সকল মেনু

প্রতিবন্ধী শিমুল জীবন যুদ্ধে বিযয়ী হতে চায়

 এম শাহজাহান আহমদ,মৌলভীবাজার: জীবন তাকে অনেক কিছু না দিলেও তার প্রাপ্য ঠিকই আদায় করে নিচ্ছেন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সে চলতি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি)র একজন পরীক্ষার্থী। মানুষের অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনো বাঁধা তাকে আটকাতে পারেনি শিমুলকে। সে কথা আবার প্রমান করলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃ সামসুদ্দীন শিমুল। ৯ বছর বয়সে গাছ থেকে পড়ে পঙ্গত্ববরণ করা একজন প্রতিবন্ধী কিভাবে সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে শিক্ষা জয়ের সংগ্রাম চালিয়ে মাধ্যমিকের চুড়ান্ত ধাপ অতিক্রমের যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদাহরণ শিমুল। মোঃ সামসুদ্দীন শিমুল ২০০০ সালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ছাতকছড়া গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের জন্ম গ্রহন করেন। জন্মগত পঙ্গু না হলেও ৫ম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় গাছ থেকে পড়ে কোমরের নিচসহ দুই পা অবশ হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হন। ভাই/বোন চার জনের মধ্যে সবার বড় শিমুল। বাবা কৃষি কাজ করেন। ছোট বেলা থেকেই শিমুলের লেখাপড়ার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ ছিল। তাই বাবা সফাত আলী সিনিয়র মাদ্রসায় প্রথম শ্রেনিতে ভর্তি করান। এ ভাবেই বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে শিক্ষা জীবন শুরু। মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেনিতে পড়া অবস্থা ২০০৭ সালে জুন মাসে বাড়ীর আম গাছে আম খেতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে কোমরের নিচসহ দুই পা পর্যন্ত অবশ হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করলেও তার ভিতরের শিক্ষার আশা কমেনি। ৫ম শ্রেনী পাস করে বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দুরে বনগাঁও আহমদ ইকবাল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হন শিমুল। প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে কোন ক্লাস করেনি শিমুল। বাড়িতে বসে পড়ালেখা করে পরীক্ষায় নিয়েছেন তিনি। পঙ্গুত্বকে নিয়তির লিখন মনে করে নিজেকে আড়াল করে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে। হুইল চেয়ার তার একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। বাবা নিজে হুইল চেয়ারে করে তাকে টেনে নিয়ে আসতেন স্কুলে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র মোঃ সামসুদ্দিন শিমুল ছোট বেলা থেকেই প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করে এখন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক সাথে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেখানে শিমুলের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে আলাদা একটি বেঞ্চ দেয়া হয়েছে। হুইল চেয়ারে বসে খাতায় লিখছে। শিমুলের স্বপ্ন এসএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করবে। শিমুলের কাছে প্রতিবন্ধী জীবনের এত দুর পাড়ি দেয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আমার ছোট বেলা তেকেই ইচ্ছা ছিল শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেকে প্রতিষ্টা করা। আমি কারো বোঝা হতে চাইনা। আমার বর্তমান অবস্থানে পৌছাতে অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় এলাকার অনেকেই সহযোগীতা করছেন। টাকার অভাবে হুইল চেয়ার কিনতে না পেরে প্রথমে চলাফেরা করতে পারতেন না। পরবর্তীতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস হতে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয় এবং প্রতিবন্ধী ভাতা মাসিক ৪ টাকা দেয়া হয়।তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র দাসের সাথে আলাপকালে বলেন, শিমুল খুবই মেধাবী ছাত্র। সে প্রতিটি ক্লাসে কৃর্তৃত্বের স্বাক্ষর রেখেই আজকের এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে এবং আশা করি সে আরো এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top