সকল মেনু

দুই জোটেই হতাশা

ঢাকা, ১ মার্চ (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, হতাহত ও কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বড় দুই জোটসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নানামুখি বিচার-বিশ্লেষণ। নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট এগিয়ে রয়েছে। আর পিছিয়ে রয়েছে সরকার দলীয় মহাজোট।

রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের পরাজয়ের কারণ ও ভুলত্রুটি খুঁজছে। দুই দফার এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তৃতীয় দফার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ফলাফল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন দুই জোটের সিনিয়র নেতারাই। ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিশ্লেষণ হলো বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী। দোষারোপ করছে এক শরিক দলকেই। অপরদিকে আরো ভালো ফলাফলের বাধা হিসেবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করছেন বিরোধীরা। পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিচ্ছে ।

বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ পরাজয়ে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীকে দায়ী করে বলেন, যেখানে আমরা একজন প্রার্থী দিতে পেরেছি, সেখানে বিজয়ী হয়েছি। একক প্রার্থী দিতে পারেনি এমন উপজেলাতেই বেশি হেরেছি। সামনে আরো নির্বাচন আছে। দুই দফার এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এই ফলাফলে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। কারণ দুটি নির্বাচনে সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের দলীয় ক্যাডার দিয়ে কেন্দ্র দখল করেছে, ব্যালট পেপার, বাক্স ছিনতাই করেছে, আমাদের প্রার্থীদের গ্রেফতারসহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। ভোটাররা তাদের মতামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারেনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃতীয় ধাপে সরকার আরো প্রভাব বিস্তার করবে। এদিকে ফলাফলকে সাধারণ ভোটারদের কাছে দুই দলের জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর।

গত দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয়ধাপে সরকারের তরফ থেকে প্রভাব বিস্তারের মাত্রা বেশি ছিলো- এ মন্তব্য দেশ-বিদেশী গণমাধ্যমের। তারা ফলাও করে এ তথ্য প্রচার-প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের আগেই প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা-হামলাসহ নির্বাচনের দিনও প্রার্থী ও তাদের কর্মীসমর্থকদের উপর হামলা, পুলিশি লাঠিচার্জ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও গুলিবষর্ণের ঘটনাও ঘটেছে। শুধু প্রতিপক্ষই নয় সরকার দল সমর্থিত প্রার্থীর হাতে মারপিটের শিকার হয়েছেন, সাংবাদিক, পুলিশ ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও। কোথাও উল্টো চিত্রও দেখা গেছে।

পিরোজপুরে নির্বাচনের আগেই প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। অনেক প্রার্থী প্রচারণায় নামতে পারেনি গ্রেফতারের ভয়ে। এদিকে নির্বাচনের দিন যশোরের চৌগাছা, নোয়াখালীর বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে মারধর করেছে সরকার দলীয়রা। এখানে আওয়ামী লীগ নেতাকেও মারপিট করেছে বিরোধীরা।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় নির্বাচনী সংঘর্ষে সাদ্দাম হোসেন নামের এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্যসহ ১০ জন আহত হন। বাগেরহাটের ফকিরহাটে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সরদার নিয়ামত হোসেনকে র‌্যাব-বিজিবির সদস্যরা মারধর ও গ্রেফতার করেন।

এছাড়াও ব্যালটপেপার ও বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল, দলীয় প্রার্থীর প্রতীকে সীল দেয়া, কেন্দ্রে আসতে ভোটারদের বাধাসহ নানান অঘটন ঘটেছে। অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে দাখিল করা হলেও তা ধোপে টেকেনি। মাত্র যার ফলে অন্তত ১২ উপজেলায় নির্বাচনই বর্জন করেছে সরকার বিরোধীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন উপজেলায় ভোট ডাকাতি, প্রশাসনের পক্ষপাতসহ উল্লেখিত সব অভিযোগের চিত্র দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেছে। নির্বাচন শেষ তবে থেমে নেই সংঘাত-সংঘর্ষ। নির্বাচনোত্তর সহিংসতা চলছেই। বৃহস্পতিবার রাতে পিরোজপুরের নাজিরপুরে  বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষরা। হামলায় আহত হয়েছে অনেকেই।

