সকল মেনু

গালিবের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিবেদক, ১৭ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : কবি মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিবকে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রভাবশালী উর্দু ও ফারসি কবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৭৯৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া এই শব্দের জাদুকর আজ থেকে প্রায় ১৪৫ বছর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আগ্রায় জন্ম নেয়া মির্জা গালিবের পিতৃবিয়োগ ঘটে মাত্র মাত্র চার বছর বয়সে। তাই মামার বাড়িতেই তার শৈশব কেটেছে। দুরন্ত সেই শৈশবেই  আগ্রার খ্যাতিমান পণ্ডিত শেখ মোয়াজ্জেমের কাছেই জ্ঞান পিপাসার হাতেখড়ি ঘটে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তিবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রথম থেকেই তার ঝোঁক ছিল ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি এবং বিশেষ করে ফারসি ভাষার প্রতি। এ সময়ে আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষ আবদুস সামাদ নামে এক জ্ঞানী ব্যক্তি আগ্রা সফর করেন। গালিব তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আবদুস সামাদ গালিবের মামার বাড়িতে দুই বছর অতিবাহিত করেন। গালিব কখনো কাউকে তার ‘উস্তাদ’ বলে স্বীকার না করলেও জীবনের বিভিন্ন সময়ে আবদুস সামাদের নাম উল্লেখ করে তার প্রতি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেছেন। অত্যন্ত মেধাবী গালিব মাত্র নয় বছর বয়সেই ফারসিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাই পুরো জীবন ধরে তিনি ফারসিকে তার প্রথম প্রেম বলে বর্ণনা করেছেন।

১৮৩০ সালে মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হয় গালিবের। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই তিনি আগ্রা থেকে দিল্লিতে চলে আসেন এবং সেখানে একটি প্রাসাদ ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। গালিবের শ্বশুর নওয়াব ইলাহী বখশ দিল্লিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তার কল্যাণে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে দিল্লির নামজাদা লোকজনের সঙ্গে তার দহরম মহরম গড়ে উঠে। ফলশ্রুতিতে দিল্লির প্রভাবশালী মহলে গালিবের কবি সত্তার প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। যদিও সমালোচকদের মতে, গালিবের প্রথম জীবনের কবিতা তার ব্যক্তিগত জীবনের মতোই দুর্বোধ্য, সামঞ্জস্যহীন এবং কঠিন ছিল। এ নিয়ে একবার ব্যঙ্গ করে গালিব লিখেছিলেন, ‘ও, আমার হৃদয়, এটা তো সত্য যে আমার কবিতা খুবই কঠিন! খ্যাতিমান ও সফল কবিরা আমার কবিতা শুনে সেগুলো সহজ করতে বলে। কিন্তু কঠিন ছাড়া কোনো কবিতা লিখা আমার জন্যেই কঠিন।’

গালিব জানতেন যে তার কবিতা সবার কাছে সহজবোধ্য নয় এবং মানের দিক থেকেওে সমকালীন কবিদের চেয়ে ঢের এগিয়ে। তাই কবি মহলে গালিবের পরিচয় ছিল দাম্ভিক কবি হিসেবে।

নিজের কবিতাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার হৃদয়ের আগুন থেকেই আলো দিচ্ছে আমার কবিতা, আমি যা লিখছি তাতে একটি আঙ্গুল দেয়ার সাধ্য নেই কারো।’

আগাগোড়া দাম্ভিক একজন কবি ছিলেন গালিব। বাহদুর শাহ জাফরের সভাকবি জওকের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল সমকালীন অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়। গালিব সর্বদাই ভাবতেন জওকের চেয়ে উত্তম কবি হলেও তিনি সভাকবির পদ পাচ্ছেন না নিতান্তই সম্রাটের অদূরদর্শিতার জন্য যিনি নিজে একজন কবি ছিলেন এবং জওককে গুরু মনে করতেন, জওককে বসিয়েছিলেনও গুরুর আসনে সভাকবি বানানোর মাধ্যমে। কিন্তু গালিব কখনও ছেড়ে কথা বলেননি । বাহদুর শাহ জাফরের ছেলে জওয়ান বখতের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ের অনুষ্ঠান বিবাদ শুরু হয় গালিবের কবিতার একটি লাইনকে কেন্দ্র করে যাতে তনি বলেছিলেন, সমাবেশে এমন কোনো ব্যক্তি নেই যে তার চেয়ে উত্তম কবিতা লিখতে পারে।- এরকম দাম্ভিক কবি ছিলেন গালিব।

বিবাহিত জীবনে সাত সন্তানের জনক হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার একটি সন্তানও বাঁচেনি। এটা নিয়ে গালিবের একটা মর্মবেদনা ছিল যা তার গজলগুলোতে ফুটে উঠেছে।

ব্যক্তি জীবনে অনেকটা উচ্চাভিলাসী আর বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে সময় কেটেছে তার। বলা হয়ে থাকে যে, গালিব পালকি ছাড়া কোথাও যেতেন না। আর মদ্য ও জুয়া খেলায় তার ছিল ব্যাপক আগ্রহ। মদ্য পান করা সম্পর্কে একবার কবিতায় লিখেছিলেন, ‘ও আসাদ, সুরা পান করতে অস্বীকারকারী পুরোপুরিই অজ্ঞ; তার বেহেশতের সাকির ভালোবাসা ছাড়া সুরা নিষিদ্ধ।’

জুয়া খেলার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একবার তো টানা তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডও হয়েছিল তার। যদিও কবি সত্তার কারণে মেয়াদপূর্তির আগেই মুক্ত হতে পেরেছিলেন। কিন্তু জুয়া খেলার কারণে আর্থিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে।

এ অবস্থায় ১৮৫০ সালে গালিব ‘নাজমুদ দৌলাহ দাবির উল-মুলক নিজাম জং’ খেতাবে ভূষিত হন। তখন তিনি তৈমুরের বংশের ইতিহাস লেখার দায়িত্ব পান বার্ষিক ছয়শ রুপি ভাতায়। এতে গালিব অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে কিছুটা স্থিতিশীল হন।

কিন্তু গালিবের জন্য শেষ জীবনে আরো ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছিল। কারণ ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের চালুকরা নিয়ম অনুসারে গালিবের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় তাকে। ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গালিব মারা যান। তাকে দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।

গালিবের অনেক গানের মধ্যে তিনটি বাছাইকৃত: মির্জা গালিব-১মির্জা গালিব-২মির্জা গালিব-৩

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top