন্ট সেই সরকার খুলে দিলেও এন বি আর এর কোন মামলা না থাক সত্ত্বেও দেশনেত্রীর জব্দ করা কোন ব্যাংক একাউন্ট অদ্যাবধি খুলে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এটা যে কোন নাগরিকের প্রাপ্য সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। গত ৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার এই অন্যায় আচরণের জন্য দু:খ প্রকাশ করে অবিলম্বে একাউন্ট জব্দ করার অন্যায় আদেশ প্রত্যাহার না করার পরিবর্তে এ সম্পর্কে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, অন্যায় এবং নিন্দনীয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সবগুলো ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন সরকারী আদেশে দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকা এবং তার ফলে অনিবার্য ভাবেই সৃষ্ট সমস্যাদি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আমরা বিস্ময় ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দীর্ঘদিন ধরে দেশের একজন বিশিষ্ট নাগরিককে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করার পরিবতের্, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও তার নেতা-নেত্রীরা মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠক এবং জাতীয় সংসদে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ষড়যন্ত্র খোঁজার পাশাপাশি অত্যন্ত অশালীন ও কুরুচিপুর্ণ মন্তব্য করেছেন।

এ ধরনের সমালোচনায় নিন্দনীয় উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, সংসদীয় রীতি ও শিষ্টাচার অগ্রাহ্য করে ব্যক্তিগতভাবে জবাব দেয়ার সুযোগ নেই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা নিয়ে সংসদের সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সরকারী দলের নেতারা যেসব মিথ্যা, অপ্রাসঙ্গিক, কুরুচিপুর্ণ ও নোংরা মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানানোর কোন শোভন ভাষা আমাদের জানা নেই। গতকাল সংসদে দেয়া বক্তৃতার জন্য ঐসব ব্যক্তিগণ জনগণের ঘৃণা ও সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই অর্জন করেন নি।

সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, যে সংসদে প্রকৃতপক্ষে কোন বিরোধী দল নেই-সেই সংসদে দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিষয় কিম্বা দেশবিরোধী গোপন সব চুক্তি ও সমঝোতার বিষয় আলোচিত হয় না। প্রতিনিয়ত সেখানে শুধু মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে নিয়ে অশোভন ভাষায় খিসিত্ম খেউর করা হয়।

‘বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে’ আওয়ামীলীগের এমন সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নাকি নিঃশেষ হয়ে গেছে। তাই যদি সত্য হয়-তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাই প্রতিদিন সংসদের ভিতরে-বাইরে বিএনপি এবং তার নেতাদের সম্পর্কে কথা বলে সময় নষ্ট করছেন কেন ? আসলে জনগণ এবং বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণের আস্থাভাজন দল বিএনপিকে তারা ভয় পায় এবং সেই ভীতি থেকেই প্রতিনিয়ত তারা প্রলাপ বকে, আর জনগণের ঘৃণা কুড়ায়।

তিনি বলেন, অনুগত প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায় সহযোগিতায় জোর করে নিজেদের নির্বাচিত দেখিয়ে তারা আজ যে ক্ষমতার দম্ভ করছে – তা ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করার জন্য সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় সাড়ে তিন দশকের বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে। তারপর থেকে দেশনেত্রীকে বাধ্য হয়েই ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। বাড়ী ভাড়া পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের যে অনুরোধ এন বি আর-এ করা হয়েছিল তা আজও অনুমোদিত না হওয়া বরং ষড়যন্ত্রমূলক। দেশনেত্রীর প্রতি অব্যাহত অন্যায় আচরণের এটা আরেকটি প্রমাণ। আমরা অবিলম্বে অন্যায় ও বেআইনীভাবে জব্দ রাখা দেশনেত্রীর সব ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ব্যাংক একাউন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে যে ৮টি ব্যাংক একাউন্টের কথা বলা হয়েছে তার ৬টি তে তেমন কোন অর্থ জমা নেই এবং বহু বছর ধরে কোন লেনদেনও হয়না। এর মধ্যে শহীদ জিয়ার আমলের একাউন্ট ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রচলিত নির্বাচনী আইন অনুযায়ী এসব একাউন্ট খোলা হয়েছিল। মাত্র দুইটি ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন হয় এবং সেখানে বাড়ী ভাড়া সহ অন্যান্য খাতে অর্জিত টাকা নিয়ামানুযায়ী জমা হয়।

সরকার অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে যখন আইন শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতিতে জনগণ জীবন-জীবিকা নিয়ে হতাশ, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, অসহনীয় যানযট আর দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরেও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন, উন্নয়ন ও জনজীবন বিপর্যস্ত, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকারী ব্যর্থতায় জনগণ উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, অস্বাভাবিক উচ্চ কন্ঠ কিংবা খিস্তি খেউর দিয়ে অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবেনা। সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহণে সব নাগরিকের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনই সরকারকে কলঙ্কমুক্ত করতে পারবে। সরকারের উচিৎ দ্রুত সেই পথে অগ্রসর হওয়া। এটাই জনগণের প্রত্যাশা এবং সময়ের দাবি। জনগণের ন্যায্য প্রত্যাশা ও সময়ের দাবী অগ্রাহ্য করার শক্তি কারো নেই – থাকেনা কখনও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top