স্টাফ রিপোর্টার,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ধারালা অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন প্রতিবাদকারী শাহজাহান তালুকদার। স্বজনেরা জানান, নিহতের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ আকাল বোরিশ। শনিবার বিকেলে দুই বখাটে যুবক তার স্কুল পড়ুয়া ভাতিজিকে ইভটিজিং করে। প্রতিবাদে বখাটে যুবক পক্ষের সমর্থকেরা ধারালা অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে রক্তাক্ত করে। নিহত শাহজাহান তালুকদার আকাল বোরিশ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আঃ সালামের ছোট ভাই।সুত্র জানান, কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ আকাল বরিশ গ্রামের আবু তাহের মৃধার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার খাঁশেরহাট সৈয়দ আবুল হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তার স্কুলে যাওয়া-আসার সময় একই গ্রামের রাজ্জাক খাঁর বখাটে ছেলে ফয়সাল হোসেন ও জব্বার কাজীর ছেলে ইরাদ হোসেন প্রায় ইভটিজিং করে। বখাটেদের ভয়ে স্কুল ছাত্রী বাড়ির কাউকে ঘটনাটি জানায় নি। বুধবার বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সুমাইয়া। এ সময় বখাটেরা তাকে কু-প্রস্তাব দেয়। অবশেষে ঘটনাটি বড় ভাই নাইমকে জানায় সে। ছোট বোনকে কু-প্রস্বাব ও উত্যাক্ত করার খবর শুনার পর নাইম ২ যুবককে এর জন্য বকাবকি করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ফয়সাল ও ইরাদ। উত্তেজনার এক পর্যায়ে ২ যুবক নাইমকে ধরে মারধর করে। এ নিয়ে নাইম পরিবার ও রাজ্জাক পরিবারের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বড় ধরনের সহিংসতা এড়াতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি মীমাংসার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কিন্ত শনিবার বিকেলে ওই বখাটেরা আবার সুমাইয়াকে ইভটিজিং করে। এ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সালাম তালুকদার ও রাজ্জাক খাঁ, জব্বার কাজী ও মেম্বার আবুল হোসেন বেপারীর গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সাবেক চেয়ারম্যান সালাম তালুকদারের ছোট ভাই শাজাহান তালুকদারসহ ১১ জন গুরুত্বর আহত হন। মুমূর্ষ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহজাহানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পরে রাত সোয়া ১০ টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। বাশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাম তালুকদার বলেন, একটা মেয়েকে উত্ত্যক্তের ঘটনার প্রতিবাদ করায় আমার ভাইকে এলাকার খোকন ও আনোয়ার গ্রুপের সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলার এডিশনাল এসপি উত্তম কুমার নিহতের পরিবারের উদ্বৃতি দিয়েহটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, নিহত শাহজাহানের লাশ দাফনের পরে ওই পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পর ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখা গেছে, মরদেহের চার পাশে স্বজনেরা কান্না করছেন। শোকাহত পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছিল হাসপাতালের পরিবেশ। সকালে মর্গের সামনের ফুলগাছের নীচে কান্না করছেন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সোমাইয়া আখতার। কান্নাজড়িত কন্ঠে সে জানায়, চাচাকে (শাহজাহানকে) বলেছিলাম, বখাটেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দরকার নেই। কিন্ত চাচা আমার কথা (তার কথা) কানে নেননি। বাড়ির ওপরে এসে পাষন্ডরা নির্মমভাবে চাচাকে কুপিয়ে আহত করেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে সুমাইয়া আরো জানায়, আর কোন স্কুল ছাত্রী যেন তার মত করে ইভটিজিংয়ের শিকার হতে না হয়। কোন পরিবারকে যেন পির্তৃতুল্য চাচাকে এভাবে হারাতে না হয়। নিহতের স্বজনেরা জানান, শাহজাহান পেশায় ছিলেন একজন গ্রাম্য হোমিও চিকিৎসক। ঢাকা ও কালকিনিতে তিনি প্রাকটিস করতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল চিরাচরিত তার অবস্থান। ভাতিজির ইভটিজিং প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।নিহতের লাশ ময়না তদন্তের পরে স্বজনেরা লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।