সকল মেনু

ইসলামের পারিবারিক ও সামাজিক বিধান : প্রবন্ধ নং-০২ : পিতা মাতা : দায়িত্ব ও কর্তব্য : কোরান মাজিদের নির্দেশনা

ধর্ম প্রতিবেদক, ২২মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) :

পিতা মাতা : দায়িত্ব ও কর্তব্য

কোরান মাজিদের নির্দেশনা
কোরান মাজিদ আমাদেরকে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সুবিস্তার ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। কোরান মাজিদ যদিও সকলের সাথে সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা প্রদান করে, তা পিতামাতার সাথে আমাদের সম্পর্ক বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি খুব স্বতন্ত্র পরিভাষা ব্যবহার করে। তা আমাদেরকে পিতামাতার সাথে ইহসানপূণ আচরণ করার নির্দেশ প্রদান করে। ইমাম রাগিব, যাকে আরবি ভাষার একজন সুপন্ডিত মনে করা হয়, এই শব্দটিকে নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করেন-

ইহসান হল সম্পর্কের এমন একটি পর্যায় যেখানে কোন ব্যক্তি তার ন্যায্য অধিকার থেকে কম নিয়ে এবং আরোপিত দায়িত্ব থেকেও অধিক প্রদান করে তুষ্ট হয়। এই ব্যাখ্যা থেকে পরিষ্কার হয় যে, কোরান মাজিদ আমাদেরকে পিতামাতার সাথে কেবল যোগ্য ও ন্যায্য আচরণই করতে বলে না, বরং তা আমাদেরকে নির্দেশ দেয়, পিতামাতা আমাদের সাথে যেমনটিই আচরণ করুক না কেন তাতে সন্তুষ্ট থাকতে। যুগপৎভাবে, তা আমাদেরকে তাদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ ভালবাসা, সম্মান ও আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে তাদেরকে সন্তুষ্ট করার সাধ্যমত চেষ্টা করতেও আদেশ প্রদান করে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু কুরআনের আয়াত তুলে ধরা হল:

১. আর স্মরণ কর, যখন আমি বনি ইসরাইলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয় স্বজন, ইয়াতিম ও মিসকিনদের সাথে। (আল-বাকারা, ২:৮৩)

২. তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরিক কর না। আর সদ্ব্যবহার কর পিতামাতার সাথে….। (আন-নিসা, ৪:৩৬)

৩. বল, এসো, তোমাদের উপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোন কিছুকে শরিক করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি ইহসান করবে …। (আল-আনআম, ৬:১৫১)

৪. আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচারণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপণীত হয়, তবে তাদেরকে উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। (বনি ইসরাইল, ১৭:২৩)

উল্লেখ্য যে, এসব আয়াতে কোরান মাজিদ আমাদেরকে প্রথমে আল্লাহর ইবাদত করতে বলে এবং অব্যবহিত পরেই আমাদেরকে পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের আদেশ প্রদান করে। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইসলাম ধর্মে পিতামাতার মর্যাদার আপেক্ষিক গুরুত্ব তুলে ধরে। নিম্নলিখিত আয়াতও আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহ তাআলার হকের পরেই পিতামাতার হক।

আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর।… (লোকমান, ৩১:১৪)

বস্ত্তত, এটি আমাদের দীনের সৌন্দর্য ও অনুগ্রহ যে, তা মুসলিম সমাজে পিতামাতাকে এমন একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান দান করেছে। আমাদেরকে একথা স্মরণ রাখতে ও উপলব্ধি করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলাই পিতামাতাকে এমন মর্যাদা প্রদান করেছেন। অতএব, আমাদের কর্তব্য হল আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করা এবং পিতামাতার প্রতি ইহসানের আচরণ করা। যদি আমরা তা করতে ব্যর্থ হই তবে অল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করার কারণে আমরা কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হব। নিম্নে কোরান মাজিদের আরও কিছু সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা তুলে ধরা হল:

পিতামাতার মঙ্গল কামনা
আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচারণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপণীত হয়, তবে তাদেরকে উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। ( বনি ইসরাইল, ১৭: ২৩-২৪ )

