* ৫ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন
* ৮ জনের মরদেহ ও ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার
* স্বজনদের আহাজারিতে শোকাহত এলাকাবাসী
* বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল লৌহজং উপজেলা প্রশাসন
* বাল্কহেড আটক, নিহতের ভাই বাদী হয়ে লৌহজং থানায় মামলা দায়ের
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়নের ডহরী তালতলা খালে গত রাতে বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে।
রবিবার রাত পর্যন্ত সর্বশেষ ৭ জনের মরদেহ উদ্ধারের পরে সোমবার (৭ আগস্ট) সকালে নিখোঁজ তিন শিশুর মধ্যে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
রবিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজে থাকা স্বজনদের আহাজারিতে শোকাহত এলাকাবাসী। নিহত হ্যাপি ও পপির ভাই বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আরাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। রবিবার সকালে এ তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পরিদর্শন শেষে তারা জানান, মর্মান্তিক ঘটনায় এখনও দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালুবহনকারী বাল্কহেড চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে লৌহজং থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আটককৃত বাল্কহেডটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মতিন জানান, শনিবার দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার অভিযান চলমান ছিলো। পরে কিছু সময় বন্ধ রেখে ভোর থেকে আবারও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। সোমবার সকালে একজন শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রবিবার বেলা পৌন ১২টার দিকে ট্রলারটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই। তবে নিখোঁজ থাকা বাকি দুই শিশুর কারও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত আটজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এরা সকলেই সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন- হ্যাপি আক্তার (২৮), তার বোন পপি আক্তার (২৬), রাকিব (১২), তার ভাই সাকিব (৮), মোকসেদা (৪০), সাজিবুল (৫) ও ফারিহান (১০)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডা. মো আব্দুল আউয়াল জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল করেছে। আমরা গত বছর বালিগাও ব্রিজের নিচে বাঁশ দিয়ে ব্রাকেট দিয়েছিলাম। নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো এসব নৌযান চলাচলের। তিনি আরও জানান, আমরা কঠোর নজরদারিতে রাখবো সে সঙ্গে যদি কেউ এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে খালটি দিয়ে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল করে তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, আমরা ঘাতক বাল্কহেডটিকে আটক করেছি। ঘটনায় নিহত হ্যাপি ও পপির ভাই রুবেল মামলার বাদী হয়েছেন। দুপুর ২টার দিকে মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।
উল্লেখ্য, জেলার সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের বাসিন্দা পরিবার নিয়ে ৪৬ জন পদ্মা নদীতে ঘুরতে যায়। ঘুরাফেরা শেষ করে বালিগাওয়ের ডহরী খাল দিয়ে রাত ৮টার দিকে বাসায় যাওয়ার পথে হঠাৎ করে বেপরোয়া বালু বহনকারী বাল্কহেড এসে ধাক্কা দেয়। পরে ট্রলারটি ডুবে যায়। তাৎক্ষণিক কেউ কেউ সাঁতার দিয়ে পারে চলে আসে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। এখনও ২ জন শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।