সকল মেনু

তুরস্কের কবি সামি বায়দারের চারটি কবিতা

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : জীবিতকালে প্রায় অস্বীকৃত, অকালপ্রয়াত তুর্কি কবি সামি বায়দার (১৯৬২-২০১২) এর কবিতাপাঠ পাঠকের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। আশি আর নব্বই দশকে যে কয়েকজন কবি তুর্কি কবিতার নতুন ভাষার পথ মেলে ধরেন তাদের মধ্যে দুজন কবি উল্লেখযোগ্য। এরা হল- সায়হান এরোজসেলিক আর সামি বায়দার। দুজনই অকালপ্রয়াত, পঞ্চাশ ছুঁতে না ছুঁতেই প্রয়াত (আধুনিক তুর্কি কবিদের বাইয়োগ্রাফি পড়ে, অবাক হয়ে খেয়াল করি, সেখানে যেন অকাল প্রয়াতদের মিছিল চলছে!)

সুফি ঘরানার কবি সামি বায়দারের কবিতায় পাওয়া যায় তুর্কি সুফিধারার সিগনেচার মার্ক-  নিজের অহমকে ক্রমাগত কষ্টবোধ আর অশ্রু প্রপাতের মাধ্যমে ক্রমশ বিলীন করে দেয়া। তাই তার  কবিতার স্বর যুগপৎ মিলন ও বিয়োগ ব্যথায় কাতর, গাঢ় বেদনাস্নাত (তুর্কি ভাষায় ‘হুজুন’)। তার হাত ধরেই তার প্রিয় বিষয় হয়ে যায় জল- যা স্বভাবতই তরল আর অশ্রুর প্রতীক। সামির কবিতার ফর্মও তার সমসাময়িক কবিদের চেয়ে আলাদা। পড়াশোনা করেছেন আর্ট ও পেইন্টিং-এ। তাই তার কবিতার ভাষা-  পরম্পরাহীন, অসংলগ্ন, যেন ঝুলে থাকা শূন্য স্পেসে ধীরে ধীরে তার শব্দ জায়গা করে নিচ্ছে, সেখানে ধীরে ধীরে ফুটে ‌উঠছে তার কবিতার হাড় মাংস, আত্মা তথা সম্পূর্ণ কবিতা। যেন চিত্রকর ভিন্ন স্পেসে, ছোপ ছোপ করে ব্রাশ চালিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন তার বোধ আর ভাবনাগুলো।

পাতা

ঝরে পড়া অশ্রুর নিচে
আমি ধরে রাখি
একটি তৃষ্ণাখনি,
ত্রিশে,
আমি তোমার নেক-টাইয়ের আয়োজন করি।
দয়া করে বলো কোনটা তোমার সুসময়?

বন থেকে একটা হরিণ পালিয়ে যাচ্ছে মধ্যরাত
তার পিঠ থেকে বাঁকিয়ে সে নিয়ে যাবে
অশ্রু— বনটাকে মুচড়িয়ে দেবে বছরের পর।

গরম রুটি আমাকে আজকাল আটকে রাখে
যেন আমি দু:স্বপ্নে একটা খরখোশ দেখি ঝোপে
যদি আমি কেবলমাত্র মাঠের ভেতর দিয়ে হাঁটি
অতিথিরা চলে যায় যেকোনো দিক দিয়ে (তুমি
এই জায়গাটাকে চিনতে, চিনতে নাকি?

ভ্রমণে যাওয়ার আগে
দেখে নিতে
বাড়ি
জানালা
বাতাস
যেমন ছাদের উপর প্রথম আলোড়নের ব্যথার মতো
প্রথম লিঙ্গত্বক হারানোর মতো
তবু অপূরণীয়

কাঁদো, কাঁদো।

জল

জল ফোটে
এটি অসুস্থ মানুষের মেঘ,

তাপ ওঠে।
এই আগুন হলো
এই বসন্ত।

শেকড় গাছের উপরে বসে,
বাড়ি

অসুস্থ।

সীগ্যাল

জলাশয়ে ফোটা, ওরা কি সান্ত্বনা নয়
চাঁদের আলো, পিয়ানো আর রোমান ঘণ্টা আবিষ্কারকারি?
সান্ত্বনা কেমন মরে যাচ্ছে,  ওরা ওদের নিষ্পাপতা হারায়,
তখন একজন বোঝে ফেলে আর বলে
‘আমি আর নি:শ্বাস নিতে পারছি না’

যখন তোমার কফিন খুলে যায়, নতুন বন্ধুর জন্য হেসে ওঠো
অভিযোগ করো— কি শক্ত এটি বহন করা, বহন করা,
হে আমার খোদা, আমার হাসার মুহূর্তে আমার সাথে
সুব্যবহার করো।

ছায়ার বাড়িতে সীগ্যালগুলো  দ্বিগুণ হচ্ছে, দ্বিগুণ হচ্ছে
প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে তোমার ফ্লাশলাইটে।
আমার চোখ, এগুলোতে আহত হয়, বুকে ছোট
শূন্য ফাটল জাগে

আমাকে তুমি দেখো না প্রিয়, ওদেরকে দেখো…

রাজার মুকুট

কেউ যদি একটা জানালা খুলে দেয়, অজানা
কোথাও না,  সময় নেই, সেখানে আরও একজন
তাকে দিয়ে এটি করাচ্ছে।
কবরখানার ইতিহাস বিচার করে, নক্ষত্রেরাও
রাজার মুকুট দেখে

ওরা বলে-
সাতটি রঙের ভেতর আলোর পৃথিবী ধরে রেখেও
চাঁদ আর নক্ষত্র শুধুমাত্র একটি ছোট বৃত্ত মাত্র,
এই ক্ষুদ্র কামনা মৃত্যুগামীদের জন্য নয়-
তবু বড় নক্ষত এই নিশ্চুপতায়  পরোয়া করে না
এদের মধ্যে নিচু যে, সে এর ভার তুলে নেয়

আর তোমার চোখের ভেতর বসে থাকা সেবক
কিছুক্ষণের জন্য ইস্ত্রি করা থেকে বিরত থাকতে চায়।


ভূমিকা  ও  অনুবাদ:  আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top