সকল মেনু

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি

ঢাকা, ৫ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সুন্দরবনের অদূরে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি বয়ে আনবে। ৪ মার্চ দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় জোসেফ অলচিনের লেখা ‘বাংলাদেশের কয়লা-বিভ্রম’ শীর্ষক উপসম্পাদকীয়তে এ মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, অন্যান্য দরিদ্র দেশের মতো অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বাংলাদেশেরও ব্যাপক জ্বালানি দরকার। এটা যতটা সস্তা হবে, ততই ভালো। দেশটির মোট বিদ্যুতের ৮০ শতাংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস স্থির এবং তা কমছে। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এতে বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। এতে দূষণ বাড়ে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ। তার ওপর দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার। ২০১০ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ জ্বালানি কয়লা থেকে সংগ্রহ করার আশা করছে সরকার। কয়লা থেকে এখন মাত্র ২ শতাংশ জ্বালানি আসে। লক্ষ্য পূরণে সরকার প্রায় এক ডজন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রামপালের বিতর্কিত একটি কেন্দ্রও রয়েছে। ওই কেন্দ্রটির উৎপাদনক্ষমতা হবে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, যা দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ।

২০১৬ সালের মধ্যে রামপাল কেন্দ্রের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপস্পাদকীয়তে বলা হয়, ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন বলে খ্যাত সুন্দরবনের ১০ মাইলের কম ব্যবধানে ওই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। বিশ্বের সর্বাধিক রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও বিলুপ্তপ্রায় ডলফিনের বাস এই সুন্দরবনে। এই বন ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের মতে, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই বন হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করে।

১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউনেসকো। রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে তা সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্ট করবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আভাস ভূমি। সুন্দরবন সন্নিহিত নদীতে বাস করে একধরনের সংকটাপন্ন শুশুক। সুন্দরবন সামুদ্রিক ঝড়ের সময় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি লাঘবেও কাজ করে থাকে। অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের তথ্যমতে, সুন্দরবন হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করে থাকে। অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জাহাজে করে কয়লা নেওয়া হবে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাওয়া নৌপথ দিয়ে। এতে কয়লা থেকে দূষণের বিরূপ প্রভাব পড়বে ওই পরিবেশে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কেন্দ্র থেকে বছরে পাঁচ লাখ টন বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হবে।

আনু মুহাম্মদের মতে, রামপাল প্রকল্প সুযোগসন্ধানীদের ভূমি দখল এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় কথিত জাহাজভাঙাশিল্পসহ পরিবেশে দূষণকারী অন্যান্য শিল্প স্থাপনের পথ উন্মুক্ত করে দেবে।

বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। এটা আরও বাড়াতে চায় সরকার। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে গেছে। কয়েক দশক ধরে ভর্তুকি দিয়ে খুব সস্তা দামে ভোক্তা ও শিল্প খাতে বিক্রির ফলে দেশটির গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানিগুলো গুনছে ক্ষতি।

বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা নেয়নি।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বালানি উৎপাদনে কয়লা ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের কয়লার মজুতও ব্যাপক এবং দামও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে তাতে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন। যদিও সরকার বলছে, ওই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ নয় এবং অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে কেন্দ্রটি পরিচালিত হবে।

বাংলাদেশে প্রতিবছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। চাহিদা পূরণে দেশটির ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন দরকার। কিন্তু এ জন্য কয়লার ওপর নির্ভর না করে নবায়নযোগ্য আরও অনেক ভালো উপায় আছে। আইপোর্টবিডি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top