সকল মেনু

‘জবির মেগা প্রকল্প পাস হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষকরা এখনো জানেন না’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের মেগা প্রকল্পটি একনেক সভায় পাস হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে তিনি একথা বলেন।

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষার্থী-শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ইউজিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে একনেক সভায় প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়েছি। কেরানীগঞ্জে সম্পূর্ণ একটা নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। বাংলাদেশে এভাবে এত বড় একটা নতুন ক্যাম্পাস আগে কখনো তৈরি করা হয়নি। পাকিস্তান আমলের শেষে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা ক্যাম্পাস হয়েছিল।

উপদেষ্টা বলেন, এত বড় একটা মেগা প্রকল্প আমরা নেব কিনা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু একনেকের গত মিটিংয়ে অনুমোদন হয়েছে, যেটা আমাদের ছাত্ররা এবং শিক্ষকরাও জানেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস; যেখানে ছাত্রাবাস থাকবে, প্রশাসনিক ভবন থাকবে, স্কুল থাকবে, চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে- এরকম একটা প্ল্যান করার অনুমতি একনেক থেকে পাস করে দেওয়া হয়েছে।

চলমান প্রকল্প নিয়ে তিনি জানান, আর তাদের যে চলমান প্রকল্প আছে সেখানে কিছু জমি অধিগ্রহণ করা এবং জমিগুলো ঠিকঠাক করে কিছু প্রাথমিক কাজ করার। সেটা হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ফেইজ। প্রথম ফেইজটাও ওরা জানার আগে আমি নিজ উদ্যোগে, পরিকল্পনা কমিশনে পড়েছিল অনেকদিন ধরে। আমি সেটা পাশ করিয়ে দিয়েছিলাম। সেটা আগেই পাস করিয়ে দিয়েছিলাম।

চলমান প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, চলমান প্রকল্প নিয়ে আমি তাদের অভিযোগ বুঝতে পারি। এত বছর ধরে প্রকল্পটা কেন হচ্ছে না, ভূমি অধিগ্রহণ কেন হয়নি, তারা বলছে যে প্রকল্প পরিচালকের অনেক দুর্নীতি হয়েছে। আমি বলেছি তদন্ত করে দেখুক কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হোক। বুয়েটের মাধ্যমে তারা প্রথম প্রকল্প পরিচালনা করছে। এটা এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তারা চাচ্ছে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হোক। তাতেও কোনো সমস্যা নেই। তারা যদি সেটা চায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো স্বায়ত্তশাসিত অনেকাংশে, তারা যদি সেটা চায় তাহলে ইউজিসির মাধ্যমে, মন্ত্রণালয়ের এতে কোনো আপত্তি নেই। বরং আমরা সহায়তা করব কি করে তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া যায়। মন্ত্রণালয় এতে সহায়তা করবে।

উপদেষ্টা বলেন, কেরানীগঞ্জে যে বিশাল জায়গাটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সেটা আমি দেখিনি। কিন্তু এটা একটা বিরাট জায়গা এবং একটা মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এটাকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটা মেগা প্রজেক্ট হিসেবে মনে করা যেতে পারে। এটার শুরুটা হবে এখন।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ বিষয়টা তারা নিজেরাও বলেছে ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছে। তাদের আন্দোলনের আগেই অনেক কিছু করিয়ে দিয়েছি। প্রথম ফেইজের পাস করিয়ে দিয়েছি আমার নিজের উদ্যোগে। মহাপরিকল্পনাটাও আমরা একনেক সভায় পাস করিয়ে দিয়েছি। তারা অবগত ছিল না এ সম্পর্কে। আর তাদের ছোটখাটো কিছু দাবি আছে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমাধান করা যেতে পারে। যেমন তারা চাইছে এতদিন যতদূর নিতে হয়েছে তার একটা হোয়াইট পেপার। আমি বললাম আমি কি তোমাদের জন্য পেপার তৈরি করব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আছে তারা তৈরি করবেন।

ছাত্ররা কি আন্দোলন থেকে ফিরে যাচ্ছে- এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা নলেন, ওরা প্রচণ্ড সম্মান দেখিয়েছে আমাকে। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছি। মনে করেছি যে, আমি তাদের সমস্যার সব সমাধান দিতে পেরেছি।

বিভিন্ন দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাতদিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখাসহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে; অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরোনো ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিল করতে হবে; সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ (পাঁচশত) কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

এর আগে, সোমবার (১১ নভেম্বর) তারা সচিবালয়ের সামনে অবরোধ করে। পরে বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে মঙ্গলবার আবারও বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top