সকল মেনু

নোয়াখালীতে গরু বেপারী হত্যার রহস্য উদঘাটন গ্রেপ্তার ৫

কামাল হোসেন মাসুদ

নোয়াখালী জেলার চরজব্বর থানাধীন মোহাম্মদপুরের চরলক্ষী এলাকায় আলোচিত গরু বেপারী দিদারুল আলম প্রঃ বেচু (২০) এর টাকা ছিনতাই ও ক্লু-লেস হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং আসামী গ্রেফতার করে নোয়াখালী ডিবি পুলিশ। মিট দ্য প্রেসে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম পিপিএম এসব তথ্য জানান।

গত ৬ মার্চ সকাল অনুমান ১১টার দিকে গরু বেপারী দিদারুল আলম প্র. বেচু ছমিরহাট বাজার গরু বিক্রিয় করে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টার সময় চরজব্বর থানাধীন ৮ নং মোহাম্মদপুর ইউপির চরলক্ষী গোলাম মাওলার কিল্লা সংলগ্ন শওকতের প্রজেক্টের দক্ষিণ পাশে কাঁচা রাস্তার ওপর পৌঁছাইলে অজ্ঞাতনামা আসামীরা দিদারুল আলম প্র. বেচু পথরোধ করে তার মাথার পিছনে, কপালে, বাম চোখের উপরে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে গুরুতর জখম করে এবং দিদারুল আলম প্রঃ বেচু নিকট থেকে গরু বিক্রির টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনাইয়া নিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় দিদারুল আলম প্র. বেচুকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে হস্তান্তর করে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম দিদারুল আলম প্র. বেচু গত ১০ মার্চ সকাল পাঁচটার সময় মৃত্যুবরণ করেন।

পুলিশ সুপার নির্দেশে ডিবি, নোয়াখালীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদের নের্তৃত্বে  নিরস্ত্র বিভাগীয় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফুল ইসলাম খাঁন সহ সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসার ফোর্সের সমন্বয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ওই ঘটনায় দিদারুল আলম প্র. বেচু বোন বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় গত ১০ মার্চ এজাহার দায়ের করলে চরজব্বর থানার মামলা নং-০৩/৩৯, ধারা-৩৯৪/৩০২ পেনাল কোর্টে রুজু হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার এর নির্দেশে মামলাটি ডিবি, নোয়াখালীতে হস্তান্তর করিলে অফিসার ইনচার্জ, ডিবি মামলার তদন্তভার নিরস্ত্র বিভাগীয় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শরীফুল ইসলাম খাঁন মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ডিবি টিমের সমন্বয়ে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে গত ১১ মার্চ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামি মো. বেলালকে (২০) কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন নতুন বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামি মো. বেলালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ও হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ও আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে ইচ্ছা পোষণ করায় তাকে গত ১২ মার্চ আদালতে উপস্থাপন করা হলে আসামি আদালতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে, ঘটনায় নিজের ও অপর ছয়জন আসামির জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এসএম মোসলেহ উদ্দিনের আদালতে সিআরপিসি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রকাশিত আরো চারজন আসামি-
১। মো. রাশেদ(৩০);
২। মো. মাইন উদ্দিন (৩২);
৩। মো. মহিন উদ্দিন ও
৪। মো. লোকমান (৩০।

তাদেরকে পৃথক পৃথক অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভিকটিমকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত যেমন- ১. ব্যবহৃত ধারালো ছুরি, ২. গাছের ঢাল, ৩. ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে ঘটনাস্থলে আনায় ব্যবহৃত অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয়। ওই আসামিদের মধ্য থেকে আসামী মো. রাশেদ (৩০) আদালতে হত্যাকাণ্ডেরি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে, ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত ১৩ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে সিআরপিসি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

গত ৬ মার্চ দুপুরে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও প্রাপ্ত তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম দিদারুল আলম (২০) গরু বিক্রির জন্য বাড়ি থেকে দুইটি গরু নিয়ে স্থানীয় ছমিরহাট বাজারে যায়। একটি গরু ছমিরহাট বাজারে বিক্রি করে। অপর গরুটি কেরানী বাজারে বিক্রি করে বাড়ীতে ফেরার পথে রাস্তা থেকে সন্ধ্যার পূর্ব মুহুর্তে আসামীদের একজন কৌশলে তার অটোরিক্সায় করে ঘটনাস্থল চরজব্বর থানাধীন ৮ নং মোহাম্মদপুর ইউপিস্থ চরলক্ষী গোলাম মাওলার কিল্লা সংলগ্ন শওকতের প্রজেক্টের দক্ষিণ পাশে কাঁচা রাস্তার ওপর নিয়ে আসে। ওৎ পেতে থাকা অপর আসামিরা ভিকটিমকে আক্রমণ করে ভিকটিমের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। আসামীরা গাছের লাঠি ও ছোরা দ্বারা ভিকটিমের মাথার পেছনে, কপালে, বাম চোখের ওপরে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে গুরুতর জখম করে চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভিকটিম গত ১০ মার্চ ভোর পাঁচটার দিকে মারা যান।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন-
১। মো. বেলাল (২০);
২। মো. রাশেদ (৩০);
৩। মো. মাইন উদ্দিন (৩২);
৪। মো. মহিন উদ্দিন (২১);
৫। মো. লোকমান হোসেন (৩৭)।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top