সকল মেনু

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি, আরসা কমান্ডার নিহত

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৭ এলাকায় আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে পুলিশের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী হুসেন মাঝি নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ওয়াকিটকি, মোবাইল, একাধিক মোবাইলের সিম জব্দ করা হয়েছে।

সোমবার (১০ জুলাই) ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) সৈয়দ হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, নিহত হুসেন মাঝি একাধিক হত্যা মামলার আসামি। তারা ক্যাম্পে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো। আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারে ক্যাম্পে কাজ করছে এপিবিএন এর একাধিক টিম।

উল্লেখ্য, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক অস্থিরতার মিশনে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ৩০টির বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী। মিয়ানমারের সঙ্গে গোপন সমঝোতায় এসব সংগঠনের অন্তত দুই হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এই অপতৎপরতায় জড়িত রয়েছে। যার ফলে ক্যাম্পে সংঘটিত হচ্ছে একের পর এক খুন।

জেলা পুলিশের তথ্য মতে, শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত শুক্রবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত ক্যাম্পে খুন হয়েছেন অর্ধ শত ৪৮ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৫৭। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৮১ জন খুন হয়েছেন। অপরদিকে গত সাত মাসে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করেছেন ৭৯ জন স্থানীয় বাসিন্দাকে। তৎমধ্যে অপহৃত ৬ জন খুনের শিকার হয়েছেন। অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৯টি মামলা হয়েছে।

চলতি বছরের ছয় মাস আট দিনে খুন হয়েছেন ৪৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৩২ জনই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় জড়িত নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা নানাভাবে রোহিঙ্গাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হতে কাজ করছেন। শুধু গত এক বছরে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে চার শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত গেলো বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল কুতুপালংয়ের ১ পশ্চিম নম্বর ক্যাম্পের এ/১ ব্লকে যায়। তারা যখন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মিয়ানমারে চালানো নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করছে তখন ওই ক্যাম্পের কাছের ওয়ান/ইস্ট ক্যাম্পের এ/৯ ব্লকে এবাদুল্লাহ নামের ওই ব্লকের উপপ্রধান বা সাব মাঝিকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, এবাদুল্লাহ রোহিঙ্গাদের ডেকে আইসিসির প্রতিনিধিদের কাছে নিয়ে যাওয়ায় তাঁকে আরসা সন্ত্রাসীরা খুন করে।

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব খুনের নেপথ্যে মিয়ানমারের মিশন রয়েছে বলে দাবি করেছেন সরকারের একাধিক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক ৩০টির বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। একই সঙ্গে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে। গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৩০ লাখের বেশি ইয়াবা ও ৩০ কেজি আইসসহ ৮০০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। আর এই মাদকের জের ধরে ১৩৬ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ১৮ মামলায় ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর বাইরেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আলোচনা ঠেকাতে অনেক ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২২২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৩টি নাশকতামূলক বা ইচ্ছা করে লাগানো হয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের প্রধান লক্ষ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা তৈরি করা এবং বিভাজন বাড়ানো। তাদের লক্ষ্য প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে খুন করা। যেমনটি হয়েছিল ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ওই দিন রোহিঙ্গাদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মহিব উল্লাহকে হত্যা করে আরসা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তৎপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১১টির নাম এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টি দলের মধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী ও হোয়াইক্যং ক্যাম্পে। আরসার হয়ে অস্ত্র সংগ্রহে দায়িত্ব পালন করে সাতটি দল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top