সকল মেনু

মায়ের মতো বাসায় বসেই ভোটার হতে পারবেন তারেক রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের বাসায় বসেই ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। নির্বাচনের তফসিলের পরেই তিনি ভোটার হন। এখন চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মায়ের মতো বাসায় বসে ভোটার হতে পারবেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র।

তফসিল হয়ে যাওয়ার পর সাধারণ নিয়মে বা মাঠ পর্যায় থেকে ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকে না। তখন বিষয়টি চলে যায় পুরোপুরি কমিশনের হাতে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বর। ফলে এখন কীভাবে বা কোন পদ্ধতিতে তারেক রহমান ভোটার হবেন তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। সব ঠিক থাকলে ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। তারেক রহমান যেহেতু ঢাকার বাসিন্দা—সেই হিসেবে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে তার ভোটার সংক্রান্ত সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।

তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, তফসিলের পর ভোটার হওয়ার বিষয়টি আমাদের হাতে থাকে না। তখন কমিশনের হাতে চলে যায়। কমিশন অনুমতি দিলে তিনি ভোটার হতে পারবেন।

তফসিল হয়ে যাওয়ার পর সাধারণ নিয়মে বা মাঠ পর্যায় থেকে ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকে না। তখন বিষয়টি চলে যায় পুরোপুরি কমিশনের হাতে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছে গত ১১ ডিসেম্বর। ফলে এখন কীভাবে বা কোন পদ্ধতিতে তারেক রহমান ভোটার হবেন তা নিয়ে চলছে কানাঘুষা। তারেক রহমান যেহেতু ঢাকার বাসিন্দা—সেই হিসেবে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে তার ভোটার সংক্রান্ত সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।

ইসি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে ২৯ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ভোটার হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। উনিও তফসিল ঘোষণার পর শেষ মুহূর্তে ভোটার হন। এদিকে, দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় পর লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তার জন্য বাসভবন ও দলীয় অফিস প্রস্তুত করেছে বিএনপি। গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে এই বাসায় থেকেই ভোটার হতে পারেন তারেক রহমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, উনি (তারেক রহমান) কীভাবে ভোটার হবেন এটা ওনার বিষয়। এটা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যতম। আমরা কিন্তু প্রবাসে মেশিন বাসায় নিয়ে গিয়েও ভোটার করি। সুতরাং উনি চাইলে বাসায় বসে ভোটার হতে পারবেন। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন চাইলে বাসায় ভোটার করা যায়।

ভোটার হয়ে প্রার্থীও হতে পারবেন তারেক রহমান

শুধু ভোটার নয়, তফসিলের পর ভোটার হয়ে প্রার্থীও হতে পারবেন তারেক রহমান। এই বিধান কমিশনের রয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইসি চাইলে তিনি ভোটার হয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেই প্রার্থী হতে পারবেন। তারেক রহমান ভোটার হয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আখতার আহমেদ বলেন, ‘না, আমার জানা মতে ভোটার হননি। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে নিবন্ধন করতে পারেন, প্রার্থী হতে পারেন। আইনগতভাবে কমিশনের এই এখতিয়ার রয়েছে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যারা ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, কেবল তারাই আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তবে এর পরও যে কোনো ব্যক্তিকে নিবন্ধন করে ভোট দেওয়া বা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ইসি দিতে পারে বলে জানান সচিব আখতার আহমেদ।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘উনি (তারেক রহমান) কিভাবে ভোটার হবেন এটা উনার বিষয়। এটা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যতম। আমরা কিন্তু প্রবাসে মেশিন বাসায় নিয়ে গিয়েও ভোটার করে থাকি। সুতরাং উনি চাইলে বাসায় বসে ভোটার হতে পারবেন। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিশন চাইলে বাসায় ভোটার করা যায়।’

২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান লন্ডনে যান। এরপর আর দেশে ফিরতে না পারায় তিনি ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে পারেননি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানে দেশে এসে ভোটার তালিকায় নাম লেখান। তারেক রহমানের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের ঠিকানায় ভোটার হন।

ইসির আইনে যা বলা আছে

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীকে ভোটারের তথ্য দিতে হবে এবং মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় উপযুক্ত প্রমাণও দেখাতে হবে।

কমিশনের ভোটার তালিকায় কোনো নাম অন্তর্ভুক্তকরণ বা তা বিলোপন ইত্যাদি ক্ষমতা শীর্ষক ভোটার তালিকা আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে—কমিশন যে কোনো সময়

(ক) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অধিকারী কোনো ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে ইসি।

(খ) মৃত কোনো ব্যক্তির নাম বা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অযোগ্য বা অযোগ্য হয়ে পড়া এমন কোনো ব্যক্তির নাম কর্তন করতে পারবে।

(গ) ভোটার তালিকায় কোনো অন্তর্ভুক্তির সংশোধন বা ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে পারবে ইসি।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের কর্মকর্তা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোটে অংশ নিতে দেশের যে কোনো এলাকার ভোটার হতে হবে ও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে। মনোনয়নপত্র জমার আগেই ভোটার হতেই হবে।

‘ভোটে অংশ নিতে দেশের যেকোনো এলাকার ভোটার হতে হবে এবং ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে। মনোনয়নপত্র জমার আগেই ভোটার হতেই হবে।’—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা

ওই কর্মকর্তা বলেন, সেক্ষেত্রে ভোটার করতে কমিশনের সিদ্ধান্ত এলে দ্রুত যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন শেষে তালিকাভুক্ত করে সম্পূরক তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে।

ইসির হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন/ফাইল ছবি

ভোটার হওয়া ছাড়া প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ভোটার না হওয়ার কারণে তা বাদ হয়ে যাবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে ভোটার তালিকাভুক্ত করলে এ নিয়ে অনেকেই ইসির দ্বারস্থ হতে পারে বলে শঙ্কা থাকে। আর আদালতের পথ তো সব সময় খোলা।

নতুন ভোটার হতে যা প্রয়োজন

এখন ১৬ বছর বয়সেই অনলাইনে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে ১৮ বছরের আগেই হাতে পাবেন এনআইডি কার্ড। কিন্তু ভোটার হতে হলে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে হবে।

নতুন ভোটার হতে প্রধানত বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট, অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন। ঠিকানা প্রমাণের জন্য ইউটিলিটি বিল যেমন বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাস বিলের কপি অথবা কর পরিশোধের রসিদ লাগবে।

রক্তের গ্রুপ যুক্ত করার জন্য রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট যা কোনো ক্লিনিক/হাসপাতাল থেকে আনতে হবে, নিজে লিখে দিলে হবে না। ভোটার আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

ভোটার হওয়ার জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টের সঙ্গে চাইলে পাসপোর্ট নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংযুক্ত করতে পারেন আবেদনকারী। আবেদনকারী যদি বিবাহিত হয় তাহলে আবেদনের সঙ্গে কাবিননামা বা বৈবাহিক সনদ সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি স্বামী অথবা স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি (যদি থাকে) জমা দিতে হবে। যাদের বয়স বেশি হয়ে গেছে তাদের ক্ষেত্রে, আগে কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করেননি—এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top