অন্যান্য আয়াতের মত এখানেও কোরান মাজিদ আমাদেরকে প্রথমত, পিতামাতার সাথে ইহসানপূণ আচরণ করার ব্যাপারে সাধারণ নির্দেশনা প্রদান করে। অত:পর তা আমাদেরকে কিছু বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করে। তা বলে, যখন আমাদের পিতামাতা বার্ধক্যে উপণীত হয় তখন তাদের প্রতি আমাদের এতই সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে হবে যে, তাদের প্রতি এমনকি উফ’ শব্দ পর্যন্ত বলা যাবে না। উল্লেখ্য যে, পিতামাতা তাদের বৃদ্ধ বয়সে অর্থনৈতিক ও শারিরীক প্রয়োজনে স্বভাবতই তাদের সন্তান সন্ততির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অধিকন্তু, বৃদ্ধ বয়সে মানুষ সাধারণত অধিক আবেগপ্রবণ ও মুখাপেক্ষী থাকে। কোরান মাজিদ আমাদেরকে বলে যে, যখন আমাদের পিতামাতা বয়সের এই পর্যায়ে উপণীত হবেন তখন তাদের প্রতি আমাদের এতই সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে হবে যে, তাদের সামনে বিরক্তিসূচক একটি সাধারণ শব্দও উচ্চারণ করা যাবে না। হাসান ইবনে আলি (রা.) বলেন, এটি পিতামাতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের সর্বনিম্ন পর্যায়। এর নিচেও যদি কোন স্তর থাকত, তবে আল্লাহ তাআলা তা-ই উল্লেখ করতেন। দ্বিতীয়ত, পাশাপাশি কোরান মাজিদ আমাদেরকে নির্দেশ দেয়, তাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদার সাথে কথা বলতে। তৃতীয়ত, তা আমাদেরকে তাদের সাথে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও বিনয়ের সাথে আচরণ করতে বলে। পরিশেষে, আমাদের দোয়ার মধ্যে তাদেরকে স্মরণ করতে হবে।

অমুসলিম পিতামাতার প্রতিও ইহসানপূর্ণ আচরণ
আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার সাথে সদাচারণ করতে, তবে যদি তারা প্রচেষ্টা চালায় আমার সাথে এমন কিছুকে শরিক করাতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না। আমার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন… ( আল-আনকাবুত, ২৯:৮)

আর যদি তারা আমার সাথে শিরক করাতে জোর প্রচেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।…(লোকমান, ৩১:১৫)

যে ব্যক্তি আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে সে কখনো অন্যকে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করতে আদেশ করতে পারে না। এই আয়াতে কোরান মাজিদ এমন পিতামাতার কথাই বলে এবং আমাদেরকে আদেশ দেয় যে, যদি পিতামাতা আমাদেরকে আল্লাহর সাথে শরিক করতে চাপ প্রয়োগ করে তবে তা মানা যাবে না। তবে তখনো তাদের সাথে ইহসানের সাথে আচরণ করতে হবে। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, পিতামাতা যদি ছেলেমেয়েকে কোন পাপ কাজ করার আদেশ প্রদান করে তবে তা পালন করা যাবে না, তবে তাদের প্রতি ভালবাসা অব্যাহত রাখতে হবে এবং দয়া ও সহানুভূতির সাথে আচরণ করতে হবে।

পিতামাতার জন্যে ব্যয় করা
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়, ইয়াতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য।.. (আল-বাকারা, ২:২১৫)

এই আয়াতটি পিতামাতার মর্যাদার কথা আমাদেরকে পূণর্বার স্মরণ করিয়ে দেয়। তা বলে, আমরা যা কিছুই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যে খরচ করি না কেন, পরিবার কিংবা সমাজের অন্যান্য লোকের পূর্বে প্রথমে পিতামাতার জন্যেই আমাদেরকে খরচ করতে হবে। অতএব, যদি কেউ তার পরিবারের সদস্যদের উপর ব্যয় করে কিংবা সমাজের কোন মহৎ কাজে ব্যয় করে, কিন্তু পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে বেখবর থাকে, সে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ লঙ্ঘন করে। আমাদের প্রথম কর্তব্য হল, পিতামাতার প্রয়োজনের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং তাদের সাথে ইহসানের আচরণ করা, এমনকি অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রেও।

পিতামাতার জন্যে অর্থ রেখে যাওয়া 
তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে পিতা মাতা ও নিকট আত্মীয়দের জন্য ন্যায় ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব। (আল-বাকারা, ২:১৮০)

ইসলামই একমাত্র দিন যা এমন এক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যাতে কেবল অধঃস্তনরাই উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয় না; বরং উর্ধ্বতন পরম্পরাইও উত্তরাধিকার বন্টিত হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্য সকল সমাজ ব্যবস্থায় কেবল অধ্বঃস্তনদের জন্যেই উত্তরাধিকারের আইন প্রচলিত আছে। এই আয়াত আমাদেরকে বলে যে, আমাদের প্রথম কর্তব্য আমাদের পিতামাতার প্রতি। এবং এমনকি উইল করে যাওয়ার সময়ও।

পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা
আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর।… (লোকমান, ৩১:১৪)

