সকল মেনু

লন্ডনে ‘শেখ কামাল পুরস্কার’ পেলেন ৩ বাংলাদেশি

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের আধুনিক ক্রীড়াঙ্গনের রূপকার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তরুণ প্রজন্মের মেধাবী তিন ব্রিটিশ বাংলাদেশিকে ‘শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল যুব, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রবাসী পুরস্কার ২০২৩’ দিয়েছেন।

রোববার (৬ আগস্ট) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য জানায়।

ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবন, কর্ম ও বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের কথা জানানোর পাশাপাশি তার আদর্শে অনুপ্রাণিত করতে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন ২০২২ সালে এই পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা করে।

এ বছর প্রথমবারের মতো পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ব্রিটেনে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য প্রফেশনাল ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফুটবল খেলোয়াড় লেস্টার সিটি ক্লাবের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী, ইংলিশ টেস্ট ক্রিকেটে ব্রিটিশ বাংলাদেশি খেলোয়াড় এসেক্স কাউন্টি ক্লাবের রবীন দাশ এবং সংস্কৃতি ও মিডিয়া ক্ষেত্রে বিবিসি এশিয়া নেটওয়ার্কে ব্রডকাস্টার নাদিয়া আলি।

এ উপলক্ষে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে এক বিশেষ ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া, সংস্কৃতি, এবং সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সদ্য-স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে তরুণ সমাজকে সুসংগঠিত করে ক্যাপ্টেন শেখ কামাল যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সেজন্য তিনি চির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন।

বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব-লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে আয়োজিত এই স্মারক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন এক নির্ভীক প্রাণশক্তির মূর্ত প্রতীক এবং উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন একজন ট্রেইলব্লেজার, ট্রেন্ড সেটার, ভিসনারি ও যুবসমাজের আইকন।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ফুটবল ও ক্রিকেটসহ ক্রীড়া জগতের ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত আবাহনী ক্রীড়াচক্র আজও বাংলাদেশে ক্রিকেট ও ফুটবলের আলোর দিশারী। তার প্রতিষ্ঠিত শক্ত ভিত্তির ওপরই আজ বাংলাদেশ বিশ্ব-ক্রীড়াঙ্গনেও গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান অর্জন করেছে। বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে এক অসাধারণ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব শেখ কামাল খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সংগীত জগত এবং সদ্য-স্বাধীন দেশে তরুণদের সুসংগঠিত করতে যে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন তা বিশ্বের যেকোনো দেশের তরুণ সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করবে।

হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও পুরুষদের ফুটবল ও ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে এখন প্রায় এক মিলিয়ন প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশি রয়েছেন যাদের নতুন প্রজন্ম মিডিয়া, ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের মেধা ও নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। এই তরুণ প্রজন্মকে শেখ কামালের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানাতে ও অনুপ্রাণিত করতেই হাইকমিশন শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের নামে পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।

হাইকমিশনার শেখ কামালের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম অনুসরণ করে ব্রিটিশ বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে যুক্তরাজ্যে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় আরও সম্পৃক্ত হয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির ও প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান।

স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোজাম্মেল আলি, মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অনুজ সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, বিবিসির সাবেক রাজনৈতিক ও ক্রীড়া বিশ্লেষক উদয় শঙ্কর দাস এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিল ইউকের প্রেসিডেন্ট নঈম উদ্দিন রিয়াজ বক্তব্য দেন। তারা বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম ও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার অতিথি এবং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ কামালের জীবনের ওপর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ উপলক্ষে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে উৎসর্গ করে জনপ্রিয় ব্রিটিশ বাংলাদেশি শিল্পী ও অভিনেতা প্রীতম আহমেদের গান এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি শিশু-কিশোর শিল্পীদের মনোজ্ঞ নৃত্য পরিবেশনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top