সকল মেনু

বিশ্বমন্দার মধ্যেও রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেন্দ্রিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাও এখনো কাটেনি। তবে এসময়ে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকের বাইরেও একাধিক পণ্যের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যার মধ্যে প্লাস্টিক, কৃষি, সিমেন্ট ও কৃত্রিম ফিলমেন্ট উল্লেখ্যযোগ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। লক্ষ্য পূরণে ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ছিল। আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জনে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে রপ্তানি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট রপ্তানি হয়েছে ২৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের, যা বিগত অর্থবছরের চেয়ে দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসের মধ্যে তিন মাস ইতিবাচক আর তিন মাস নেতিবাচক ধারায় ছিল রপ্তানি। যেখানে জুলাইতে ৪৫৯ কোটি ডলার, অগাস্টে ৪৭৮ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৪৩১ কোটি ডলার, অক্টোবরে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার আর সবশেষে গত ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি হয়েছে ৫৩০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের।

অন্যদিকে, জুলাই মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, আগস্টে ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এরপর অক্টোবর থেকে টানা কমছে রপ্তানি। অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নভেম্বরে কমে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ আর ডিসেম্বরে কমেছে ১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

ইপিবির খাতভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পোশাকশিল্প থেকে আয় হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এখানে প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। স্পেশ্যালাইজড টেক্সটাইলে প্রবৃদ্ধি ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, তবে হোম টেক্সটাইলে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জ্যান্ত ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি করে ৭৩০ কোটি ডলার এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫০৭ কোটি ডলার। এসময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫২৩ কোটি ডলার এবং পাটজাত পণ্য থেকে ৪৩৬ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে।

পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি সামান্য, হোম টেক্সটাইলে হোঁচট

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাকশিল্প খাতে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দুই হাজার ৩৩৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল দুই হাজার ২৯৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, অন্যদিকে ওভেন পোশাকের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ।

একই সময়ে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে রপ্তানি। নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ, জার্মানিতে প্রায় ১৭ শতাংশ। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতিতে অস্থির পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পোশাক রপ্তানিতে ধীরগতি বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাকের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বিকে ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ানুল হক সিরাজী বলেন, ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছেন। ২০২৩ সালে শেষ শিপমেন্ট করার পরে নতুন বছরে (২০২৪ সালে) এখন পর্যন্ত কোনো অর্ডার পাইনি। কিছু বায়ার অল্প ক্রয়াদেশ দিতে চাইছেন। সব মিলিয়ে ক্রয়াদেশের পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top