সকল মেনু

সবচেয়ে শক্তিশালী কৃষ্ণবিবরের সন্ধানে!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক, ২৭ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি এবং অন্যান্য টেলিস্কোপের সমন্বিত কার্যক্ষমতা ব্যাবহার করে এ যাবতকালের প্রাপ্ত সবচেয়ে শক্তিশালি কৃষ্ণবিবরের (Black Hole) সন্ধান পেয়েছেন। কৃষ্ণবিবরটি এর চারপাশে জমে থাকা উত্তপ্ত গ্যাসের মাঝে একটি অতিকায় কাঠামো গঠন করে রেখেছে যা কয়েক লক্ষ কোটি নক্ষত্র সৃষ্টি হতে বাঁধা দিচ্ছে।

পৃথিবী থেকে প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ (আলো সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল বেগে যায়, সে হিসেবে এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে আলোকবর্ষ বলে) দূরে RX J1532.9+3021 নামে একটি গ্যালাক্সিপুঞ্জের (Galaxy Cluster) মাঝে এই মারাত্মক শক্তিশালী কৃষ্ণবিবরটি অবস্থান করছে। প্রচ্ছদের ছবিটি হল একটি Composite অথবা সমন্বিত ছবি। এটা তুলেছে চন্দ্রা-এর এক্স-রে অবজার্ভেটরি।

এতে প্রাপ্ত তথ্য প্রদর্শিত হয়েছে বেগুনী রঙে উন্মোচিত করছে পুঞ্জের ভেতরের উত্তপ্ত গ্যাস এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া দৃশ্যমান বা Optical তথ্য- যা সব গ্যালাক্সিগুলোকে হলুদ রঙে দেখাচ্ছে; এই দুই-এর সংমিশ্রন ও সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। পুঞ্জটি এক্স-রে তে অনেক উজ্জ্বল যা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে এটি বিপুল পরিমাণ ভারি, আমাদের সুর্যের চাইতে এক কোয়াড্রিলিয়ন (এক হাজার লক্ষ কোটি) গুণ বেশি ভর সম্পন্ন! এই পুঞ্জের কেন্দ্রে রয়েছে একটি বড় ডিম্বাকৃতির গ্যালাক্সি, আর এই গ্যালাক্সির ভেতরেই রয়েছে সে মহাশক্তিশালী কৃষ্ণবিবর।

পুঞ্জের কেন্দ্রের দিকে যে বিপুল পরিমাণ উত্তপ্ত গ্যাস রয়েছে, তা আমাদের ধাঁধাঁয় ফেলে দেয়। উত্তপ্ত গ্যাস যা এক্স-রশ্মিতে উদ্ভাসিত হয়, তার ঠান্ডা হওয়ার কথা এবং কেন্দ্রের দিকের উত্তপ্ত গ্যাসের সবচেয়ে দ্রুত ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কথা। কেন্দ্রের এই ঠাণ্ডা গ্যাসের চাপ অতঃপর কমে আসার কথা যার ফলশ্রুতিতে দূরবর্তী অঞ্চলের গ্যাসসমূহের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসার কথা যাতে করে হাজার লক্ষ কোটি নক্ষত্রের জন্ম হত। কিন্তু ভাবনার বিষয় এই যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, এমন কোন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় নি যাতে জানা যায় যে এই পুঞ্জের কেন্দ্রের দিকে কোন নক্ষত্র তৈরির বিস্ফোরণ ঘটেছে!
এই সমস্যা অনেক গ্যালাক্সি পুঞ্জেই দেখা গিয়েছে, কিন্তু RXJ1532 একেবারে চরম পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে গ্যাসের এই ঠাণ্ডা হয়ে আসা বেশ নাটকীয়ভাবে হওয়ার কথা কেননা এর কেন্দ্রের দিকে আছে উচ্চ ঘনত্ব সম্পন্ন গ্যাস। আজ পর্যন্ত জানা হাজার হাজার গ্যালাক্সি পুঞ্জের ভেতর, এক ডজনেরও কম পুঞ্জে এই RX J1532 –এর মত চরম অবস্থা বিরাজ করছে। ফিনিক্স পুঞ্জ (Phoenix Cluster) ঠিক এমনই একটা চরম অবস্থার পুঞ্জ, তবে এখানে সম্পুর্ণ বিপরীতভাবে বিপুল সংখ্যক নক্ষত্রকে জন্ম নিতে দেখা যায়!

কি সেই বস্তু যে RXJ1532-তে এই বিশাল সংখ্যক নক্ষত্রদেরকে জান্মাতে দিচ্ছে না? চন্দ্রা এক্স –রে অবজারভেটরি থেকে প্রাপ্ত ছবি এবং NSF-এর Karl G. Jansky Very Large Array (VLA- একটি বিখ্যাত রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অব্জারভেটরি যা বিশাল আকৃতির ২৭ টি রেডিও টেলিস্কোপের সমন্বয়ে গঠিত, এটি মেক্সিকোতে অবস্থিত) এই প্রশ্নের একটি জবাব বের করে দিয়েছে। এক্স-রে ছবি কেন্দ্রিয় গ্যালাক্সির উভয় পার্শ্বের উত্তপ্ত গ্যাসের মাঝে দুটি বিশাল আকৃতির গর্ত(cavity) নির্দেশ করে। চন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলোকে বিশেষভাবে বিশ্লেষন করা হয় এই গর্তগুলির উপর জোর দেয়ার জন্য। উভয় গর্তই দুটি নির্গম (Jet)-এর সাথে সুবিন্যস্ত (aligned) যা VLA –এর রেডিও চিত্র দ্বারা দেখা যায়। এই দুই গর্তের মাঝে একটি অতি ভারী কৃষ্ণবিবর (Super massive Black Hole)–এর অবস্থান এটিই সাক্ষী দেয় যে এই কৃষ্ণবিবর থেকে যে শব্দোত্তর গতির (Supersonic) নির্গমের উৎপত্তি হয় তা এই উত্তপ্ত গ্যাসের আবরণ ফুঁড়ে বের হয়ে আসে আর একে দূরে সরিয়ে দেয়, যা এই গর্তের সৃষ্টি করে।

এই গর্তের প্রসারণের সাথে সাথে শব্দ তরঙ্গের আকারে শক্তির অবমুক্তি ঘটে যা উত্তপ্ত গ্যাসের ভেতের থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ছুটে চলার সময় তাপের উৎস হিসেবে কাজ করে। এই ঘটনাটিকে বলে Shock fronts, যা Sonic Boom (যখন কোন বস্তু শব্দের চাইতে দ্রুত বেগে ছোটে তখন বাতাসের উপর এর প্রচন্ড চাপের কারণে একটি বিস্ফোরণের শব্দ সৃষ্টি হয় যাকে Sonic Boom বলে) এর মতই একটি ঘটনা। এটি অধিকাংশ গ্যাসকেই আর ঠান্ডা ও ঘনীভুত হয়ে নতুন নক্ষত্র সৃষ্টি করতে দেয় না। এ যেন ক্ষমতার দাপটে সব আন্দোলনকে মুখ চেপে আটকে ধরার মত ঘটনা…

(চলবে)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top