সকল মেনু

বাংলাদেশের ইলিশের জন্য ভারতজুড়ে হাহাকার

সামনের মাসেই দুর্গাপূজা। কিন্তু বিশেষ এই সময়টিতে পাতে ইলিশ না থাকার শঙ্কায় আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। কারণ, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিষয়টিকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ‘মাছ কূটনীতি’ আখ্যা দিয়েছেন কেউ কেউ। দুই দেশের ওপর এর কী প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।

ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলতে রপ্তানি বন্ধের এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। তিনি বলেন, ‘অনেক মাছ এখনো বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে। এবার আমরা ইলিশকে সীমান্ত পার হতে দেব না।’

ইলিশ জাতীয় মাছ হলেও বাংলাদেশে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু ধনী এবং মধ্যবিত্তরাই এটিকে হাতের নাগালে পায়। গরিবরা এই মাছ কিনতে পারে না।

ইলিশ নিয়ে নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে ফরিদা আক্তার বলেন, ‘আগের সরকার দুর্গাপূজার সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিত। তারা এটাকে উপহার বলত। এইবার আমি মনে করি না, আমাদের উপহার দেওয়ার দরকার আছে। কারণ, ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানির অনুমতি দিলে আমাদের লোকেরা মাছ খেতে পারবে না।’

ফরিদা আক্তার মূলত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত ‘ইলিশ কূটনীতির’ প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন। হাসিনা সরকারের আমলে বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমগুলোতে ভারতে বিপুল পরিমাণ মাছের চালান পাঠানো হয়েছে। হাসিনা একাধিকবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছেও ইলিশ পাঠিয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জিকেও ৩০ কেজি ইলিশ উপহার দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে শেখ হাসিনার পতনের পর ইলিশ মাছের ওই কূটনীতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এবার ভারতে ইলিশ না পাঠানোর কারণ হিসেবে এই মাছের বেশি ধরা না পড়া, খারাপ আবহাওয়া এবং স্থানীয় বাজারগুলোতে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে নতুন সরকার।

বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইলিশ মাছের প্রধান উৎপাদনকারী দেশ। বঙ্গোপসাগরসহ বাংলাদেশের নদীগুলোতেও এই মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরেন এবং এই মাছের বেশির ভাগটাই আসে সমুদ্র থেকে। বিগত বছরগুলোতে সরকার দুর্গাপূজার সময় বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

তবে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও ইলিশের দাম কমাতে পারছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। নিষেধাজ্ঞার পরও স্থানীয় বাজারগুলোতে এই মাছটির দাম বেড়েছে। একটি দেড় কেজি ইলিশ প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশের দাম কেজিতে ১৫০শ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম পড়ছে। সরবরাহ কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বাঙালি সংস্কৃতি এবং রন্ধনপ্রণালিতে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ইলিশ মাছ। সূক্ষ্ণ স্বাদ এবং নানা ব্যবহারের জন্য এই মাছ প্রশংসিত। তাই ইলিশের অভাব হলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় অঞ্চলের মানুষের জন্যই এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

এদিকে, ইলিশ রফতানির কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ভারতের ফিস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন।

চিঠিতে সংগঠনটি লিখেছে, অত্যন্ত বিনয় এবং শ্রদ্ধার সাথে আপনাকে (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) জানানো যাচ্ছে যে, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি করে আসছি। প্রতি বছর আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করি। দুর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার ইলিশ মাছের রফতানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

ভারতের ফিস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ‘তবে গত ৫ বছর (সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত) বাংলাদেশ সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সময়ের জন্য শুধুমাত্র দুর্গাপূজার সময় ইলিশ মাছ রফতানির অনুমতি দেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আপনার (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রফতানির অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিবেচনা করে সফলভাবে দেশের শাসনভার গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছে ভারতের ফিস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top