ঠাকুরগাঁও অফিস ও হুমায়ুন কবীর, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) থেকে: চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের ৩য় দফার নির্বাচনে জেলার হরিপুর উপজেলায় আগামী ১৫ মার্চ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করতে অংশ নিয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ৩ জনেই অধ্যক্ষ ও একজন স্কুল শিক্ষক।
দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া এই ৪ জন বিবেকবান প্রার্থীই ভোটারদের কাছে প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছে। এ উপজেলায় মোট ভোটারের সংখা প্রায় ৮৯ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ভোটকে বিএনপি তাদের ভোটব্যাংক হিসেবে উলে¬খ করেছনে হরিপুর উপজেলা বিএনপি নেতা আজগর আলী।
আওয়ামীলীগ থেকে মনোনিত প্রার্থী হরিপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও হরিপুর আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক জিয়াউল হাসান মুকুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শামীম ফেরদৌস টগর, আর এক বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্কুল শিক্ষক জামাল উদ্দীন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতায় ভোট যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি থেকে মনোনিত অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং একাধিকবার সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। ৩য় দফার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি তখনকার আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ শামীম ফেরদৌস টগরের কাছে পরাজিত হন। অল্প কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের উপজেলা কাউন্সিলে অংশ না নিয়ে সভাপতি পদ হারান অধ্যক্ষ শামীম ফেরদৌস টগর। তার স্থলে সভাপতি নির্বাচিত হন আর এক কলেজ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন অধ্যক্ষ জিয়াউল হাসান মুকুল। আওয়ামীলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শামীম ফেরদৌস টগরকে সাধারন সদস্য পদে রাখা হয় এবং অনেক পুরোনো আওয়ামীলীগ নেতাকে কার্যকরী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করার ফলে দলের আভ্যন্তরীন কন্দোল চরম আকার ধারন করে। আমগাঁও, বনগাঁও, হরিপুর, চৌরঙ্গী সহ কয়েকটি এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দলীয় প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ জিয়াউল হাসান মুকুলকে মনোনিত করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া অপর দু-জনও আওয়ামীলীগ নেতা। আভ্যন্তরীন কন্দোল নিরসন না করে তারা আওয়ামীলীগেরই ক্ষতি করেছেন। তারা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, নীতিচ্যুত হয়ে বিএনপি প্রার্থী অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম এখন বিএনপি প্রার্থী এবং আওয়ামীলীগ থেকে অংশ নেয়া অপর ৩ জনই শিক্ষক এবং জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত। তারা তাদের দলের ভালমন্দ বোঝেন না, আর সাধারন মানুষের ভালমন্দ তারা কিভাবে বুঝবেন ?
অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগ করে দল থেকে উপেক্ষিত হতে হয়েছে। তাই বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি ভোটে অংশ নিয়েছেন। তিনি দাবি করে বলেন, তার সার্বজনিন গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে এবং বিজয় লাভের বিষয়ে তিনি আশাবাদি। অপরদিকে অধ্যক্ষ জিয়াউল হাসান মুকুল জানান, তৃণমূল নেতা কর্মীদের সরাসরি ভোটে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে জেলা ও উপজেলা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারনে বেশ সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ অধ্যুষিত হরিপুর উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামীলীগের লেবাস পরে দলকে ডোবানোর পায়তারা করছে। নেতা কর্মীদের বিভ্রান্ত করে তারা বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীকে জয়লাভ করাবার চক্রান্ত করছে। বিদ্রোহীদের বিষয়ে রেজুলেশন করা হয়েছে এবং তাদের দল থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শামীম ফেরদৌস টগর বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে গত ৫ বছর মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। তাকে বৃহৎ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছে। সাধারন মানুষের চাহিদার কারনেই আবার তিনি ভোট যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন।
আওয়ামীলীগের আর এক প্রার্থী শিক্ষক জামাল উদ্দীন বলেন, দলের জন্য নিবেদিত থেকেও এবং বিগত উপজেলা কার্যকরী কমিটিতে মর্যাদাপূর্ন পদে থেকেও এবারে তাকে কার্যকরী পদে সদস্যও রাখা হয়নি। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে তাকে কার্যকরী সদস্য পদেও রাখা হয়নি, সেখানে বহিষ্কারের কোন বিষয় নাই।
রানীশংকৈলের পথেই হাটছে হরিপুর:
আওয়ামীলীগ অধ্যুষিত রানীশংকৈল উপজেলায় ২য় দফার নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে ৩ জন এবং বিএনপি থেকে ১ জন প্রার্থী অংশ নেয়। ১লাখ ৩৭ হাজার ভোটারের মধ্যে বিএনপি’র ভোটব্যাংক হিসেবে ৪০ হাজার ভোটের স্থলে মাত্র ৪২ হাজার ভোট পেয়ে আওয়ামীলীগের ৩ প্রার্থীকেই কুপোকাত করেছে বিএনপি। কিন্তু লক্ষনীয় যে, আওয়ামীলীগ থেকে বিদ্রোহী ২ জন সহ ৩ জন প্রার্থী মোট প্রায় ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবীন নেতা ইমরান আলী মন্তব্য করে বলেন, দলীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থটাকে প্রাধান্য দেয়ায় রানীশংকৈল উপজেলায় আওয়ামীলীগের ভরাডুবি হয়েছে। তবে ৩ জন প্রার্থীর সমন্বিত প্রায় ৭০ হাজার ভোট পেয়েছে অর্থাৎ আওয়ামীলীগের ভোট নষ্ট হয়নি। প্রার্থীদের দোষেই বিএনপি জয়লাভ করেছে। আর এবার ৩য় দফার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আর এক দুর্গ হরিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ রানীশংকৈল উপজেলার পথেই হাটছেন।
মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি:
রানীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত জয়লাভের পরে হরিপুর উপজেলায় জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বিএনপি, জামায়াত সহ ১৯ দলের নেতা কর্মীরা। পাশ্ববর্তী রানীশংকৈল উপজেলা সহ জেলার নেতারাও হরিপুর উপজেলায় তাদের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। তারা ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।