সকল মেনু

চাঁদপুরের মানবতাবাদী কৃষক তাজুল পেলো বিশেষ সম্মাননা

 শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: নিজের বুদ্ধিমত্তায় চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাগামী মেঘনা এক্সপ্রেস কে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষাকারী চাঁদপুরের শাহরাস্তির পশ্চিম উপলতা গ্রামের সেই তাজুলকে দেয়া হলো বিশেষ সম্মাননা।  বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো: আমির জাফর এ সম্মাননা তুলে দেন তাজুলের হাতে। এছাড়া তাকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়। এসময় চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরীসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। ১৮ দলের ঢাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিন তথা বুধবার দিবাগত রাতে সাড়ে ৪টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের উয়ারুক ও মেহের স্টেশন এলাকায় প্রায় ২০০ ফিট স্লিপার উপড়ে ফেলে অবরোধকারীরা। পাঁচ সন্তানের জনক কৃষক তাজুল ইসলাম ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে রেললাইন ধরে হাঁটার সময় ওই দৃশ্য দেখতে পায়। সে তাৎক্ষণিক বাড়িতে যেয়ে তার স্ত্রী রাহেলা বেগমের একটি লাল রংয়ের পেটিকোট নিয়ে তাতে লাঠি সেঁটে রেললাইন ধরে
মেহার স্টেশনের দিকে দৌঁড়াতে থাকে। অপর দিকে তার বড় ছেলে জামালকে বলে ষ্টেশনে ফোন করে তা স্টেশন মাষ্টারকে জানাতে। তখন চাঁদপুর থেকে প্রায় ৭০০ যাত্রী নিয়ে আন্তঃনগর মেঘনা ট্রেন সেদিকে আসছিল চট্রগ্রাম যাবার জন্য। মেঘনার চালক দূর থেকে
লাল কাপড় দেখে ট্রেনটি থামালে ট্রেনে থাকা ৭০০ যাত্রী প্রাণে বেঁচে যায়। এ ঘটনায় চাঁদপুর-লাকসাম রুটে ট্রেনচলাচল বন্ধ
থাকলেও প্রায় ৫ ঘন্টা পর ট্রেন চলালচল স্বাভাবিক হয়। বৃহস্পতিবার বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের পর চাঁদপুরের পুলিশ
সুপার সাহসী তাজুল ইসলামকে ডেকে এনে একটি সনদপত্র ও নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করে। তাজুল ইসলামের বয়স ৬০ বছর। তার বাবার নাম মোঃ মহব্বত আলী মিজি। মায়ের নাম জিন্নতুন্নেছা। পাঁচ সন্তানের জনক সে। বড় মেয়ে কুলসুমেন্নেছা বিবাহিত। তার স্বামী প্রাণ কোম্পানীর বাসচালক। বড় ছেলে কামাল, মেঝ ছেলে জামাল বাসচালক। সেঝ ছেলে আবু সুফিয়ান রাজমিস্ত্রির যুগালদার। ছোট ছেলে জিয়াউল হক জিয়া গ্রামের একটি মুদি দোকানে কাজ করে। তাজুল চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। তাদের মূল বাড়ি মৌতাবাড়ি হলেও নয় বছর আগে সে পশ্চিম উপলতা গ্রামে নয় শতক জমি কিনে সেখানে বাড়ি করে বসবাস করছে। সে পেশায় একজন ছোট মাছ ব্যবসায়ী। তার বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। ধার-কর্জ ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কাছ
থেকে ঋণ নিয়ে সে নিজের কেনা জায়গায় একটি বাড়ি তুলে বসবাস করছে। সে ও তার পরিবারের কেউই স্কুলে পা মাড়ায়নি। তার বাবাও একজন ছোট মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর তাকে ডেকে আনার পর সে বার বার তার কাছে
একটি ছোট-খাট কাজ বা চাকুরি দেবার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। শুক্রবার তাকে রেল ভবনে ডাকা হয়েছে। রেলভবনে তাকে
সংবর্ধনা প্রদাণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top