সকল মেনু

আজ শহীদ ফারুকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী

রাবি, ৮ ফেব্রুয়ারি : উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কোন্দলে হারিয়ে গেছে অসংখ্য মেধাবী মুখ। শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে মতিহারের সবুজ চত্বর।

তেমনি এক দিন ছিল ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন গভীর রাতে রাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সিট দখলের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন মেসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে শিবিরের রাতভর সংঘর্ষ চলে।

এতে শিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হয় রাবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও গণিত বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন। শিবির ক্যাডাররা তাকে নির্মমভাবে খুন করার পর লাশ সৈয়দ আমীর আলি হল সংলগ্ন ম্যানহোলে ফেলে রাখে। এছাড়াও শিবির ক্যাডাররা ওই দিন ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় এবং অর্ধশত পুলিশকে পিটিয়ে জখম করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছেলে হারানোর শোকে ফারুকের মা হাসনা বানু এখনও পাগল প্রায়। ফারুকের ছবি বুকে নিয়ে দিনরাত শুধুই কান্নাকাটি করেন। বাতে আক্রান্ত অসুস্থ বাবা ফজলুর রহমানও ছেলের শোকে মাঝে মধ্যেই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েন।

কিন্তু দীর্ঘ প্রায় চার বছরেও শেষ হয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র জয়পুরহাটের খোর্দ্দসগুনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান ফারুক হত্যাকান্ডের বিচার-তদন্ত। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ১০ মামলায় কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেন নি তদন্ত কর্মকর্তারা।

আর তাই ছাত্রশিবিরের নৃশংস নির্যাতনে দীর্ঘ চার বছরেও ছেলের নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফারুকের বাবা-মা।

দুই পা’ বাতে আক্রান্ত ফারুকের বাবা ফজলুর রহমান জানান, ‘ছেলেকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। কিন্তু রাজনীতির কালো থাবায় মেধাবী ছেলে ফারুকের নির্মম মৃত্যু তার সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকদিন হয়ে গেছে। বেঁচে থাকতে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো কি-না তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছিনা।’

ফারুক হত্যার ঘটনায় রাবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু ছাত্রশিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আড়াই বছর পর ২৮ জুলাই ২০১২ সালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আদালতে ১২৬৯ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাবি ছাত্রশিবিরের তৎকালিন সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সেক্রেটারী মোবারক হোসেন, নবাব আব্দুল লতিফ হলের সভাপতি হাসমত আলী, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সভাপতি রাইজুল ইসলাম, শিবিরকর্মী রুহুল আমিন ও বাপ্পীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু আজও ফারুক হত্যায় এদেও কাউকেই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।

এদিকে ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মী হওয়া সত্তেও ফারুক হত্যাকান্ডের বিচার আজও না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা ফারুক হত্যাকান্ডের আসামীদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে শহীদ ফারুক হোসেনের মৃত্যুর তারিখ অনেকটা পার হয়ে গেছে। কিন্তু এই শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট অনেক আবেদন করার পর শাহ্-মখদুম হলের অডিটোরিয়ামের নাম শহীদ ফারুকের নামে করা হয়েছে। কিন্তু শিবির ক্যাডাররা শহীদ ফারুককে যেখানে হত্যা করেছিল রাবি ছাত্রলীগের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও সম্পন্ন হয় নি।

শাহ্-মখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ শহীদ ফারুক হোসেন সম্পর্কে তেমন কিছু জানেনই না উল্লেখ করে বলেন, ‘আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী তা জানি। তবে এটা একটি ছাত্রসংগঠনের সংশ্লিষ্ট বিষয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা হলের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া ঠিক হবে না।’

শহীদ ফারুক স্মৃতি স্তম্ভের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার আগে কি কি উদ্যোগ তার ব্যাপারে নেয়া হয়েছিল তা আমি জানি না। কিন্তু আমার কাছে আজ পর্যন্ত কোউ ফারুকের ব্যাপারে কোন দাবি নিয়ে আসে নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top