সকল মেনু

উপজেলা নির্বাচন,ভোলায় রণক্ষেত্র; টেবিলের নীচে পালালেন প্রিজাইডিং অফিসার

 এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা:  ব্যাপক সংঘর্ষ, বোমাবাজী, জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, যানবাহনে আগুন ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ১৫ মার্চ শনিবার ভোলা সদর উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে দফায়-দফায় আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এদের অনেককেই ভোলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। সহিংস এ সব ঘটনায় নেতা-কর্মীদের লাঞ্ছিত করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃভোট দাবী করেছেন। একই অভিযোগ এনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী ভোট বর্জন করে পুনঃভোট গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
সরেজমিনে ভোট কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮৪টি কেন্দ্রের দু’একটি বাদে সবকটি কেন্দ্রেই বিএনপি প্রার্থীর (আনারস) কোন এজেন্ট নেই। ওই সমস্ত কেন্দ্র এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই তাদের সকল এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে পুলিশ ও আ’লীগ ক্যাডাররা বের করে দিয়েছে। বেলা সাড়ে ২টায় পৌর চরনোয়াবাদা এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (নম স্কুল) কেন্দ্রে দখল দারিত্ব ও জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র কওে আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পুলিশ এগিয়ে আসলে বিএনপি-আ’লীগও পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষে সেখানে রনক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এ সময় সেখানে বোমাবাজী ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ট রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষকালে পুলিশের এসআই আরশাদ, কনষ্টেবল তানভীরসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এদিকে ভোলার চাচড়া কেন্দ্রের পশ্চিম বাপ্তা এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রটি দখল করে জাল ভোট দেয়। এসময় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই কেন্দ্রের সহকারী পোলিং অফিসার স্বাস্থ্য সহকারী সোহাগ মিয়ার বিরুদ্ধে জাল দেয়ার অভিযোগ এনে তার ব্যবহৃত মটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। তখন সেখানে বিএনপি-আ’লীগ ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সেখানে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়।
একই সময় ভোলা শহরের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্র দখল করে সেখানে বোম হামলা চালায়। এসময় তারা বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট দের বের করে দিয়ে স্কুলের মাঠে এনে প্রকাশ্য মারধর করতে দেখা গেছে। ঘটনার সময় সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র লক্ষ করে বোমা হামলা হলে উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ভোট কেন্দ্র জনশূণ্য হয়ে যায়। ওই সময় বিএনপির অন্যান্য কর্মীরা আ’লীগ কর্মীদের বাঁধা দিলে সেখানে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
অন্যদিকে বেলা দেড়টার দিকে ভোলা শহরের আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল গনি কুট্টি’র পুত্র মামুনের নেতৃত্বে আ’লীগ কর্মীরা কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে মাঠের মধ্যে এনে ভাংচুর করে। বিএনপি কর্মীরা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ে বাধা দিলে আ’লীগ ও পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তৌহিদ-উদ-দৌলা এ কারণে সেখানকার ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন। তিনি জানান, সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ করে বোমা হামলা করলে প্রাণ রক্ষার্থে তিনি টেবিলের নীচে গিয়ে পালান। এভাবে ভোলা সদর উপজেলার ৮৪টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দু’একটি বাদে সবকটি কেন্দ্রই দখল করে নেয় আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা।
কেন্দ্র দখল করার ব্যাপারে আ’লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোশারেফ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাররা ভোট প্রদান করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুনঃভোট গ্রহণের দাবী বিএনপির ঃ এদিকে বেলা সাড়ে ১২টায় বিএনপি প্রার্থী কালিনাথ রায়ের বাজার অবস্থিত জেলা শ্রমিকদল অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে পুনঃভোট গ্রহণের দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, ভোট শুরু হওয়ার ২ঘণ্টা পর থেকেই ভোলা সদরের ৮৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৭টি কেন্দ্রে পুলিশ ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা একত্রিত হয়ে তার এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দেয়। তারা প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মেরে কেন্দ্র দখল করে নেয়। আলীনগর ইউনিয়নের পেশকার বাড়ী স্কুলের কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহম্মেদ বিএনপি প্রার্থীদের এজেন্টদেরকে মারধর করে বের করে দিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মারে।
একই অবস্থা ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া, উত্তর দিঘলদী, দক্ষিণ দিঘলদী, চরসামাইয়া, শিবপুরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে উত্তর ভোলার ৫টি ইউনিয়নে ভোলা সদর সার্কেল এএসপি’র নেতৃত্তে পুলিশ প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলিতে কেন্দ্র দখল করতে সহায়তা করে এবং সরকার দলীয় সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সিল মারার ব্যবস্থা করে দেয়। ভোলা পৌর এলাকার টাউন কমিটি (বাংলা স্কুল), সরকারী বালক ও বালিকা বিদ্যালয়, এ রব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পৌর বালিকা বিদ্যালয় এবং ভোলা পৌর সরকারী প্রাথমিক স্কুলসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে বেলা দেড়টায় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র দখলের পর সরকার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সিল মারে।
বিশেষ করে সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট মাহমুদুল হক নসু এবং শান্তি মিয়াকে সরকার দলীয় সন্ত্রাসী মাহমুদুল হক লেলিন, জসিম উদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন লিংকন’র নেতৃত্বে এজেন্টদের অমানষিক নির্যাতনের পর কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ভোলা টাউন কমিটি স্কুলে পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান বিএনপি এজেন্ট শিপলুসহ সবাইকে মারধরের পর কেন্দ্র দখল করে নেয়।
এমতাবস্থায় জনমতের প্রতিফলনহীন এই প্রহসনের নির্বাচন স্থগিত করে নতুন সিডিউল ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করতে নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং অফিসার বরাবর আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ ফারুক মিয়া। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচীর হুমকি প্রদান করেন।
অন্যদিকে একই অভিযোগ এনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান (মটরসাইকেল) নির্বাচন বর্জন করে পুনঃভোটের দাবী জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগে বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে তার এজেন্টদেরকে আ’লীগ সমর্থিত ক্যাডাররা বের করে দিয়েছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও তিনি কোন প্রতিকার পাননি। তাই তিনি এই নির্বাচন বর্জন করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top