সকল মেনু

চট্টগ্রামে ব্যাংকের কয়েকশ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ দুই শিল্প গ্রুপের

চট্টগ্রাম, ১৯ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : চট্টগ্রামের এসএ গ্রুপ ও নুরজাহান গ্রুপ নামের দুটি বৃহৎ শিল্প গ্রুপ নানা প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রামের তিনটি ব্যাংকের কয়েক শ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। 

প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ এবং ঋণ পরিশোধের নামে চেক দিয়ে প্রতারণা করার দায়ে এ দুই শিল্প গ্রুপের চার পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। 

অভিযোগ রয়েছে, এসএ গ্রুপ ও নুরজাহার গ্রুপের চার পরিচালক নানা কৌশলে এবং প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের চেষ্টা করে আসছিলেন। 

কয়েক দফায় ব্যাংক-ঋণের টাকা পরিশোধের নামে কোটি কোটি টাকার চেক দিলেও অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে ওই সব চেক প্রত্যাখ্যাত হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময়ে এই দুই গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে একাধিক চেক প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। ওই ব্যাংকগুলোর দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর ও স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মুজিবুর রহমান চার শিল্পপতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, নুরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহম্মদ ও তার ভাই একই গ্রুপের মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান এবং এসএ গ্রুপের সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাবউদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আলম। 

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের বেঞ্চ-সহকারী মো. ওমর ফুয়াদ জানান, আসামি নুরজাহান গ্রুপের জহির আহম্মদ ও টিপু সুলতান যৌথভাবে একটি মামলায়, টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে এককভাবে তিনটি মামলায় এবং এসএ গ্রুপের শাহাবউদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, শাহাব উদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল সোমবার। নুরজাহান গ্রুপের দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর শুনানির সময় নির্ধারিত ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অভিযুক্তরা কেউ হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

চেক প্রতারণার মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, এসএ গ্রুপের সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের নামে চট্টগ্রামে আগ্রাবাদ ফিনলে হাউসের ঠিকানায় অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়। এ ঋণ পরিশোধের জন্য সামান্নাজের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালের ২১ মে অগ্রণী ব্যাংককে তিনটি চেক দেওয়া হয়। তার মধ্যে কমার্স ব্যাংকের অনুকূলে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা ও ২০ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার দুটি এবং ঢাকা ব্যাংকের অনুকূলে ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়। চেকে নির্ধরিত তারিখে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা গ্রহণ করতে গেলে ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ জন্য চেকগুলো ডিজ-অনার হয়ে ফেরত আসে। এরপর সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে জানানো হয় এবং দুই দফায় লিগ্যাল নোটিশ দেওয়ার পরও তারা কোনো সদুত্তর দেয়নি।

২০১৩ সালের ৪ জুলাই অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার সিনিয়র অফিসার সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় শাহাবউদ্দিন আলম ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আলমকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযোগ গঠনের শুনানিতে মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে আসামিরা হাজির না হওয়ায় আদালত ৬ মার্চ আবারও অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন নির্ধারণ করেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেন।

এদিকে নুরজাহান গ্রুপের মামলা সূত্রে জানা যায়, নগরীর ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামসংলগ্ন নুরজাহান গ্রুপের মেরিন ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের নামে কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এই ঋণের বিপরীতে ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার অনুকূলে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন। একই দিন চেকের বিপরীতে কমার্স ব্যাংকের পক্ষ থেকে টাকা ওঠাতে গেলে ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ জন্য চেক ডিজ-অনার হয়।

একইভাবে সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ২০১২ সালের ২৮ জুন ৫ কোটি টাকার দুটি এবং ৪ কোটি টাকার একটিসহ মোট তিনটি চেক দেয় মেসার্স জাসমিয়া ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান। এই তিনটি চেকও ‘অপর্যাপ্ত তহবিলের’ কারণে ডিজ-অনার হয়। 

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, এসএ গ্রুপ ও নুরজাহান গ্রুপের মালিকরা ব্যাংকের সঙ্গে নানাভাবে ও কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে নগরীর তিনটি ব্যাংকের প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। প্রদত্ত চেক ডিজ-অনার হওয়ায় ঋণের টাকার বিপরীতে মামলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এই দুই গ্রুপের বিরুদ্ধে আরো মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top