সকল মেনু

কলাপাড়ায় বনাঞ্চল উজাড় ,করাতসহ ১০৫ টুকরা গাছ জব্ধ

মেজবাহউদ্দিন মাননু (কলাপাড়া), ০৭ ফেব্রুয়ারি :  কলাপাড়ায় বিট (নিলাম) নেয়ার প্রচার করে শত শত ছইলা-কেওড়া গাছ কাটা হয়েছে। বনবিভাগের অসাধু বিট কর্মকর্তা জালাল মুন্সির নেতৃত্বে এসব গাছ কাটা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন ইটভাঁটিতে এসব গাছ পাচার করা হয় বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন। লালুয়া ইউনিয়নের চরচান্দুপাড়া গ্রাম সংলগ্ন পাউবোর ৪৭/এ পোল্ডারে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট হওয়া বনাঞ্চলের অন্তত আড়াই শ’ গাছ কেটে বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে। গত তিনদিনে এসব গাছ কাটা হয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুজ্জামান তারা অভিযোগ করেছেন।

চেয়ারম্যানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ এমদাদুল হক শুক্রবার সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ১০৫ টুকরা গাছের গুড়ি জব্ধ করেছেন। তিনি জানান, জড়িত বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
চান্দুপাড়া গ্রামের বাসীন্দা রফিক প্যাদা জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা জালাল ও স্থানীয় এক ব্যক্তি এখানে এসে তাদের জানায় এখানকার ছইলা-কেওড়া গাছ তারা নিলামে কিনেছেন। এরপর নির্বিচারে কাটা শুরু হয়। সালাম হাওলাদার জানান, এক মাস আগ থেকে চান্দুপাড়া গ্রামের কালা মিয়া স্লুইজের সোতাখাল থেকে চরচান্দুপাড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার ছইলা-কেওড়া গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার সঙ্গে স্থানীয় মালেক শিকদার ও ইউনুচ মোল্লা সরাসরি জড়িত বলে তাদের অভিযোগ। কাটা গাছ টুকরা টুকরা করে ট্রলার যোগে প্রতি রাতে পটুয়াখালীর ইটভাটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। গাছকাটার নেপথ্যে রয়েছে গ্রামের প্রভাবশালী আশিষ বিশ্বাস ও পিন্টু বিশ্বাস- এমন অভিযোগ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় লোকজনের।

সেন্টু গাজী জানান, কাটা গাছ ট্রলারে তুলে ইটভাটায় নেয়ার সময় তিনি বিট কর্মকর্তা জালাল মৃধাকে ফোনে বলেছেন। কিন্তু কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তার অভিযোগ গাছ কাটার সঙ্গে বিট কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত।
মেম্বার আবুল বশার তালুকদার জানান, গাছ কটার সাথে বিট কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি গ্রামবাসিরা তাকে বলেছেন। এঘটনায় মালেক শিকদার, ইউনুচ শিকদার, আবুবক্কর শিকদার, মমিন শিকাদারও জড়িত রয়েছে বলে গ্রামবাসীর দাবি।
অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা জালাল মুন্সি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ও আশিষ বিশ্বাস ঘটনাস্থলে গিয়ে শুকনো গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। কাঁচা বা জীবিত গাছ কাটার কথা বলেন নি। গাছগুলো বিট দেয়ার প্রচারের সঙ্গে জড়িতের কথা তিনি অস্বীকার করেন। আশিষ বিশ্বাস জানান, গাছগুলো তাদের রেকর্ডীয় জমির মুখশায় থাকায় দুই সপ্তাহ আগে বিট কর্মকর্তা জালাল মুন্সি তাকে ডেকে চরচান্দুপাড়া গ্রামে নিয়ে যায়। এসময় বিট কর্মকর্তার কাছে মালেক শিকদার বনের শুকনো গাছ নেয়ার জন্য বলেছে। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। পিন্টু বিশ্বাস জানান, আমি গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত না।

মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ এমদাদুল হক জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ১০৫ টুকরা ছইলা ও কেওড়া গাছের জব্ধ করেছেন। তিনি আরও জানান, শুকনা কিংবা জীবিত গাছ কাটার নির্দেশ বিট কর্মকর্তা কেন তারও ক্ষমতা নেই। সরকারি গাছ কাটা বা বিক্রির সরকারি বিধান রয়েছে । গাছ কটার সঙ্গে জড়িত ছয় জনের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিট কর্মকর্তা জালাল মুন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top