সকল মেনু

আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিচ্ছে না ওসমান-গাজী পরিবার

আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এখনও ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি। যার বেশিরভাগ অস্ত্রই শামীম ওসমান ও গোলাম দস্তগীর গাজীর পরিবার পরিজন।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত ২৫ আগস্ট সকল বেসামরিক জনগণকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে এক নির্দেশনা জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যার শেষ দিন ছিল গত ৩ সেপ্টেম্বর।

এরও আগে গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন শামীম ওসমান ও তার বাহিনী। এসব অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযানে এসব অস্ত্র উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে জেলায় ৭৩৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে মোট ৩২১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়ার পর জেলা প্রশাসন বেসামরিক নাগরিকদের দেয়া ১৯১টি অস্ত্রের লাইসেন্স ইতোমধ্যে স্থগিত করেছে। এর মধ্যে ১০২টি শটগান ও বন্দুক, ৬৭টি পিস্তল, ১৪টি রাইফেল ও ৮টি রিভলভার। তবে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩৬টি অস্ত্র জমা হলেও এখনো ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি।

এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে যা তারা জমা দেননি। তাই জেলা প্রশাসন এসব অস্ত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে৷অস্ত্র জমা না দেয়ার তালিকায় নাম আছে শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু ও প্রয়াত সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীর নামও রয়েছে। শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও যুবলীগের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম খানও অস্ত্র জমা দেননি।

এছাড়া অস্ত্র জমা না দেয়াদের তালিকায় আরও আছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার স্ত্রী তারাব পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র হাছিনা গাজী, বড় ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা ও ছোট ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়াও। ২০১৭ সালে তাদের নামে চারটি শটগানের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এছাড়াও তাদের নামে পিস্তলের লাইসেন্সও ছিল।

এর আগে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত নিজাম ও নিয়াজুল। ওই ঘটনায় করা মামলা থেকে তাদের দুইজনকে পুলিশ অব্যাহতি দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

অভিযোগ আছে, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনীর কাছেও একাধিক অবৈধ অস্ত্র আছে। প্রায়ই তারা অস্ত্র হাতে শহরে মহড়া দিত। যদিও আজমেরী ওসমানের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। গত বছর তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে একটি শটগান ও পিস্তলের লাইসেন্সের আবেদন করলেও তার অনুমোদন পাননি।

ওসমান-গাজী পরিবার ছাড়াও রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন অস্ত্র জমা দেননি।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, তাদের ওই অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top