সকল মেনু

রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে : শিল্পমন্ত্রী

আসন্ন রমজানে যেসব ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াবে তাদের বিষয়ে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রীর নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

রোববার (১০ মার্চ) বিকেল ৩টায় তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটে (বিএসটিআই) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইয়ের বিশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে। তবে এ অভিযানে ভালো ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয় খেয়াল রাখা হবে। একই সঙ্গে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতেও কাজ করবে বিএসটিআই।

রমজানের চাহিদা পুঁজি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের নাগালের বাইরে খেঁজুর। এখন দেখা যায় ১০০ টাজার খেঁজুর ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের কাজ কী হবে? জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে।

এসময় শিল্পমন্ত্রী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আরও বলেন, আকস্মিকভাবে পরিচালিত অভিযানে বিশেষ করে রোজাদাররা সচরাচর যে খাবার ও পানীয় গ্রহণ করে থাকেন, সেগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে। এসময় ফলমূল, পানীয়, ফলের সিরাপ, মুড়ি, খেজুর, কোমল পানীয় পাউডার, কার্বোনেটেড বেভারেজ, ভোজ্যতেল, সরিষার তেল, ঘি, পাস্তুরিত দুধ, নুডলস, সেমাই, পানি, ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট এবং ইফতার সামগ্রীর মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে মোট ৬১৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৬২টি। যার মধ্যে মানসম্মত নমুনা ৫১১টি, নিম্নমানের নমুনা ৫১টি । এছাড়া আরও ৫৪টি নমুনা পরীক্ষাধীন রয়েছে। নিম্নমানের পণ্য সরবরাহকারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শো-কজের পর ১০টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মান উন্নয়ন করে বিএসটিআইকে অবহিত করায় তাদের পণ্য পুনরায় পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করা হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, জুলাই ২০২৩ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত (৮মাস) বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপিরোধকল্পে ১৫৫৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ১৫৪৩টি মামলা দায়ের করে এবং ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করে। এসময়ে ২৩টি কারখানা সিলগালা করা হয় এবং পরিমাপে কম দেওয়ায় প্রেট্রোল পাম্পের ৩৯২টি ইউনিট সিলগালা করা হয়। এছাড়া উক্ত সমেয় ড্রিংকিং ওয়টার, ভোজ্যতেল (ফর্টিফাইড এডিবল ওয়েল) ও অবৈধ প্রসাধনীর বিষয়ে বিশেষ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।

শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, বিএসটিআই পণ্যের হালাল সনদ প্রদান শুরু করছে। এরই মধ্যে ৮৪টি পণ্যের হালাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছ। বিএসটিআই হালাল সনদ প্রদানকালে ধর্মীয় দিকের পাশাপাশি পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড সেফটির বিষয়টি একদল অডিট টিমের মাধ্যমে যাচাই করে দক্ষতার সঙ্গে দেখে থাকে। যার ফলে বিএসটিআই’র হালাল সনদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের পূর্বে বিএসটিআই’র অনুমোদন নিশ্চিত হয়ে পণ্যের অর্ডার করার পরামর্শ প্রদান করেন শিল্পমন্ত্রী। প্রয়োজনে বিএসটিআই’র হটলাইন (১৬১১৯) এ ফোন দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিএসটিআই নিয়মিতভাবে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকে। প্রতি বছর রমজান উপলক্ষে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভেজালবিরোধী বিশেষ অভিযানও পরিচালনা করে থাকে। এবারও রমজান মাসে জনসাধারণ যাতে মানসম্মত খাদ্য ও পানীয় পেতে পারে, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের ওজন ও পরিমাপে কারচুপি রোধকল্পে চলমান মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হবে। ঢাকা মহানগরীতে বিএসটিআইয়ের নিজস্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বন্ধের দিনসহ প্রতিদিন ৩টি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় যেমন: নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সাভার ও ভৈরবসহ ঢাকা বিভাগের সব উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিএসটিআই’র সব বিভাগীয় বা জেলা কার্যালয় থেকে প্রতিদিন একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া র্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স টিমের অভিযান ও বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এ কার্যক্রম পরিচালনকালে অনৈতিকভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে না পারে বিএসটিআই তা মনিটরিং করবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, হাইকোর্টের পূর্বের নির্দেশ থাকায় নির্দেশে এবং জনস্বার্থ বিবেচনা করে বিএসটিআই ফলমূলে ফরমালিন পরীক্ষা করে থাকে। এ বছর ১৯২টি নমুনা বাজার থেকে ক্রয় করে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। তবে কোনোটিতে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

এসময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top