সকল মেনু

বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্থরগতি ব্যয় বাড়ছে হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: অর্থের সংস্থান না করেই সরকারের আগের ও বর্তমান মেয়াদে অনেক বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সরকারের আগের মেয়াদে বহুল আলেচিত পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ এক হাজারেরও বেশি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে এর বেশির ভাগই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। বাছ-বিচার না করে অনুমোদন দেয়া প্রকল্পের মধ্যে এমনও প্রকল্প রয়েছে যা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। আবার যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে সেগুলোরও বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক নয়। তবে বাস্তবায়নের হার যাই হোক না কেন, সব প্রকল্পেরই ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ।

সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের দাবি- দাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প অনুমোদন দিলে দাতারা উন্নয়ন সহযোগিতায় আরও এগিয়ে আসবে বলে কমিশনের আশা। তবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও স্বচ্ছতার অভাবকেই দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্লেষকদের মতে, বরাদ্দবিহীন প্রকল্পের অনুমোদন অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটবে এবং ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতার প্রশ্নে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সমস্যা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিঠি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত ফার্স্ট ট্র্যাক কমিটিও যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদ রয়েছে বলে দাবি কমিশনের।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত মহাজোট সরকারের সাড়ে চার বছরে ৫ লাখ ৮১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ১৫৯টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। পরিসংখানে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে নতুন ও পুরাতন সব মিলে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১০৪০টি। বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৭০টি প্রকল্প। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নতুন ও পুরাতন সব মিলে প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ১১৩২টি। বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৯১টি। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে ১১৩৪টি অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১৯৯টি। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ৬৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অনুমোদিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্র জানায়, সময় বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৭১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাড়তি ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ২২১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প: ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত দেশের ইতিহাসে সবচয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতারা অর্থায়ন স্থগিত করলে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে সরকার। পুরো প্রকল্পটি ৫টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে তিনটি প্যাকেজের কাজ প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে মূল সেতুর জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার কথা রয়েছে। সাড়ে ৮ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ইতিমধ্যেই সাড়ে ৬ বছর পেরিয়ে গেছে। সাড়ে ৬ বছরে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১২ ভাগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এক হাজার ২২১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে ইতিমধ্যেই প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প: দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ মহাসড়ক চার লেন করার অনুমোদন পায় ২০০৮ সালে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে ৪২ ভাগ। মাঝে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দু’দফা পাল্টাতে হয়েছে নকশা। নতুন পরিকল্পনায় খরচ বেড়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০১০ সালে প্রকল্প ব্যয় ২১৫ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। সে সময় ডিপিপি সংশোধন করে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। গত বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের ব্যয় ৫৯৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সওজ। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ ২০০৬ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

মেট্রো রেল প্রকল্প: জাইকার সহায়তায় বছর ধরে চলছে মেট্রো রেলের নকশা তৈরির কাজ। নকশা তৈরির আগেই প্রকল্পটির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করে একনেক। প্রকল্পটির অনুকূলে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়ায় প্রকল্পটির ব্যয় ৭০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (বিআরটি): ঢাকা সাস্টেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি চালুর লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পক্ষ থেকে ২০১১ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্পের বিভিন্ন অংশের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে মাত্র। এ প্রকল্পেরও ব্যয় বেড়েছে অনেকগুণ।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, সংসদ ভবন এলাকা, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। ২০১১ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ অবধি কাজ শুরুই হয়নি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া বরাদ্দ সংকটে ভুগছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৩২ ভাগ। এছাড়া সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, এশিয়ান হাইওয়ে, এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি শুধুই রাশিয়ার সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর পর্যন্ত। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।যুগান্তর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top