সকল মেনু

সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগীয় হাসপাতালে রোগির চেয়ে ডাক্তার-কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি

মো. আমিরুজ্জামান, নীলফামারী ১৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগীয় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। বর্তমানে রোগির চেয়ে হাসপাতালে ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি। এ কারণে শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী রোগি হচ্ছে না এই হাসপাতালে। ফলে অলস দিন কাটাচ্ছেন ৮০ জন কর্মকর্তা- কর্মচারি।

জানা যায়, ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে গড়ে উঠে দেশের বৃহৎ রেলওয়ে কারখানা। সেই সুবাদে কারখানার শ্রমিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর চিকিৎসা সুবিধার জন্য সে সময় ৯০ শয্যার এ বিভাগীয় হাসপাতালটি গড়ে উঠে। অতীতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার প্রচুর সুনাম ও খ্যাতি থাকলেও তা বর্তমানে হারাতে বসেছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা আগের জৌলুস হারিয়েছে, কমেছে কারখানার শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যাও। ফলে শ্রমিক কর্মচারী রোগির সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারদের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। এ হাসপাতালে মাসে এখন ৫০টি রোগীও ভর্তি হয় না। এমন দিন গেছে যা রোগিশূন্য হাসপাতালে পরিণত হয়েছিল। রাতের বেলায় হাসপাতালের এক চতুর্থাংশে বাতিও জ্বলে না। একটি অংশে এখন মদ-গাঁজা সেবীদের দৌরাত্ব বেড়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল যেন এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের এই অবস্থা যেন দেখার মত কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, অধিকাংশ সময় কর্মরত ডাক্তাররা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময় কর্তব্যরত ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে রোগীরা অন্যত্র গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। এই হাসপাতালে শুধুমাত্র রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও ওষুধ ও খাবার দেয়া হয়না। ফলে তারা এই হাসপাতালে আসেন না। হাসপাতালটির হিসাব বিভাগের মতে, চিকিৎসক, ফার্মাসিষ্ট, প্যাথলজি, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, মালি, সুইপারসহ ৮০ জন কমৃকর্তা- কর্মচারির পেছনে বেতন বাবদ সরকারের প্রতিমাসে ব্যয় হয় ৮ লাখ টাকা। আর ভর্তি রোগিদের পেছনে ওষুধ ও খাদ্যতে রোগি প্রতি ব্যয় হয় প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টাকা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিদন ৫-৭ জন অতিরিক্ত রোগি দেখানো হয় ভর্তি খাতায় এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সুত্রের। এরই মধ্যে হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৪টি ওয়ার্ডে মহিলা ৫ জন ও পুরুষ ২ জন রোগি ভর্তি রয়েছেন। বাকি বেডগুলো ফাঁকা। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মচারি আব্বাস আলী জানান, এখানে শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল পাচ্ছি। দিনে ডাক্তার আসেন একবার। তিনিসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, এখানকার ডাক্তাররা প্রাইভেট প্রাকটিস নিয়েই ব্যস্ত। বর্তমানে ৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। এর মধ্যে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. দিল আফরোজা বাশার ছুটিতে আছেন। রোগি পরিবহনের জন্য রয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স যার ব্যবহার নেই বললেই চলে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া হাসপাতালের কেউ সাংবাদিককে তথ্য দিতে চান না। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স প্রায় সময় রোগির অভাবে বসে থাকেন। । রোগী না থাকলে আমাদের কোন করণীয় নেই তবে রোগীদের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top