যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আসন্ন প্রশাসন সাজাচ্ছেন। আর সম্ভাব্য সেই প্রশাসনে তিনি সেই সব রিপাবলিকান কর্মকর্তাদের দ্রুতই নিয়ে আসতে চাইছেন যারা গত চার বছরে তার প্রতি রাজনৈতিক ভাবে সর্বাধিক বিশ্বস্ত থেকেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মতে, ট্রাম্প ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওকে দেশের সর্বোচ্চ কূটনীতিক অর্থাৎ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিতে চলেছেন এবং ডাকোটার গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েমকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি চিফ, অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানের পদ দিতে চলেছেন।
রুবিও ও নোয়েম উভয়ই কয়েক মাস আগে সম্ভাব্য ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন। যদিও ট্রাম্প পরে ওহাইওর সিনেটর জেডি ভ্যান্সকে রিপাবলিকান দল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বেছে নেন, যিনি এখন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট তবুও রুবিও এবং নোয়েম ট্রাম্পের জোর সমর্থক হিসেবেই থেকেছেন।
এছাড়া ট্রাম্প ফ্লোরিডার কংগ্রেস সদস্য মাইকেল ওয়াল্টজকে তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করবেন বলে ঠিক করেছেন। এ বছরের শুরুর দিকে ওয়াল্টজ ওয়াশিংটনের বিমানবন্দরকে ট্রাম্পের নামে নামকরনের দীর্ঘদিনের রিপাবলিকান আইনসভার সদস্যদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন।
সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, অভিবাসন বিষয়ক তার সাবেক প্রধান তার “সীমান্তের জার” হবেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নথিপত্রবিহীন লাখ লাখ লোককে তাদের নিজেদের দেশে পাঠানোর প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবেন। খবরে আরও জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যিনি অভিবাসনবিরোধী সোচ্চার উপদেষ্টা ছিলেন সেই স্টিফেন মিলারকে ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ফর পলিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট তার আরও একজন কঠোর সমর্থক এবং নিউইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত করতে যাচ্ছেন। তিনি আরকানসাসের গভর্নর মাইক হাকাবিকে ইসরায়েলে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিচ্ছেন।
নিজের ভুলগুলো প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না ট্রাম্প, তবু নির্বাচনের ঠিক আগে পডকাস্টার জো রোগানকে ট্রাম্প বলেন, তার আমলে তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল “বাজে কিংবা অবিশ্বস্ত লোকদের” তার প্রশাসনে নিয়ে আসা। তিনি বলেন, “আমি এমন কিছু লোককে বেছে নিয়েছিলাম, যাদের নেওয়া উচিৎ হয়নি”।
তখন যেসব শীর্ষ কর্মকর্তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলেন চিফ অব স্টাফ জন কেলি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন যাদেরকে বাদ দেওয়ার পর তারা ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। এ বছরের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময়ে কেলি বলেন, ট্রাম্প ফ্যাসিবাদী নেতার মতোই।
ট্রাম্প অবশ্য উভয় সাবেক কর্মকর্তাকেই আক্রমণ করে মন্তব্য করেছেন। তিনি কেলিকে “একজন উৎপীড়ক অথচ দুর্বল ব্যক্তি” এবং বল্টনকে “একজন হাবা” বলেও অবমূল্যায়ন করেন। নির্বাচনের আগে বল্টন বলেছিলেন, “ট্রাম্প শীর্ষ পদের জন্য যাদেরকে খুঁজবেন তারা হবেন তার তল্পিবাহক। তিনি কেবল ‘ইয়েস মেন’ এবং ‘ইয়েস উইমেন’ কে চান।”
২০১৬ সালের নির্বাচনের সমেয় রিপাবলিকান মনোনয়ন পাবার সময়ে রুবিওর সঙ্গে ট্রাম্পের তীব্র মতভেদ হয়েছিল। কিন্তু রুবিও, অন্যান্য যারা এক সমেয় ট্রাম্পের সমালোচক ছিলেন, তাদের মতোই এবারের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে তার কঠোর সমর্থক হয়ে ওঠেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে পরিষ্কার বক্তব্য রেখেছন, চীন, ইরান, ভেনেজুয়েলা ও কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। মাঝে মাঝে তিনি রিপাবলিকানদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন যারা বিদেশের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত হওয়া যেমন ২০২২ সালে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের লড়াইয়ে অর্থায়ন দিয়ে সাহায্য করার মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে সংশয়ী ছিলেন।
রুবিও গত সেপ্টেম্বর মাসে এনবিসি নিউজকে বলেন, “আমার মনে হয় ইউক্রেনীয় জনগণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য রকমের সাহস ও শক্তির প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে আমরা যেটাতে অর্থায়ন করছি সেটা এখন একটি অচলাবস্থায় নিমজ্জিত যুদ্ধ এবং সেটা শেষ হওয়া উচিৎ আর তা না হলে দেশটি ১০০ বছর পিছিয়ে যাবে”।
রুবিও বলেন, “আমি রাশিয়ার পক্ষে নই- তবে দুর্ভাগ্যবশত বাস্তবতা হচ্ছে, যেভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হতে চলেছে , সেটি হলো আলোচনার মাধ্যমে নিস্পত্তি”।
আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করতে ট্রাম্প বুধবার ওয়াশিংটনে যাবেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন। এছাড়া প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। ভয়েস অব আমেরিকা
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।