রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি স্থগিত চেয়ে করা সবশেষ আবেদনটিও খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
এতে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাধা রইল না।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) আপিল বিভাগ এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তাহেরের হত্যা ৭১’র বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র বলছে, ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়। গত ২ মে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়েছে। পরে দুই আসামি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন।
এ প্রসঙ্গে গত ৮ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানান, রাবি শিক্ষক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। তবে সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। তার চিঠি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ৫ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছেছে। এখন কারাবিধি মেনেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদশক (ডিআইজি প্রিজন) কামাল হোসেন জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ায় ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা রইলো না। এখন জেলকোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের ধাপগুলো এক এক করে বাস্তবায়ন করা হবে। জেলকোডে আদেশপ্রাপ্তির ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিধান রয়েছে। এর আগে দণ্ডিতদের শেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের সঙ্গে পরিবার এবং স্বজনদের শেষ দেখা করার সুযোগ দেয়ারও বিধান আছে।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোলে পাওয়া যায় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জেরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।
হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
খালাসপ্রাপ্ত দুজন হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।
২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।