সকল মেনু

নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধিতা জয়ে চাই সচেতনতা

মোহাম্মদ জাকির হোসেন: প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা মানব বৈচিত্র্যের অংশ। নানা ধরনের শারীরিক ও বুদ্ধিভিত্তিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সমাজের মূলস্রোতধারার বাইরে। তাদেরকে সমাজের মূলস্রোতে এনে স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। প্রতিবন্ধি ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত, ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ততা ও প্রতিকূলতার ভিন্নতা বিবেচনায়, প্রতিবন্ধির ধরনগুলো হচ্ছে- অটিজম বা অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক প্রতিবন্ধি, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, বাক প্রতিবন্ধি, বুদ্ধি প্রতিবন্ধি, শ্রবণ প্রতিবন্ধি, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি ও অন্যান্য।

প্রতিবন্ধিতার ধরনগুলোর মধ্যে চারটি প্রতিবন্ধিতা- অটিজম বা অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস, ডাউন সিন্ড্রোম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতাও সেরিব্রাল পালসিকে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধি বা সংক্ষেপে এনডিডি বলে। সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরীপ অনুযায়ী দেশে মোট শনাক্তকৃত প্রতিবন্ধির সংখ্যা ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৩৯, যার মধ্যে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ৭৮ হাজার ২১৬, ডাউন সিন্ড্রোম ছয় হাজার ১৪, বুদ্ধি প্রতিবন্ধি দুই লাখ ছয় হাজার ৯৮৭ জন ও সেরিব্রাল পালসি এক লাখ ১৩ হাজার ১৬০।

অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের একটি জটিল প্রতিবন্ধকতা যার কারনে এই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের শারীরিক গঠনে কোনো ত্রুটি না থাকলেও তারা পরিবেশের সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না। এর মধ্যে অগ্রগণ্য ভাষার ব্যবহার রপ্ত করতে না পারা, নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে থাকা। অটিজম স্পেক্ট্রামের মধ্যে সুনিশ্চিত উপসর্গগুলোর মধ্যে মৌখিক বা অমৌখিক যোগাযোগে সীমাবদ্ধতা; সামাজিক ও পারস্পরিক আচার-আচরণ, ভাববিনিময় ও কল্পনাযুক্ত কাজ-কর্মের সীমাবদ্ধতা; একই ধরনের বা সীমাবদ্ধ কিছু কাজ বা আচরণের পুনরাবৃত্তি। পাশাপাশি শ্রবণ, দর্শন, স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, ব্যথা, ভারসাম্য ও চলনে অন্যদের তুলনায় বেশি বা কম সংবেদনশীলতা; বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধীতা বা খিঁচুনি; এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা এবং একই ব্যক্তির মধ্যে বিকাশের অসমতা; অন্যের সাথে সরাসরি চোখে চোখ না রাখা বা কম রাখা; অতিরিক্ত চঞ্চলতা, উত্তেজনা বা অসঙ্গতিপূর্ণ হাসি-কান্না;অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও একই রুটিনে চলার প্রবণতা এসব লক্ষণ দেখা যায়।

ডাউন সিনড্রোম একটি ক্রোমোজোমাল ডিসঅর্ডার। প্রতিটি শিশু, মা ও বাবা থেকে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কোনো কারণে ২১তম জোড়ায় একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতি ঘটলে তখন যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয় তাকে ডাউন সিনড্রোম বলে। এর কারণে বিশেষ কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং মৃদু থেকে গুরুতর মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা দেখা দেয়। ডাউন সিনড্রোম প্রতিবন্ধি ব্যক্তির শারীরিক গঠন খাটো; দুর্বল পেশীক্ষমতা; মঙ্গোলয়েড মুখাকৃতি অর্থাৎ তীর্যক চোখ, চ্যাপ্টা নাক, মোটা জিহ্বা; হাতের তালুতে একটি গভীর দাগ থাকে; পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল অন্যান্য আঙ্গুল থেকে ছড়ানো থাকে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হচ্ছে কোন ব্যক্তির বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্যভাবে বুদ্ধির বিকাশ না হওয়া। এ ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়স উপযোগী কার্যকলাপে তাৎপর্যপূর্ণ সীমাবদ্ধতা যেমন, ভাষা ব্যবহার, স্বাভাবিক আচরণ; বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপে সীমাবদ্ধতা যেমন- কার্যকারণ বিশ্লেষণ, শিক্ষণ বা সমস্যা সমাধান; দৈনন্দিন কাজের দক্ষতায় সীমাবদ্ধতা যেমন- পারস্পারিক যোগাযোগ, নিজের যত্ন নেয়া, সামাজিক রীতিনীতি পালনে দক্ষতা, নিজেকে পরিচালনা করা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, লেখাপড়া; বুদ্ধাঙ্ক (আইকিউ) স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা কম।

