সকল মেনু

অবশেষে রক্ষা পেল ঐতিহ্যবাহী হিঙ্গাবিবি মসজিদ (মাওলানা জামে মসজিদ)

ধর্ম প্রতিবেদক, ২০মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : অবশেষে রক্ষা পেল সাড়ে তিনশ বছর আগে নির্মিত মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী হিঙ্গাবিবি মসজিদটি। রাজধানীর পুরনো ঢাকার আরমানিটোলায় মোগল আমলের স্মৃতিচিহ্ন মাওলানা জামে মসজিদটি আংশিক ভেঙ্গে ফেলা হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপের মুখে তা পুনরায় নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে অধিদপ্তরের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ পরিদর্শন শেষে এই আশ্বাস দিয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, পূর্বের নকশা ও শৈল্পিকতা ঠিক রেখেই স্থানীয় এই মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করা হবে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি না ভাঙ্গার জন্য মসজিদ কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। স্থানীয় থানা পুলিশও মসজিদটি না ভাঙ্গতে কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছে। ফলে আপাতত ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ভাঙ্গার কাজ বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই মাস আগে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে রাজউক বা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।মসজিদের মোতয়াল্লি ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম ইসলাম মসজিদটি ভাঙ্গার কারণ হিসাবে বলেন, মসজিদটি শত বছরের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া মসজিদের ইট, সুরকি খসে ইতিপূর্বে একাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে পুরনো ও জরাজীর্ণ মসজিদটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করেছে কমিটি। তিনি বলেন, মসজিদটির শতকরা ৮০ ভাগ ভাঙ্গার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি চিঠি পেয়ে পুরনো মসজিদ ভাঙ্গার কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

মসজিদের ইতিহাস: হিঙ্গাবিবি মসজিদটি অতি প্রাচীন ও মোগল আমলের নিদর্শন। স্থানীয়রা জানান, আরমানিটোলার কে পি ঘোষ স্ট্রিট রোডের বাসিন্দা হিঙ্গাবিবি ১৬৬৪ সালে প্রায় সাড়ে ৮ কাঠা জমির উপর এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এর পর থেকে এই মসজিদটি হিঙ্গাবিবি জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল মসজিদের নাম পাল্টে নতুন নাম দিয়েছে মাওলানা জামে মসজিদ। দীর্ঘ দিনে মসজিদটির চারপাশে একাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হওয়ায় মসজিদের মূল অংশটি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। এই সুযোগে গত দুই বছর যাবত্ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল মসজিদটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। অবশ্য ইতিমধ্যেই মসজিদটির শতকরা ৮০ ভাগ ভাঙ্গা হয়েছে বলে দাবি করেন খোদ মসজিদ কমিটির কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরমানিটোলা কে পি ঘোষ স্ট্রিটে অবস্থিত মাওলানা জামে মসজিদটি মোগল আমলের একটি স্মৃতি। যা আনুমানিক ১৬৬৪ সালের দিকে নির্মিত। এটি হেরিটেজেরও অংশ।

এলাকাবাসীর দাবি: স্থানীয়দের দাবি মসজিদটির পূর্ব-উত্তরের বর্ধিত আধুনিক চারতলা অংশটি বর্তমানে ধর্মীয় কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তারা শুধু মসজিদটির আদি অংশটুকুর কাঠামো, স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কার-সংরক্ষণের দাবি জানান। এতে করে মসজিদটি একদিকে যেমন আদি রূপ ফিরে পাবে, অন্যদিকে সাড়ে তিনশ বছরের ইতিহাস রক্ষা পাবে । প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, হিঙ্গাবিবি মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি না হলেও এর প্রাচীনত্ব এবং স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য মসজিদটি সংরক্ষণের দাবি রাখে। তাই মসজিদটির আদি অংশ রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মসজিদের আদি নকশা ও শৈল্পিকতা ঠিক রেখে পুনরায় তা নির্মাণ করা হবে। এ ব্যাপারে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি তাইমুর ইসলাম বলেন, ভেঙ্গে ফেলা মসজিদটি পুন:নির্মাণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাথে আলোচনা চলছে। তারা এটি পুনর্নির্মাণে রাজি হয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, গত ৪ মাসে পুরান ঢাকায় হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ৫০টি ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এসব স্থাপনা রক্ষায় রাজউক বা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কোন ভূমিকাই রাখেনি। তিনি বলেন, হেরিটেজ রক্ষায় ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। আদালত ২০১৩ সালের মধ্যে হেরিটেজের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিলেও তা দীর্ঘদিনেও সম্পন্ন হয়নি। হিঙ্গাবিবি জামে মসজিদ সম্পর্কে রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা বলেন, পুরনো ঐতিহ্য আমাদের অহংকার। ঐতিহ্য রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। কোন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি হেরিটেজ রক্ষায় রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র : ইত্তফোক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top