সকল মেনু

১০ বছরে ৫ হাজার রোগীকে যক্ষ্মামুক্ত করেছে ব্র্যাক

মাগুরা, ১৪ ফেব্রুয়ারি (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : যক্ষ্মার চিকিৎসায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে মাগুরায় কর্মরত ব্র্যাকের স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ১০ বছরে  জেলার প্রায় ৫ হাজার যক্ষ্মা রোগীকে বিনামুল্যে চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য করেছে ব্রাক। সেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে নিয়োজিত ১২১৭ জন স্বাস্থ্য সেবিকাসহ ব্র্যাক মাগুরার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বলিষ্ঠ তৎপরতায় এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা মাগুরা সদর উপজেলার বারাশিয়া মধ্যপাড়ার মরিয়ম বেগম জানান, যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে একজন স্বাস্থ্য সেবিকা হিসেবে তিনি তার এই নিজ এলাকায় ২ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। গত ২ বছরে বারাশিয়া গ্রামের আসমা বেগম (৪৫), আনোয়ারা বেগম (৩৫), নাজমা বেগম (৩২), ছুটু বেগম (৬০), আনোয়ারা পারভীন (৫৫) এ ৫ জন যক্ষ্মা রোগীকে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় ৬ মাস ধরে ডটস পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণরুপে যক্ষ্মা মুক্ত করেছেন। 

বর্তমানে একই এলাকার ওয়াদুদ মোল্যা (৬০) ব্র্যাকের অধীনে মরিয়ম বেগমের তত্ত্বাবধানে ২ মাস ধরে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে যক্ষ্মা রোগী ওয়াদুদ মোল্যা  জানান, প্রথম প্রথম তিনি মরিয়ম বেগমের কথায় গুরুত্ব দেননি। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার পর যখন জেনেছেন তার যক্ষ্মা হয়েছে তখন থেকেই তার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন মরিয়ম বেগম নিজে এসে তাকে ওষুধ খাইয়ে যান। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠছেন। আগের চেয়ে ওজন কিছুটা বেড়েছে। কাশি কমেছে। বেড়েছে ক্ষুধাও।

যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার বিষয়ে কথা হয় সদর উপজেলার বগিয়া গ্রামের অপর স্বাস্থ্য সেবিকা আছমা বেগমের সাথে। বর্তমানে তার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন একই এলাকার ফরিদা বেগম (৪০) নামে একজন গৃহবধু। ২ মাস আগে তার শরীরে ফুসফুসের বাইরের যক্ষ্মা ধরা পড়েছে। ফরিদা বেগম জানান, আছমা বেগমের অধীনে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূিচ বিষয়ে ব্র্যাক স্বাস্থ্য বিভাগ মাগুরা সিনিয়র জেলা ব্যবস্থাপক শেখ আজমল হোসেন ও শাহজাহান সিরাজ জানান, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় ২০০৪ সাল থেকে মাগুরায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে ব্র্যাক। এ পর্যন্ত ৫২২৩ জন যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীকে চিকিৎসার আওতায় এনেছে ব্র্যাক। তন্মধ্যে ৪৮২৩ জন রোগী সম্পূর্ণরুপে আরোগ্য লাভ করেছেন। ব্র্যাক যক্ষার চিকিৎসা দিচ্ছে বিনামূল্যে। 

জেলায় এ মহৎকাজে ১৬৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী, প্রতি ১৫০টি খানার জন্যে ১ জন হিসেবে  ১২১৭ জন স্বাস্থ্য সেবিকা কাজ করছে। বর্তমানে তাদের অধীনে ৫২৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যক্ষ্মা রোগীদের আরোগ্যের ক্ষেত্রে ডটস পদ্ধতির চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য সেবিকা, কর্মী ও কর্মকর্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যক্ষ্মা রোগের বিষয়ে গোটা জেলায় ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে উঠেছে। 

এখন ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি হলেই মানুষ ব্র্যাক স্বাস্থ্য সেবিকাদের শরনাপন্ন হচ্ছেন। নিয়মিত চিকিৎসা নেয়ায় এখন জেলায় যক্ষ্মার মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে শুধু মাগুরা জেলা নয় গোটা দেশ অচিরেই শতভাগভাবে যক্ষ্মা মুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top