সেরিব্রাল পালসি হচ্ছে মস্তিষ্কের সেরিব্রামের প্যারালাইসিস। জন্মের আগে, জন্মের সময় বা জন্ম হওয়ার এক বছরের মধ্যে অপরিণত মস্তিস্কে অক্সিজেনের অভাব, কোন আঘাত বা কিছু কিছু রোগের সংক্রমণের কারণে মস্তিস্কে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির কারণে সারাজীবনের জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা, দেহভঙ্গির স্বাভাবিকতা, ব্যক্তির সাধারণ চলাফেরা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ বা বাধাগ্রস্ত করে। জন্মের পর পরই শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা দরকার এবং সনাক্তকরণের পর থেকেইউপযুক্ত পরিচর্যাসেবা প্রদানের মাধ্যমে দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

সেরিব্রাল পালসি সনাক্তকরণের উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে পেশী খুব শক্ত বা শিথিল থাকা; দুই পা, এক পাশের হাত ও পা অথবা উভয় পাশের হাত ও পা আক্রান্ত হওয়া; হাত বা পায়ের সাধারণ নড়াচড়ায় অসামঞ্জস্যতা বা সীমাবদ্ধতা; স্বাভাবিক চলাফেরায় ভারসাম্যহীনতা/ভারসাম্য কম থাকা; যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা; প্রায়শই খিঁচুনী হতে পারে ও মুখ থেকে লালা ঝরতে পারে; দৃষ্টি, শ্রবণ, বুদ্ধিগত বা আচরণগত সীমাবদ্ধতাও থাকতে পারে।

এনডিডি সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ধারনার পরিবর্তন জরুরী।অনেক বাবা-মা মনে করেন অটিজম প্রতিবন্ধীতা নয় বাস্তবতা হচ্ছে অটিজম এক ধরণের প্রতিবন্ধিতা। শুধুমাত্র শিশুরাই অটিজমে আক্রান্ত হয় বাস্তবতা হচ্ছে এটি একটি জীবনব্যপী অবস্থা। তবে শিশু বয়সেই লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।
অটিজম একটি রোগ, চিকিৎসায় ভালো হয় একটি ভুল ধারনা বাস্তবতা হচ্ছে অটিজম একটি স্নায়ু বিকাশজনিত অবস্থা। চিকিৎসা ও সময়মতো এবং নিয়মিত সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে প্রায় স্বাভাবিক অথবা পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।

মা-বাবার পাপের কারণে সন্তান প্রতিবন্ধি হয় এটি সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা ও কুসংস্কার,বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ প্রতিবন্ধিতার কারণ জানা যায়নি। তবে প্রতিবন্ধিতার কারণ যাই হোকনা কেন এগুলোর ওপর মা-বাবার কোনো হাত নেই। তাই সন্তানের প্রতিবন্ধিতার জন্য মা-বাবাকে দোষারোপ বা দায়ী করা ঠিক নয়।

অনেকেই ধারণা করেন, বিদ্যালয় বা সেবাকেন্দ্রে পরিচর্যা করলেই তো শিশু ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বাস্তবতা হচ্ছে, শুধুমাত্র বিদ্যালয় বা সেবাকেন্দ্রে সীমিত সময়ের পরিচর্যা যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি বাড়িতে অভিভাবকদের পরিচর্যার ধারাবাহিকতা এবংসেবা ব্যতিত এই শিশুদের অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়।

অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সকল ব্যক্তির বিশেষকোনো দক্ষতা থাকেবাস্তবতা হচ্ছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিছু কিছু ব্যক্তিরমধ্যে বিশেষ কোনো গুণ বা দক্ষতা থাকতেপারে, কিন্তু সকলের মধ্যেই বিশেষ কোনোগুণ বা দক্ষতা থাকবে তা ঠিক নয়।ডাউন সিনড্রোম সম্পন্নশিশুরা খুব বেশিদিন বাঁচে না বাস্তবতা হচ্ছে, নিয়মিত সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেলেএবং পরিমিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন বাঁচতে পারে।

ডাউন সিন্ড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের পক্ষেচাকরি বা কর্মসংস্থানে যাওয়া সম্ভব না বাস্তবতা হচ্ছে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এরা বুদ্ধিবৃত্তিককাজ ব্যতিত অন্যান্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেদক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।

সেরিব্রাল পালসিপ্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বাস্তবতা হচ্ছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের পরিমিত পুষ্টিকর খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যা, প্রসবকালীন সঠিক সিদ্ধান্তও যত্ন এবং নবজাতক শিশুটির সঠিকব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেরিব্রাল পালসিঅধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।প্রসবকাল দীর্ঘায়িত হলে লেবার রুমেঅক্সিজেনের সরবরাহ আছে এমনহাসপাতালেই প্রসূতি মাকে নিয়েযাওয়ারচেষ্টা করতে হবে।

সেরিব্রাল পালসি সম্পন্নশিশু চিকিৎসা করলেওভালো হয় না এটি ভুল ধারণা, বাস্তবতা হচ্ছে, সময়মতো এবং নিয়মিত সঠিক চিকিৎসা ওপরিচর্যার মাধ্যমে এরা মানসম্মত প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।


এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন এবং আন্তর্জাতিক সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিতকল্পেঅটিজমসহ স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে ২০১৩ সালে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন’ প্রণয়ন করে। এ আইনের বিধান অনুসারে ২০১৪ সালে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন, আবাসন ও পুনর্বাসনের জন্য নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এনডিডি ট্রাস্ট হতে এনডিডি ব্যক্তিদের এককালীন ১০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা অনুদান প্রদান; অতিদরিদ্র এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিকে বড় ধরনের চিকিৎসা ও থেরাপি সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য এনডিডি ট্রাস্টি বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে বিশেষ অনুদান প্রদান; এনডিডি শিশু ও ব্যক্তির মা-বাবা ও কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ প্রদান;বিশেষ স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণপ্রদান; প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৯, প্রণয়ন করে এনডিডি শিশুদের সমন্বিত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা;এনডিডি শিক্ষার্থীদের উপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ কারিকুলাম প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে এর গাইড লাইন প্রস্তুত করা হয়েছে; অটিজম শনাক্তকরণওমাত্রানিরূপণেরজন্য ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ ও ‘বলতে চাই’ নামক অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে।

এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা;’ চালু করা হয়েছে। এই বীমার আওতায় ৩-২৫ বছর বয়সের সুবর্ণ কার্ডধারী বীমা গ্রাহকদের নির্ধারিত সীমার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরবর্তী ব্যয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে পুনর্ভরণ করা হবে। নির্ধারিত সীমার উপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত বীমা সুবিধা প্রদান করা হবে। এই বীমার পাইলটিং র্কাযক্রমের অওতায় ৫০৪ জন এনডিডি শিশু ও ব্যক্তি এবীমা গ্রহণ করেছে। নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য গৃহীত দেশের ১৪টি স্থানে ১৪টি ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৫ তম “বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, ২০২২” উদযাপন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, আবাসন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গৃহীত ‘দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে আটটি আবাসন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এত চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে এত ভুল ধারণাথাকা সত্বেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঘরে বসে নেই। সারা বিশ্বে যেভাবে প্রতিবন্ধীব্যক্তিরা এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশেও তারা খুব বেশি পিছিয়ে নেই।বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে একাগ্রভাবে বিশ্বাসী।পাশাপাশি বেসরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও প্রচুর কাজ হচ্ছে। সরকার আইন, নীতিমালা, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মকৌশল নির্ধারণকরে এগুলির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটেবরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রতিবছর ২ এপ্রিল তারিখে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস সারা দেশব্যাপী যথযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়ে থাকে এবং এ বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে।

সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে শিশু বিকাশকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় এবং বেশ কিছু উপজেলায় প্রতিবন্ধি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলিতে অটিজম কর্নার চালু করা হয়েছে।বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও সারাদেশে বিদ্যালয় ও সেবাকেন্দ্র পরিচালিতহচ্ছে। এগুলিতে শিক্ষার পাশাপাশি এদেরকে কর্মক্ষম করার উদ্দেশ্যেদক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনার কারণেবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীরবাইরে আরও প্রশিক্ষণ ও সেবাকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও তাদের সনাক্তকরণ, চিকিৎসা, পরিচর্যা ও পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিতকরার জন্য জাতীয় থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে বেশকিছুপ্রতিষ্ঠান/কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকায়ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম (আইপিএনএ),শিশু ও কিশোর মনোরোগবিদ্যা বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা; মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও মানসিক রোগ বহিঃ বিভাগ; বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের শিশু বিকাশ কেন্দ্রসমূহ; জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল;সমাজসেবা অধিদপ্তর এর আওতাধীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়সহবিভিন্ন ইউনিটএবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ১০৩টি প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে এনডিডি ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ ওয়ান স্টপ থেরাপি সার্ভিস (মোবাইল ভ্যান) ওপ্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্য কেন্দ্রসমূহে এনডিডিসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ কাউন্সিলিং, ফিজিওথেরাপী, অকুপেশনাল থেরাপী, স্পিচ থেরাপী, সহায়ক উপকরণ ইত্যাদি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে।

আমাদের যার যার অবস্থানথেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুযোগ ও সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করলেই প্রতিবন্ধীশিশু ও ব্যক্তিরা পরিবারের ও সমাজের বোঝা না হয়ে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। তবে এই দায়িত্ব পালনেরআবশ্যিক পূর্বশর্ত হলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন।

এনডিডি বিষয়ে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আপনার শিশু বা পরিবারের কোন সদস্যকে জন্মের পর থেকে যে কোন বয়সেই অস্বাভাবিক মনে হলে নিকটস্থ সরকারি স্বাস্থ্য বো কেন্দ্র/ হাসপাতালে নিয়ে যান। তার মধ্যে কোন প্রকারের প্রতিবন্ধিতা আছে কিনা তা চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন। সন্তান বা পরিবারের সদস্য প্রতিবন্ধী হলে না ঘাবড়ে না লুকিয়ে তাকে চিকিৎসা ও নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করুন। নিকটস্থ সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরীপের আওতায় আনুন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট থেকে প্রদত্ত সেবা গ্রহণ করুন। সমাজের অন্যান্য সকলের মত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও আছে মুক্ত পরিবেশে জীবন উপভোগ করার সমানাধিকার।

লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার (জনসংযোগ কর্মকর্তা), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top