সকল মেনু

‘দেশের ভূখণ্ড রক্ষাই আমার মূলমন্ত্র’

‘কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে একজন মানুষ সফলতার শিখরে পৌঁছাতে পারে। এখানে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ করে কাজ নেই। আমি নারী-পুরুষকে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গিতে কখনো দেখি নাই। আমরা সবাই মানুষ। আমি একজন সৈনিক। দেশ ও দেশের ভূখণ্ড রক্ষাই আমার মূলমন্ত্র।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিক ছাবাতুন উল্লাহ জীম। বিজিবির ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নারী সিপাহী জীম।

সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীমের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জীম। পরিবারে তার বাবা-মা ও বড় ভাই রয়েছেন।

তিনি বলেন, বিজিবির সিপাহী হওয়ার জন্য পরিবারের কাছ থেকেই সর্বপ্রথম তিনি উৎসাহ পান। এটাই প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম বলেন, ট্রেনিংয়ে এসে আমি চেষ্টা করেছি আমার সর্বোচ্চ পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগাতে। ডিফেন্স বাহিনীর প্রতি আমার প্রথম থেকেই টান ছিল। ডিফেন্সের রুলসগুলো ভালো লাগতো। আমি নিজেও সব সময় রুটিনের মধ্যে চলাফেরা করতে পছন্দ করতাম।

তিনি বলেন, ট্রেনিং সেন্টারে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি। সব সময় ভাবতাম আমি একজন নারী বলে আমার পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই, আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর এ কারণেই আমি নবীন সৈনিকদের মধ্যে সেরা তৃতীয় স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছি।

এটি শুধু আমার একার পরিশ্রমের ফল নয় উল্লেখ করে সিপাহী জীম বলেন, এখানে আমাদের স্যারেরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

প্রশিক্ষণে এসে যখন ফায়ারিং এ অংশগ্রহণ করেছেন, তখন আপনার ভয় করেনি? প্রশ্নের জবাবে নবীন এই সাহসী নারী সৈনিক বলেন, ফায়ারিং প্রশিক্ষণের শুরুতেই আমাদের ওস্তাদজীরা বলেছিলেন, এখানে কোনো ভয় নেই আর ভয়কে অবশ্যই জয় করতে হবে। তাদের এই কথা শুনে আমি অনেক সাহস পেয়েছি। তখন আমার মনে হয়েছে এখানে আমার সঙ্গে আরও ৫৫৬ জন ছেলে-মেয়ে প্রশিক্ষণে এসেছেন।

ওদের কিছু হলে আমারও হোক। কারণ আমি দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি। জীবন দিতে হলেও দেশের জন্যই জীবন দেবো। যখন আমি বিজিবিতে এসেছি, তখন থেকেই আমি মনে করি আমার জীবন দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে আমি সৈনিক হিসেবে কাজ করার সময় শত্রুর বিরুদ্ধে আমি রুখে দাঁড়াবো। আমার সর্বশক্তি দিয়ে এই দেশ ও দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করবো।

বিজিবির ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের সব বিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী মো. মিনহাজ হোসেন রাফি। মোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে তিনি সব বিষয়ে সেরা ও প্রথম স্থান অর্জন করেন।

নাটোরের সিংড়া থানার শেরকোল ইউনিয়ন পাচপোতা গ্রামে রাফির জন্ম। নাটোরের সিংড়ায় সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি। বাবার মৃত্যুর পর রাফির পরিবারে মা ও তার এক ছোট বোন রয়েছে।

সিপাহী মো. মিনহাজ হোসেন রাফি বলেন, আমি যখন ট্রেনিং সেন্টারে আসি তখন দেখেছি, ট্রেনিং সেন্টারে লেখা ছিল-‘কঠোর প্রশিক্ষণ নিরাপদ সীমান্ত’। মনে মনে আমি ঠিক করে নিলাম, প্রতিটি প্রশিক্ষণ খুব যত্ন সহকারে ও সুন্দরভাবে গ্রহণ করবো। নীরব সীমান্তকে নিরাপদ রাখবো। কারণ সীমান্ত রক্ষা ও নিরাপদ রাখাই আমরা প্রধান দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, আমি মনোযোগ সহকারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি, সব কিছুই সঠিকভাবে পালন করা চেষ্টা করেছি। যারা আমার প্রশিক্ষক ছিলেন, স্যারেরা ছিলেন তারা আমাকে সুন্দরভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় আমি প্রশিক্ষণ শেষ করতে পেরেছি। প্রশিক্ষক, স্যার ও ওস্তাদজীদের শিক্ষায় আমি রিক্রুট ব্যাচের সবার মধ্যে প্রথম হতে পেরেছি।

এখন আমার একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করা। সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধ বন্ধে কাজ করা, যোগ করেন সিপাহী রাফি।

বিজিবির ১০১তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিএন্ডসি) শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে মোট ৫৫৬ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে।

দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হয়।

এর আগে, প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নবীন রিক্রুট ব্যাচের সর্ব বিষয়ে সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী মো. মিনহাজ হোসেন রাফি, শারীরিক উৎকর্ষতা (পুরুষ) প্রথম স্থান অধিকারী সিপাহী আবু হুরায়রা ও সর বিষয়ে তৃতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষতা (মহিলা) বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকারী সিপাহী ছাবাতুন উল্লাহ জীম এবং ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট সিপাহী মো. শাহিন উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তের কার্যক্রম দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। সীমান্তে চোরাচালান রোধসহ পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলতে হবে। অনৈতিক অর্থ উপার্জন এবং শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে হবে।

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। পারস্পরিক সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। একজন শ্রমিককে সবসময় সাহসিকতার সঙ্গে সঙ্গে ভালো মানুষ হতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top