আল্লাহ তাআলার নিয়ামতরাজিকে যেমন কেউ গণনা করে শেষ করতে পারে না, তেমনিভাবে পিতামাতার অনুগ্রহকেও কেউ হিসেব করে শেষ করতে পারবে না। কোরান মাজিদ তাই আমাদেরকে বলে, প্রথমত, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং অত:পর পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হতে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অর্থ এই নয় যে, কেবল ধন্যবাদ (Thank you) বলবে। বরং, তার অর্থ আমাদের এমন এক জীবনাচরণ পদ্ধতি ও মনোভঙ্গি যা আল্লাহ তাআলার প্রতি ও অতঃপর আমাদের পিতামাতার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধকে প্রতিফলিত করে।

পিতামাতার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
অতঃপর সুলাইমান তার কথায় মুচকি এবং বলল, হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। (আন-নামাল, ২৭:১৯)

আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রদি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভ ধারণ ও দুধ পান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছরে উপণীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ দাও, তুমি আমার উপর ও আমার পিতামাতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শুকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। এরাই যাদের উৎকৃষ্ট আমলগুলো আমি কবুল করি এবং তাদের মন্দ কাজগুলো আমি ক্ষমা করে দেই। … (আল-আহক্বাফ, ৪৬: ১৫- ১৬)

এই আয়াতগুলি সেসব ঈমানদারের মনোভাবকে ব্যক্ত করে যাদের মন্দকর্মসমূহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদের একটি গুণ হল যে, তারা তাদের উপর আল্লাহ তাআলার নিয়ামতসমূহের জন্যে শুকরিয়া আদায় করে এবং যুগপৎভাবে, তারা তাদের পিতামাতার উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহসমূহের জন্যেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

পিতামাতার জন্যে প্রার্থনা
আর তাদের উভয়ের উপর দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমাদের রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমার প্রতি লালন পালন করেছেন’। (বনি ইসরাইল, ১৭:২৪)

আমরা আমাদের পিতামাতার প্রতি যতই দয়ালু ও কৃতজ্ঞ হই না কেন, আমরা তাদের প্রয়োজন ও অধিকার অনুসারে সবকিছু প্রদান করতে সমর্থ নই। এজন্যে কোরান মাজিদ আমাদেরকে বলে, পিতামাতার জন্যে আমাদের দোয়াও করতে হবে। যাতে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দয়া করেন এবং সেসব বিষয় তাদের জন্য সরবরাহ করেন যা তাদেরকে আমরা দিতে অক্ষম।

মায়ের বিশেষ মর্যাদা
আমি মানুষকে তার পিতামাতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুবছরে; সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। … (লোকমান, ৩১:১৪)

আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রশি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভ ধারণ ও দুধ পান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস। অবশেষে যখন সে তার শক্তির পূর্ণতায় পৌঁছে এবং চলিলশ বছরে উপণীত হয়, তখন সে বলে, হে আমার রব, আমাকে সামর্থ দাও, তুমি আমার উপর ও আমার পিতামাতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শুকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। (আল-আহক্বাফ, ৪৬: ১৫)

এই আয়াতগুলো মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার নির্দেশ প্রদান করে।

মায়ের জন্যে নূহ (আ.)-এর দোয়া
হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতামাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে এবং মুমিন নারী পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না। (নূহ,৭১:২৮)

পিতামাতার জন্যে ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া
হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। (ইবরাহিম ১৪:৪১)

ইয়াহইয়া (আ.) ও তাঁর পিতামাতা
হে ইয়াহইয়া! তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর। আমি তাকে শৈশবেই প্রজ্ঞা দান করেছি। আর আমার পক্ষ থেকে তাকে স্নেহ মমতা ও পবিত্রতা দান করেছি এবং সে মুত্তাকী ছিল। আর সে ছিল তার পিতামাতার সাথে সদাচারী, আর ছিল না অহংকারী, অবাধ্য। (মারাইয়াম, ১৯:১২-১৪)

ঈসা (আ.) ও তাঁর মা
শিশুটি বলল, আমি তো আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবি বানিয়েছেন। আর যেখানেই থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। আর আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহংকারী, অবাধ্য করেন নি। (মারাইয়াম, ১৯:৩০-৩২)

মুসলমান হিসেবে আমরা আল্লাহ তাআলার সকল নবি-রাসূলের উপর বিশ্বাস রাখি। কোরান মাজিদ আমাদেরকে বলে যে, অন্যান্য নবিগণও তাদের পিতা মাতার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তাদেরকে দোয়ার মধ্যে স্মরন করতেন। বলা বাহুল্য, পিতামাতার যথাযথ অধিকার প্রদান ও তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নবিদের আমলের অনুসরণ করাও আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য।

মূল : ড. মাজহার ইউ কাজি
বাংলা অনুবাদ : মাওলানা ফয়জুল্লাহ মুজহিরি
সম্পাদনা : ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top