শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ধীরে ধীরে বের হচ্ছে ঋণখেলাপির প্রকৃত চিত্র। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৩৩ শতাংশ। হঠাৎ খেলাপি ঋণ এত বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে মোটাদাগে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, শেখ হাসিনার সময়ে বহু নামে-বেনামে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যা গোপন রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো বেরিয়ে আসছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের জন্য খেলাপি ঘোষণার সময়সীমা আগের ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাসে নামানো হয়েছে। এর ফলে খেলাপির অঙ্ক দ্রুত বেড়েছে।
এছাড়া, কৃষি ও এসএমই ঋণে যে বিশেষ সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঘোষণায় ছাড় দেওয়া হতো, সেটি বাতিল করা হয়েছে। এই তিন কারণেই খেলাপি ঋণ তরতরিয়ে বাড়ছে।
এদিকে প্রথমবারের মতো ব্যাংক খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের সংখ্যা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির সংখ্যা তিন হাজার ৪৮৩ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে ব্যাংক খাতে আরও ধস নামবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম জানান, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের টাকা দেশে নেই। সব বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ টাকা দেশে ফেরত আসারও কোনো আশা দেখি না। দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের বিচারের আওতায় আনুন। এখানে কোনো আপিলের সুযোগ রাখা যাবে না। অথবা হাইকোর্টে আলাদা বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করুন। দীর্ঘদিন এদের মামলা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তথ্য নয়, তালিকা প্রকাশ করুন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তা না হলে শুধু তথ্য সংরক্ষণ করলে লাভ হবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।