সকল মেনু

বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অগ্নিদগ্ধরা

x1520131107172206.jpg.pagespeed.ic.ZZftyO6mN0 মেডিকেল প্রতিনিধি, ঢাকা, ৭ নভেম্বর:  পিকআপ চালক বাবু। বাড়ি গাজিপুরে। এক মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে ছোট্ট সংসার তার। দিন আনা দিন খাওয়া হলেও বেশ সুখেই চলছিল তাদের সংসার-জীবন। কিন্তু হরতাল সহিংতায় সেই সংসারে নেমে এসেছে ভয়াবহ দূর্যোগ। ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে পরিবারটি। হরতালের সময় পিকেটারদের নির্মম আক্রমণের শিকার হন বাবু। আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় তার পিকআপটি। এসময় তার শরীরের ৭৫ শতাংশই পুড়ে যায়। সমস্ত শরীরে ব্যান্ডেজ। বাবুর স্ত্রী কুলসুম আক্তার জানান, সংসারে আয় রোজগার করার মতো আর কেউ নেই। নেই ওষুধ কেনার মতো সামর্থও। দুঃখ এবং কষ্টের বর্ণনা করতে গিয়ে কুলসুম বলেন, হরতালের সময় তো আর পেট থেমে থাকে না। তাই হরতালের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হন বাবু। আর তখনই বাবুর গাড়িতে আগুন লাগায় পিকেটাররা। ভেতর থেকে বের হবার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাবুর সারা শরীরে। এ তো গেল বাবুর কাহিনী। তারই পাশের বেডে আছেন রোকন। তার শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। রাজবাড়ির রোকন ভাড়ায় কাভার্ড ভ্যান চালাতেন। তিন ভাই ৫ বোন আর বাবা মায়ের সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি তিনি। রোকনের সাথেই কাজ করেন শাহীন। কিছুটা রাগ এবং ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে বলেন, “হরতাল দিবেন তারা। আর কষ্ট আমাগোর মতো সাধারণ মানুষের। রোকন বসে থাকা মানে ওর পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকা। কই এখন তাদের পাশে তো কেউ দাঁড়াচ্ছে না?” হাসপাতালে ছেলের পাশে বসে চোখের পানি ফেলছেন  ল-আমীনের মা। আল-আমীন লেগুনা চালক। সুখের সন্ধানে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন স্ব পরিবারে। থাকেন হাজারিবাগে। আল-আমীনের মা বলেন, ওর গাড়িতে একজন যাত্রী হয়ে ওঠে। আর একজন ছিল নিচে। একটু পরই সে নেমে যায়। তারপর আগুন জ্বলতে থাকে গাড়িতে। আল-আমীনের দু’হাত, দু’পাসহ পুড়ে গেছে শরীরের বেশ কিছু অংশ।

হাসপাতালের একই কক্ষে রয়েছেন ঝিনাইদহের হাসু। তিনি বিশ্বাস টেক্সটাইলে চাকরি করেন। ঢাকায় এসেছিলেন কোম্পানির কিছু জিনিস কিনতে। এটাই হলো তার সর্বনাশের কারণ। হরতালের মধ্যে তিনি ছিলেন একটি সিএনজির যাত্রী। পিকেটাররা ককটেল ফেলে ঐ সিএনজিতে। হাসুর সমস্ত মুখ, হাত, পা ও শীরর যায় পুড়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি সুমি ও তার দাদি। নেত্রকোণার দূর্গাপুর থানায় তাদের বাড়ি। নাতীকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরায় মেয়ের বাড়ি বেড়াতে আসছিলেন তিনি। পথে গাজীপুরে তাদের বাসে আগুন দেয় পিকেটাররা। আট বছরের সুমীসহ মারাত্মকভাবে দ্বগ্ধ হন তিনি।

অপর একজন ক্ষতিগ্রস্থের নাম নাসিমা। তিনি গার্মেন্ট শ্রমিক। হরতালের সময় ঢাকা উদ্যানে লোহার গেটের সামনে বাসে দেওয়া আগুনে শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে।

কর্তব্যরত চিকিৎসক, বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল হটনিউজকে বলেন, গত দুই সপ্তাহের হরতালে অগ্নিদগ্ধ ২৭ রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে বৃহষ্পতিবার মারাও গেছে মনির নামের এক স্কুল ছাত্র। আর যাদের শারীরিক ক্ষতি কিছুটা কম ছিল, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে। এখনও ৭ জন চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা খুবই গুরুতর।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাসান মাহামুদ হাসপাতালে যান আহতদের দেখতে। চিকিৎসার জন্য তিনি পাঁচ থেকে দশ হাজার করে টাকা দেন আহতদের প্রত্যেককে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top