সকল মেনু

আজ সুন্দরবন দিবস, ইকো ট্যুরিষ্টদের কাছে সুন্দরবনকে আকর্ষনীয় করার নেই কোন উদ্যোগ

আলী বাবু , বাগেরহাট , (হটনিউজ২৪বিডি.কম) : আজ ১৪ ফেব্র“য়ারী সুন্দরবন দিবস। সুপার সাইক্লোন বুকে ধারন করে উপকুলবাসীকে বাঁচিয়ে রাখা সুন্দরবনকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবন সন্নিহিত জনপদের মানুষ সরকারি ভাবে কয়েক বছর ধরে পালন করে আসছে সুন্দরবন দিবস হিসাবে। সুন্দরবন বিভাগ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করছে। বিশ্বখ্যাত এই ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট জাতির গর্ব হলেও দেশী বিদেশী ইকো ট্যুরিষ্টিদের কাছে সুন্দরবনকে আকর্ষনীয় করার নেই কোন উদ্যোগ। জীববৈচিত্র্যের ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি সুন্দারবন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ঘনীয় স্থান। তবে পর্যটকের সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য ন্যূনতম অবকাঠামো সুবিধাটুকু নেই।
সুন্দরবন বনবিভাগ সূত্রে জানাগেছে, পর্যটকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২০১০ সালে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকার অধিক ব্যয়ে ‘সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, চাঁদপাই ও শরনখোলায় ‘পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষন’ নামে একটি প্রকল্প তৈরী করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালায়ে দাখিল করলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। একারনে প্রতিবছরই সুন্দরবনে ইকো ট্যুরিষ্টিদের সংখ্যা কমছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের হিসাব মতে এই বিভাগে গত বছর যেখানে দেশী পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৫শ ৬০ জন ও বিদেশী পর্যাটক ছিল ৩ হাজার ৮শ ৫৪ জন। সেখানে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে নানা কারনে দেশী পর্যটকদের সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৯ হাজার ১শ ৮৬ জন ও বিদেশী পর্যাটকদের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ হাজার ১শ ৯৭ জনে। যা গত বছরের ১২ ভাগের ১ ভাগ মাত্র।
যে কারনে সুন্দরবন ইকো ট্যুরিষ্টদের কাছে আকর্ষণী
সমগ্র সুন্দরবনের মোট আয়োতনের মধ্যে বনভাগের পরিমান ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। এ বনে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল। সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। বন্যপ্রানীয় বৃহত্তম আবাসস্থল সুন্দরবনে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিন, লোনা পানির কুমির, অজগর, কচ্ছপ, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রকার ডলফিন, ১ প্রকার তিমিসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রানী রয়েছে এ বনে। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরিসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। সুন্দরবনের নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ইকো ট্যুরিষ্টদের সব সময় অকর্ষন করে। এ কারনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিষধর সাপ ও কুমিরের  অক্রমনের ভয় উপেক্ষা করে দুঃসাহসী ইকো ট্যুরিষ্টরা সুন্দরবনের আকর্ষনে বারবার এখানে ছুটে আসেন।  ৬ হাজার ১৭র্ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৬বার তার রুপ বদলায়। খুব ভোরে এক রুপ, দুপুরে অন্যরুপ, পড়ন্ত বিকেলে অন্যরূপ, সন্ধ্যায় অপরুপ রুপে সজ্জিত হয়। মধ্য ও গভীর রাতে এক রকম ও চাঁদনি রাতে মোহনীয় রুপে সজ্জিত হয় সুন্দরবন। এছাড়া গভীরভাবে দেখলে ১২ মাসে সুন্দরবন ১২ রকমের রুপ ধারন করে। যা দারুনভাবে পর্যটদের বিমোহিত করে। এছাড়া কচিখালী সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ তো রয়েছেই।
সুন্দরবন ভ্রমনে  ইকো ট্যুরিষ্টদের বিড়ম্বনা
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি ইকো ট্যুরিষ্টদের আকর্ষন করলেও সুন্দরবন ভ্রমনে তাদের রয়েছে পদে পদে বিড়ম্বনা। সুন্দরবন ভ্রমনে পর্যটকদের জন্য নেই কোন নিরাপদ আধুনিক নৌযান, পর্যাপ্ত হোটেল, রেষ্টিুরেন্ট ব্যবস্থা। এমনকি পর্যটকদের জন্য নেই সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা। ইংরেজি জানা ও বন সম্পর্কে অভিজ্ঞ গাইডদের রয়েছে অপ্রতুলতা। এ প্রেক্ষাপটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে ২০১০ সালে ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৭৮ টাকা ব্যয়ে করমজল, হাড়বাড়িয়া, চাঁদপই ও শরনখোলা পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষন নামে একটি প্রকল্প তৈরী করে বন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বন বিভাগ। ৫ বছরব্যাপি নির্মানকাল ধরে ৪টি স্থানে এ পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ নামের প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে রয়েছে কুমির পালন-প্রজনন কেন্দ্র, হরিন পালন প্রজনন কেন্দ্র, সাপ সংরক্ষন প্রজনন কেন্দ্র, বানরের বসবাসের জন্য পাকাঘর। প্রকল্পে রয়েছে অবর্জাবেশন টাওয়ার, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যটন কেন্দ্রের চারদিকের প¬াষ্টিকের আবরনযুক্ত তারের বেড়া, পর্যটকদের বসার জন্য ২২টি ছাউনিযুক্ত বসার স্থান ও আরসিসি জেটি নির্মান, সেমি পাকা অভ্যন্তরীন রাস্তা নির্মান, পর্যটকদের বন অভ্যন্তরে কাঠের ডেকিংযুক্ত ফুটটেইল সোলার প্যানেল, মটরযান ক্রায়, লঞ্চ নির্মান, ষ্টিলবডি ট্রলার নির্মান, অডিও-ভিডিও ক্যামেরা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ট্রাংকুলাইজিং (বন্যপ্রানী অচেতন করা বন্দুক) গান ক্রয়।   প্রস্তাবিত ৪টি পর্যটন কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনে বন্যপ্রানী সংগ্রহ, পর্যটন কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন, দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট সুন্দরবন তথ্য কেন্দ্র নির্মান, সেমিপাকা টিকেট ঘর, সেন্ট্রি বক্স, পাবলিক টয়লেট নির্মান, সুন্দরবনের ডিসপে¬ ম্যাপ ও পর্যাটকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মানের কথা ছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমনে অনেক নিরাপদ ও আরামদায়ক হতো। সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা আরো বাড়তো।
উপরেলে¬খিত প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ডিএফও (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) আমির হুসাইন চৌধুরী জানান, প্রকল্প তৈরী করে বন বিভাগের সংশি¬ষ্ট দফতরে দাখিল করা হয়েছে।  প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। তবে সুন্দরবনে করমজলে একটি আরসিসি অবজারবেশন টাওয়ার নির্মান ও কুমির প্রজানন খামার সম্প্রশারন করা হচ্ছে। ইকো ট্যুরিষ্টদের সুন্দরবনে যাতায়েতসহ আবাসনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে সুন্দরবনে পর্যাটকদের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top