সকল মেনু

প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে বড় দুই দল

 রিপন হোসেন, যশোর থেকে: যশোরের মনিরামপুরে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে চরম বিপাকে পড়েছে বড় দুই রাজনৈতিক দল। তৃণমুলের মতামতকে তোয়াক্কা না করে এই উপজেলার স্থানীয় নেতারা নিজেরাই নিজেদের প্রার্থী ঘোষনা করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী ময়দানে। চলছে প্রচার প্রচারনা। সভা সমাবেশের পাশাপাশি চলছে গণসংযোগ।  চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচারনায় নেমেছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও। প্রতীক বরাদ্ধের পর পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে গোটা অঞ্চল । ভোটারদের কাছে টানতে প্রার্থীদের চেষ্টার কমতি নেই।
১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মনিরামপুর উপজেলার মোট ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ জন। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই উপজেলাটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত হওয়ায় বরাবরই যে কোন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা অপেক্ষাকৃত কিছুটা বেশী সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিগত নির্বাচন গুলোতেও তাই হয়েছে। তবে ব্যতিক্রম ঘটেছে সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে। বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করায় এখানে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা এ্যাড. খান টিপু সুলতানকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন দলের অপর নেতা মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন ভট্টাচার্য্য চাদ। চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে তিনি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে এ্যাড. খান টিপু সুলতান নজির বিহীন সন্ত্রাসের আশ্রয় নেন।

ভোট কেন্দ্র দখল থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের পর্যন্ত মাঠে নামতে দেননি। এক পর্যায়ে  ভোট গ্রহনের পরিবেশ না থাকায় উপজেলার ১২২টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬০ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করতে বাধ্য হন নির্বাচন কমিশন। পরে ওই ৬০ কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে এ্যাড. খান টিপু সুলতানকে ২৭ হাজার ভোটের ব্যাধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন স্বপন ভট্টাচার্য্য চাঁদ। আসন্ন ১৫ মার্চেও উপজেলা নির্বাচনে সেই পরাজয়ের বদলা নিতে আবারা মাঠে সক্রিয় টিপু ও তার কর্মী সমর্থকরা। এই নির্বাচনে টিপুর মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান। অপর পক্ষে স্বপন ভট্টাচার্য্য চাঁদের পক্ষে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন লাভলু। অপরদিকে বিএনপিসহ ১৯ দলীয় জোট জেলার অন্য উপজেলাতে জোটের একক প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও মনিরামপুরের ক্ষেত্রে নেতারা ব্যর্থতার পরিবয় দিয়েছেন। এখানে বিএনপির দলীয় সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস. এম. মশিউর রহমানকে। অন্যদিকে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন এ্যাড. গাজী এনামুল হক। নির্বাচনে মশিউর রহমান মোটর সাইকেল, গাজী এনামুল হক কাপ পিরিচ, অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান  দোয়াত কলম ও আমজাদ হোসেন লাভলু  আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বিএনপির আসাদুজ্জামান রয়েল (টিউবয়েল), জামায়াতের উপজেলা আমীর প্রভাষক ফজলুল হক (চশমা), আওয়ামীলীগের মিকাইল হোসেন (তালা), জাতীয় পার্টির এমএ হালিম (টিয়াপাখি), ইসলামী আন্দোলনের শহিদুল ইসলাম (মাইক) ও ফারুক হোসেন (উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির শিরিন আকতার (কলস), জামায়াতের গুলবদন খানম (ফুটবল) এবং আওয়ামী লীগের নাজমা খানম(হাঁস) প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি এবং জামায়াতের বিভিন্ন মতানৈক্যের কারনে ১৯ দল একক প্রার্থী চুড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে দ্বিধা বিভক্ত চুড়ান্ত রুপে দেখা দিয়েছে। সে কারনে বিএনপি এবং জামায়াত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছেন। তবে ১৯ দলীয় জোটের উপজেলা আহবায়ক ও বিএনপির সভাপতি পৌরমেয়র শহীদ ইকবাল হোসেন জানান, একক প্রার্থী দিতে এখনও চেষ্টা অব্যাহত আছে। উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মশিউল ইসলাম জানান, জেলা কমিটি যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন সেটাই তারা চুড়ান্ত বলে মেনে নিবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিবদমান দুটি গ্র“প পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছেন। যার একটির নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান। অপরটিতে রয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য। আওয়ামী লীগের টিপু গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন সংগঠনের উপজেলা সভাপতি কাজী মাহামুদুল হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মিকাইল হোসেন। অন্যদিকে স্বপন গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন নাজমা খানম।

এছাড়া জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি এমএ হালিম এবং ইসলামী আন্দোলনের শহিদুল ইসলাম ও ফারুক হোসেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে লড়ছেন। এসব প্রার্থীরা এখন স্ব স্ব কর্মী সমর্থক নিয়ে নির্বাচনে প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহামুদুল হাসান জানান একক প্রার্থী করতে অনেক চেষ্টা করেও দল ব্যর্থ হয়েছে। এখন নিজের ইমেজ আর দলীয় কর্মী সমর্থকদের মুল্যবান ভোটের প্রত্যাশা নিয়ে তিনি মাঠে আছেন। তিনি আশা করেন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। গত সংসদ নির্বাচনের মতো এবার ভোটাররা আর ভুল করবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানাযায় দুই জোটের একাধিক প্রার্থী থাকায় তারা এখন দলকে প্রাধান্য না দিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের ভোট দিয়ে উপজেলা পরিষদে বসাতে চান। যারা নির্বাচিত হয়ে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ের পরিবর্তে এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের কথা ভাববে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top