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ১০১টি উপজেলায়। সরকার দল সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন ৭৯ টি উপজেলায়। জামায়াত বিজয়ী হয়েছে ২১ টি উপজেলায়, জাতীয় পার্টি ১ টি ও স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীরা ১২ টি উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের এই ক্ষেত্রে অপর দুই পদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিএনপি। প্রথম দুটি ধাপের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন ৬০ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৫২ উপজেলায়, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ৫৩ উপজেলায়, জাতীয় পার্টি ৩টি এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ১৬ টি উপজেলায়। একইভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৭৮ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৬০ টিতে, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ১৯টিতে, জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ১ টি উপজেলায় এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ১৭ টি উপজেলায়।

প্রথম দফায় ৯৮ টি উপজেলায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সর্বাধিক সংখ্যক উপজেলায় বিজয়ী হয়। ৪৪ টি উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক উপজেলায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৩৪ টি উপজেলায়। এছাড়া জামায়াত ১৩টিতে, জাতীয় পার্টি ১ টিতে এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫ টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৩২ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ২৪ টিতে, জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ২৩টিতে, জাতীয় পার্টি ৩ টিতে এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীরা ১০টি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। একইভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৩৪টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৩৪ টি উপজেলায়, জামায়াত ১০টিতে, জাতীয় পার্টি ১ টিতে এবং স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীরা ১ টি উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যা গরিষ্ঠ উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফল থেকে জানা যায়, ১১৪ টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ৫৬ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ৪৫ টি উপজেলায়, জামায়াত প্রার্থীরা ৮টিতে ও অন্যান্য প্রার্থীরা ৭টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ২৮ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সমান সংখ্যক ২৮ টি উপজেলায়, জামায়াতের প্রার্থীরা ৩০ টি উপজেলায় এবং অন্যান্য প্রার্থীরা ৬ টি উপজেলায় এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। একইভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৪৪ টি উপজেলায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা ২৬ টি উপজেলায়, জামায়াত সমর্থিতরা ৯টিতে ও অন্যান্য প্রার্থীরা ৭ টি উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

সন্তুষ্ট নয় বিএনপি ও জোট : যে ফলাফল ঘরে এসেছে তাতে সন্তুষ্ট নন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি চান পরবর্তী ধাপের সব নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের আরো সুচনীয় ভাবে পরাজিত করতে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের পরে পরবর্তী ধাপের নির্বাচন গুলোতে বিজয়ী হতে যেসব কৌশল নেয়া হয়েছিলো তা পুরোপুরি সফল হয়েছে এমনটি মেনে নিতে চাইছেন না দলের হাইকমা-।  তবে সংগঠনিক দুর্বলতার কারনে কারচুপি রোধ করা সম্ভব হয়নি বলেও তাদের ধারণা। কারচুপি রোধে এখন পর্যন্ত সাংগঠনিক ভাবে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। দলীয় চেয়ারপার্সনের বলিষ্ট ভূমিকার পরেও অনেক স্থানে বিএনপির বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ গুলো হচ্ছে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, একের পর একযৌথ অভিযানের কারণে আতঙ্ক, কিছু স্থানে বিদ্রোহ দমনে ব্যার্থতা, কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থীকে বিজযী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন না করা, ১৯ দলের মধ্যে শতভাগ একাট্টায় পৌছতে না পারা এবং আন্তকোন্দলের কারণে সৃষ্ট সাংগঠনিক দুর্বলতাই কারচুপি প্রতিরোধে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ফলাফলে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নই। কারণ দুটি নির্বাচনে সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাদের দলীয় ক্যাডার দিয়ে কেন্দ্র দখল করেছে, ব্যালট পেপার, বাক্স ছিনতাই করেছে, আমাদের প্রার্থীদের গ্রেফতারসহ নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। ভোটাররা তাদের মতামতের বহি:প্রকাশ ঘটাতে পারেনি। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তাই তারা এই দানবীয় রূপ ধারণ করেছে।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা আরো অনেক উপজেলায় জয়ী হতাম। তোফায়েল আহম্মদের মন্তব্যকে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপকৌশল আখ্যায়িত করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ডিগবাজি রাজনীতির কারণে রংপুরবাসী এরশাদকে ‘না’ বলেছে। এইভাবে প্রধানমন্ত্রীর পিরগঞ্জের আসনে জনগণ তাকেও ‘না’ বলে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, আজ্ঞাবহ কমিশন বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থী এবং ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। তবে আগামীর দিনের উপজেলা নির্বাচনেও সরকার তা-ব-দখলদারিত্ব কায়েম করবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন তিনি।

বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ ও শরিক দলের নেতিবাচক ভূমিকাই দায়ী : বিগত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন বৃহত্তম এই দলটিতে নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল থেকেই। ফলে নিজ নিজ এলাকায় প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরাও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতেই বিজয়ী হয়েছে বিরোধীরা। রংপুরের পীরগঞ্জের মতো উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। দুই ধাপের নির্বাচনের ফলাফল আর পুরনো এই দলের মধ্যে তুলনা করলে হিবেসটা গরমিলই দেখছেন দলের সিনিয়র নেতারা। বিভিন্ন সভাসমাবেশে বাস্তবতা তুলে ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল এক আলোচনা সভায় দলের পরাজয়ে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীকে দায়ী করে বলেন, যেখানে আমরা একজন প্রার্থী দিতে পেরেছি, সেখানে বিজয়ী হয়েছি। একক প্রার্থী দিতে পারেনি এমন উপজেলাতেই বেশি হেরেছি। সামনে আরো নির্বাচন আছে। দুই দফার এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

শরিক দল জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ হয়েছে, রংপুরের মতো জায়গায় বিএনপি জিতেছে। হয়তো বা এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও বিএনপির সঙ্গে ছিল, থাকছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই কেবল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এজন্যই আমাদের অধীনে বিএনপি জিতে চলেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মে¥ল হক ইনকিলাবকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেছি। এখানে কিছু রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তি প্রভাব কাজ করে। স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন বিচার-বিশ্লেষণ করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে শতভাগ রাজনৈতিকভাবে চিন্তা করা যাবে না। প্রতিপক্ষের বেশি বিজয় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। আমরা যেখানে প্রার্থী দিয়েছি আমাদের প্রতিপক্ষ সাবেক বিরোধী দল বিএনপির প্রার্থী তার চেয়ে ভালো ছিলো তাই তারা বিজয়ী হয়েছে। নিজ সংগঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগঠনিকভাবে প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আওয়ামী লীগের ফলাফল আরো ভালো হতে বলে মত দেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছে জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ : নির্বাচনের ফলাফলকে বড় দুই দলের জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মন্তব্য করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনের এ পর্যন্ত ফলাফলে খুব সহজভাবেই ধারণা করা যায় জনগণ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তাদের কর্মকা-কে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। অন্যদিকে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলেই তাদের বিজয়ের পাল্লা ভারী।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী তার বিশ্লেষণ থেকে বলেন, গত দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে বিজয়ের ব্যাপক ফারাক হওয়ার পেছনে সরকারের জনপ্রিয়তার কমে যাওয়াটাই অন্যতম। অপরদিকে বিএনপি আরো ভালো করতে পারতো যদি তাদের পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী হতো। তার মতে স্থানীয় নির্বাচনে বিরাজমান সহিংসতা আরো বাড়তে পারে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিপপের চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ তার বিশ্লেষণ থেকে ইনকিলাবকে বলেন, এই নির্বাচনে নতুনমাত্রা তৈরী করেছে- তা হলো ভিন্ন দলমতের অংশগ্রহণ। দুইধাপের উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের ভোটারদের মধ্যে ঐতিহাসিক প্রবণতা হলো শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে চেক এন্ড ব্যালেঞ্চ করা। সবসময়ই বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন বেশিই দিয়ে থাকে। ফলাফল দুই দলের কর্মকান্ডের মূল্যায়ন। ভোটাররা জামায়াতের মতো নিবন্ধন হারানো দলের প্রার্থীকেউ বিজয়ী করেছে। ফলে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তা ছিলো তা কেটে গেছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। -ইনকিলাব

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top