সকল মেনু

সুরা ইখলাস পড়ার অসামান্য ফজিলত

সুরা ইখলাস। ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ একটি সুরা। পবিত্র কোরআনের ১১২তম সুরা এটি। যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুরায় তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার পর আল্লাহর সন্তান-সন্ততি আছে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা করা হয় তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। এই সুরাতে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও সত্ত্বার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম ছোট সুরা হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে।

সুরা ইখলাসকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরাগ, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়।

মুশরিকরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর বংশপরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিল। যার জবাবে এই সুরা নাজিল হয়। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে এসেছে যে, তারা আরও প্রশ্ন করেছিল আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি। সোনা-রুপা অথবা অন্য কিছুর? এর জবাবে সুরাটি অবতীর্ণ হয়েছে।

সুরা ইখলাসের ফজিলত অনেক। সুরা ইখলাস যিনি ভালোবাসবেন তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসেছে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে আরজ করলেন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে।

সুরাটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। হাদিসে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা সবাই একত্র হয়ে যাও আমি তোমাদের কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ শোনাব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস পাঠ করলেন।

হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় আছে, সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন। তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন।

সুরা ইখলাস হচ্ছে তওহিদের শিক্ষা। ইসলামের মর্ম হচ্ছে তওহিদ। এ সুরায় শেখানো হয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি কোনো কিছুর সমতুল্য নন তিনি। কোরআন শরিফ আমাদের তিনটি মৌলিক জিনিস শেখায় এ সুরা। তাহলো- তওহিদ, আখিরাত ও রিসালাত। অর্থাৎ আল্লাহ পরকাল ও অহি। অন্য যে কোনো বিশ্বাস এই তিনটার মধ্যে পড়ে যায়। আল্লাহ, আখিরাত এবং আল্লাহর প্রেরিত ওহির প্রতি বিশ্বাস। যখন আমরা বলি আল্লাহকে বিশ্বাস করি এর মধ্যে আল্লাহর সব নাম সব গুণ কাজকে বোঝায়। যখন বলি আখিরাতে বিশ্বাস তার মধ্যে কবরের জীবন বিচার দিবস জান্নাত জাহান্নাম-সব এসে যায়।

সুরা ইখলাম পাঠে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।

সুরা ইখলাস বিপদ-আপদে উপকারী। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তা যথেষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর আগে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ…, কুল আউজু বি-রাব্বিল ফালাক…, কুল আউজু বিরাব্বিন নাস… পড়ার কথা বলেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়া্লাহু আনহা বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করতেন তারপর সেখানে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে শরীরে যতটুকু সম্ভব হাত বুলিয়ে দিতেন। এভাবে তিনবার করতেন।

সুরা ইখলাস দারিদ্র্যতা দূর করে দেয়। হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছুদিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়।

১. যে ব্যাক্তি একবার সুরা ইখলাস পাঠ করলো, সে কোরআন কারিমের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করার সওয়াব লাভ করলো ।

২. যে ব্যাক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করলো, আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতি হাতে জান্নাতের মধ্যে তার জন্য বিশেষ মর্যাদাশীল মহল তৈরি করবে।

৩. যে ব্যাক্তি অধিক পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন।

৪. যে ব্যাক্তি অধিক পরিমাণে সুরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য লাশ বহন করার জন্য হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। ফেরেশতারারা তার লাশ বহন ও জানায়াই শরিক হবেন।

সুরা ইখলাস

قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ اَللّٰهُ الصَّمَدُ لَمۡ یَلِدۡ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ

অর্থ: ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও ওপর মুখাপেক্ষী নন বরং সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনি কারও সন্তানও নন এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’

ইসলামের মূল জিনিসটাই হচ্ছে তওহিদ। এ সুরায় শেখানো হয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি কোনো কিছুর সমতুল্য নন তিনি। কোরআন আমাদের তিনটি মৌলিক জিনিস শেখায়-তওহিদ, আখিরাত ও রিসালাত। আল্লাহ ,পরকাল ও অহি। অন্য যেকোনো বিশ্বাস এই তিনটার মধ্যে পড়ে যায়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের বিশ্বাস, আল্লাহর প্রেরিত অহির প্রতি বিশ্বাস।

যখন আমরা বলি আল্লাহকে বিশ্বাস করি এর মধ্যে আল্লাহর সব নাম সব গুণ কাজকে বোঝায়। যখন বলি আখিরাতে বিশ্বাস তার মধ্যে কবরের জীবন, বিচার দিবস, জান্নাত জাহান্নাম সব এসে যায়। তো এভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে বোঝা যায় বিশ্বাসের এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কথাই বর্ণিত হয়েছে এই সুরাতে।

আপনি যদি শুধু বোঝেন যে এই সুরাতে কী বলা হয়েছে, তাহলে দ্বীনের পথচলা শুরু করার মূলটা আপনি ধরতে পেরেছেন। সহিহ হাদিসে এসেছে, সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন। তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তিনি উত্তর দেন যে এই সুরায় আল্লাহর পরিচয় পাই, তাই এই সুরাকে ভালোবাসি। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসেন।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ইমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। ১. যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। ২. যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। এবং ৩. যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে।

সুরা ইখলাস পাঠকারীর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। সুরা ইখলাসের দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা ‘সমাদ’ অমুখাপেক্ষী। ‘সমাদ’ বলা হয় এমন এক সত্তাকে যিনি সর্ব গুণাবলিতে পরিপূর্ণ। সব সৃষ্টি যার দিকে মুখাপেক্ষী। তিনি সবার থেকে অমুখাপেক্ষী। তার মৃত্যু নেই। তিনি কারও উত্তরাধিকারী নন। বরং আকাশ-জমিনের সব উত্তরাধিকার তার। তিনি না ঘুমান, না উদাসীন হন। তার নেতৃত্ব সর্বময়। জ্ঞানে প্রজ্ঞায় ধৈর্যে ক্ষমতায় সম্মানে। এক কথায় সব গুণাবলিতে তিনি মহান। তিনি এমন সত্ত্বা, প্রয়োজনের সময় সব মাখলুক যার দিকে মুখাপেক্ষী হয়।

আর তিনি একাই সবার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। সমাদ নাম বান্দার মধ্যে তার ক্ষমতা সম্মান এবং সবকিছু থেকে তার অমুখাপেক্ষীতার অনুভূতি তৈরি করে। ফলে বান্দার বিশ্বাস স্থির হয়ে যায়, আল্লাহই তার বান্দার জন্য যথেষ্ট। তিনি তার একান্ত গোপন বিষয় শোনেন। তার অবস্থানও লক্ষ্য করেন। সারা পৃথিবী মিলে তার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে ততটুকুই পারবে যতটুকু তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন।

ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ সুরা ইখলাস। আল্লাহর ভালোবাসা ও নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতের প্রসাদ পেতে নিয়মিত সুরা ইখলাসের আমল করা জরুরি। এতে যেমন ঈমান হবে পরিপূর্ণ তেমনি পরকালের পুরস্কার হবে সুনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ইসলামি চিন্তক ও গবেষক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top