সকল মেনু

নেই যাত্রীচাপ, ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রায় খুশি মানুষ

মিরপুর-১০ নম্বর থেকে দুপুর ১২টায় পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালে যান আকরাম হোসেন। পাঁচ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে এনা পরিবহনে ময়মনসিংহের টিকিট কেনেন। ১০ মিনিটের মাথায় বাস টার্মিনাল ছেড়ে যায়।

যাওয়ার আগে আলাপকালে আকরাম হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় চাকরি করি। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি যাই। বিগত বছরগুলোতে টার্মিনালে মানুষের ভিড় ছিল। টিকিট পেতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এ বছর টার্মিনাল ফাঁকা। যাত্রীচাপ নেই বললেই চলে। ঈদযাত্রাও হচ্ছে নির্বিঘ্নে।

তিনি বলেন, ২০ মিনিটে মিরপুর থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে গেলাম; পাঁচ মিনিটে টিকিট কাটলাম। এখন বাসে উঠবো। গুগলে দেখেছি ময়মনসিংহের রাস্তা ফাঁকা। কোথাও কোনো যানজট নেই। এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা অতীতে কখনোই পাইনি।

শুক্রবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন আকরাম হোসেন। এমনকি টার্মিনালের অন্য ঈদযাত্রীরাও ভ্রমণে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। ভবিষ্যতেও ঈদযাত্রা যেন এমন স্বস্তিদায়ক ও আনন্দের হয়, এমনই প্রত্যাশা তাদের।

তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, টার্মিনালে যাত্রী কম থাকায় ঈদযাত্রায় তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এনা পরিবহন ছাড়া অন্যান্য পরিবহনের একেকটি বাসে যাত্রী ভরপুর হতে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা করে সময় লাগছে। এতে এবারের ঈদে তাদের লাভের পরিমাণ কম হবে।

এদিন বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। টার্মিনালে যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের মতোই। ঈদের কোনো হাঁকডাকও নেই। অলস সময় পার করছেন অনেক পরিবহনের শ্রমিকেরা। তবে শুধু এনা পরিবহনে ময়মনসিংহ কাউন্টারে ১৫-২০ জন যাত্রীকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে দেখা গেছে। অন্য বেশিরভাগ কাউন্টার ছিল ফাঁকা।

এনা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মাসুদ হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তাদের কাউন্টারে যেমন ভিড় থাকে, এখন সেরকমই। যাত্রীরা কাউন্টারে আসছেন, টিকিট কেটে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। কারো কোনো অভিযোগ নেই।

ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে প্রায় ১০০টি বাস পরিচালনা করে বিনিময় স্পেশাল সার্ভিস। বেলা ১২টায় এই বাসের কাউন্টারের সামনে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে একজন যাত্রীও দেখা যায়নি।

বিনিময় স্পেশাল সার্ভিসের সুপারভাইজার মো. হায়দার আলী জানান, গত চার-পাঁচ দিন কাউন্টারে যাত্রী চাপ ভালোই ছিল। আজ সকালেও কিছুটা চাপ দেখা গেছে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর পরিমাণও কমতে থাকে। এখন একটা বাসের ৭০ শতাংশ আসনের টিকিট বিক্রি করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটের অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনও ছিল ফাঁকা। যাত্রীর অপেক্ষায় টার্মিনালে বাস দাঁড়ানো। পরিবহন শ্রমিকরা ডেকেও তেমন যাত্রী পাচ্ছেন না।

অনন্যা ক্লাসিকের টিকিট বিক্রেতা মো. আমান বলেন, এই রুটে তাদের মোট ৫৪টি বাস রয়েছে। কাউন্টার থেকে ২০-২৫ মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক বাসে যাত্রী অর্ধেকও হচ্ছে না। তবে রাস্তা থেকে যাত্রী নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই অনেক বাস অর্ধেক যাত্রী পূর্ণ হলেই ছেড়ে দিচ্ছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী রুটের জলসিঁড়ি এক্সপ্রেসের টিকিট কাটেন পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী জামাল। তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় ভিড় হবে, এমন আশঙ্কায় চারদিন আগে পরিবারের সবাইকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ টার্মিনালে গিয়ে দেখি সব ফাঁকা, যাত্রীও কম। ৩০ মিনিট ধরে বাসে বসে আছি। এখনো বাস ছাড়েনি।

মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত টার্মিনালে যাত্রীচাপ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে যাত্রীদের চাপ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এ বছর নির্বিঘ্নে ও আনন্দঘন পরিবেশে ঈদযাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছুতে পারছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top