সকল মেনু

পদ্মা সেতু মামলার কার্যক্রম স্থবির

ঢাকা, ১৭ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দায়ের করা মামলা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দীর্ঘ দেড় বছর পার হলেও এ পর্যন্ত মামলার মূল আলামত সংগ্রহ করতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। ফলে মামলার তদন্ত কাজ এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন খোদ দুদকের কোনো কোনো কর্মকর্তা।

২০১৩ সালের ১৯ মে ও ৩০ অক্টোবর দুই দফা সফর করেও দুদক তদন্ত দল কানাডা সরকারের কাছ থেকে কাঙ্খিত তথ্য-প্রমাণ আদায় করতে করতে পারেনি। তাই দুদকের দাবি, কানাডা থেকে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ার কারণেই মুলত তদন্ত কাজ থেমে আছে।

শুধু তাই নয়, এ মামলার সার্বিক সহযোগিতার জন্য দুদকের সাবেক আইন উপদেষ্টা হিসেবে বর্তমান আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক কাজ করছিলেন। তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর এই পদে এখনও পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এর ফলে আইনি সহযোগিতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির চেষ্টা মামলার কার্যক্রম বর্তমানে পুরোপুরি স্থবির। মামলার অন্যতম প্রধান আলামত রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কাছে রক্ষিত আছে। আলামাতে মধ্যে এসএনসি লাভালিন কর্মকর্তা রমেশ সাহার আলোচিত ডায়েরির অনুলিপি অন্যতম। তাছাড়া, এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহা ও মোহাম্মদ ইসমাইলের বক্তব্য না পাওয়ার কারনে তদন্ত কাজের বিন্দুমাত্র কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে দুদকের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের মামলা এই প্রথম। বিষয়টি সামনে আসার পর বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই দুদক মামলা করেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এবং কানাডার সহযোগিতা না পেলে দুদকের কাছে যতটুকু আলামত বা তথ্য-প্রমান রয়েছে তা দিয়ে আদালতে এই মামলা প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

দুদকের ওই দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আরো জানান, যেহেতু পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ক্ষেত্রে এখন আর বিশ্ব ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা নেই, তাই তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা আর পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। অন্যদিকে কানাডার আদালত তাদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন তথ্য-প্রমাণ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে দুদকের দায়ের করা মামলার ভবিষ্যত নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তারা সন্দিহান।

তবে দুদকের অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মামলার তদন্তে গতি না থাকলেও এ সংক্রান্ত কানাডা অংশের মামলার গতি ঠিকই আছে। আগামী ৭ এপ্রিল পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কানাডার বৃহত্তম নির্মান প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস, রমেশ সাহা, মোহাম্মদ ইসমাইল ও বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিচার কাজের প্রাক-শুনানির দিন ধার্য্য করেছে সে দেশের আদালত।

তবে এই দুর্নীতির চেষ্টার বিচার কানাডার আদালত করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী আপিল করেছেন। কানাডার সুপিরিয়র কোর্ট অব অন্টারিও আগামী ৭ এবং ৮ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে।

আবুল হাসান চৌধুরীর কানাডিয়ান আইনজীবী ব্রায়ান গ্রীনস্পেন স্থানীয় নতুনদেশ পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘পদ্মাসেতু দুর্নীতির চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের সবাই কানাডিয়ান নাগরিক। একমাত্র আবুল হাসান চৌধুরীই বিদেশি তথা বাংলাদেশি নাগরিক। একজন বিদেশি নাগরিক হিসেবে এই মামলায় মি. চৌধুরীর বিচার কানাডার আদালত করতে পারে কি-না, তা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম। বিচারপতি নর্ড হেইমার আমার আবেদনের ওপর শুনানি করতে সম্মত হয়েছেন।’

পদ্মা সেতুর মামলা বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো.বদিউজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন,‘আমরা মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এ্যাসিসট্যান্স রিকুয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে এবং কানাডায় দুদক টিম পাঠিয়েও তথ্য-প্রমাণ আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেদেশে বিচার চলমান থাকায় এ বিষয়ে কানাডা সরকার কোন ধরণের তথ্য-প্রমাণ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে। তাই কানাডা অংশের বিচার শেষ না হলে দুদকের মামলার অগ্রগতি সম্ভব নয়।’

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নং ১৯) মোট সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

মামলার আসামীরা হলেন-সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো.ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসি’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা এবং সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।

তবে এজাহারভুক্ত আসামী না হলেও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে এই মামলায় সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top