কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এখনো বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকার পরও নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত থেকে গেছে। বিগত সরকারের আমলে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে গেজেট পাস করা হলেও এর আইনি ও নৈতিক দিকগুলো একদমই অস্পষ্ট। যার ফলশ্রুতিতে সনদের স্বীকৃতি এলেও এর যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন এখনো পর্যন্ত অধরাই থেকে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বৈষম্য নিরসনে কওমি সনদের যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন’র দাবিতে এক সেমিনরারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এসময় দাবি আদায়ে ১৩ দফা প্রস্তাবনা এবং ২ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ সভাপতি নূরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, নিয়ামতুল্লাহ ফারিদী, খেলাফত মজলিসের মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আতাউল্লা আমিন, মুফতি মুশতাকুন্নবী কুমিল্লা, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা হাসান জামিল, ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক, মুফতি হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, আব্দুর রাজ্জাক কাসেমী, মুফতি ইমাদ উদ্দিন, তাজ উদ্দিন হামিদী, লুৎফর রহমান ফরায়েজী, মুফতি মাহমুদ মাদানী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া, এনামুল হক মুসা, আতাউল করিম মাসুদ, আবু মোহাম্মদ রাহমানী, মুফতি আম্মার হোসাইন, মাওলানা ইউনুস ঢালী, তাজুল ইসলাম মোমেনশাহী, সাকিবুল ইসলাম কাসেমী, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি আমিমুল এহসান, হামজা বিন শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট ইসলামী অর্থনীতিবিদ মুফতি আবদুল্লাহ মাসুম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন রেজাউল করীম আবরার, ইসমাইল সিরাজী, শামসুদ্দোহা আশরাফী, আবদুল আজীজ কাসেমী, নূরুল করীম আকরাম।
ফয়জুল করিম বলেন, সনদের স্বীকৃতি এটা কোনো অনুকম্পা নয়; এটা কওমি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। তাই এর যথাযথ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন রাষ্ট্রকেই করতে হবে।
বক্তারা বলেন, কওমি মাদ্রাসার বিশেষ স্বকীয়তা আছে। সনদের বাস্তবায়ন হতে হবে কওমির মৌলিকত্ব ও এর ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে আপন জায়গায় ঠিক রেখে। আমরা চাচ্ছি যাতে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের মেধাকে মেলে ধরার সুযোগ পায়। উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রগুলোতে এবং যে কোনো প্রতিযোগিতায় বাধাহীনভাবে যেন তারা অংশগ্রহণ করতে পারে। তাদেরকে যেন সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করার সুযোগ কেউ না পায়। তবেই দেশ ও জাতি তাদের দ্বারা আরও বেশি উপকৃত হবে।
সেমিনারে উত্থাপিত প্রস্তাবনাসমূহের উল্লেখযোগ্য হল :
কওমি মাদ্রাসাসমূহের সনদ ইস্যু, স্বীকৃতি ও মানোন্নয়নের জন্য অনতিবিলম্বে আল-হাইআতুল উলয়ার অধীনে ‘ইউজিসি’র অনুমোদনক্রমে কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
দাওরায়ে হাদিস বা তাকমিলের ওই সনদ ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিষয়ে ‘কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে প্রদান করা।
শুধু দাওরায়ে হাদিস নয়, বরং কওমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক হিসেবে ফযিলতের স্বতন্ত্র স্বীকৃতিও প্রদান করতে হবে।
নাহবেমির জামাতকে এসসএসসি, কাফিয়া জামাতকে এইচএসসি মানের স্বীকৃতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষার অধীনে প্রদান করতে হবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী জেলা পর্যায়ে ওই দাবি বাস্তবায়নে সেমিনার ও শিক্ষা অফিসার বরাবর স্মারকলিপি পেশ। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় জাতীয় সমাবেশ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।