সকল মেনু

ম্যারাডোনাও স্বীকার করেছিলেন পেলে সর্বকালের সেরা

হটনিউজ ডেস্ক:

বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুই মহাতারকা ছিলেন তারা। এর মধ্যে আর্জেন্টাইন ‘ফুটবল ঈশ্বর’ ডিয়াগো ম্যারাডোনা চিরবিদায় নিয়েছেন দুই বছর আগে, ২০২০ সালে। আর গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) না-ফেরার দেশে পাড়ি দেন ফুটবলের ‘কালো মানিক’ খ্যাত পেলে। ক্যানসারে সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে ৮২ বছর বয়সে জীবনের কাছে পরাজিত হন ব্রাজিলিয়ান এই আইকন।

এই দুই কিংবদন্তি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে বিদায় নিলেও তাদের মধ্যে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে, ভক্ত সমর্থকদের মাঝে এই নিয়ে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। কথার লড়াইয়ে এখনও লিপ্ত হন অনেক ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু বাস্তবে পেলে ও ম্যারাডোনা নিজেদের মধ্যে তুলনা করতে পছন্দও করতেন না। বরং একসঙ্গে তাদের বিভিন্ন সময় আনন্দে সময় কাটাতে দেখা গেছে। এই দুই কিংবদন্তির সম্পর্ক ছিল সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে ভালো বন্ধুর মতো।

ফুটবল ক্যারিয়ারের খেলোয়াড়ি দিনগুলোতে মাঠ ও মাঠের বাইরের নানান বিতর্কের সঙ্গী হয়েছিল ম্যারাডোনা। কিন্তু সেসব বিতর্ক ব্রাজিলিয়ান আইকন পেলের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জেতানো এই ফরোয়ার্ডের। লাতিন আমেরিকার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের কিংবদন্তিরা একে অন্যকে বিশেষ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতেন। সেই ম্যারাডোনাও স্বীকার করেছেন যে, ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার।

মৃত্যুর কয়েক বছর আগে এক টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেলের সঙ্গে নিজের তুলনা প্রসঙ্গে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি এমন কথা জানিয়েছিলেন। ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘না, না, ম্যারাডোনা ম্যারাডোনাই। পেলে সেরাদের সেরা। আমি শুধুই একজন সাধারণ খেলোয়াড়। আমি পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই না। সবাই জানে তিনি (পেলে) সর্বকালের সেরা।’

যদিও বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা যখন ২০০০ সালে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেকে সর্বকালের সেরা অভিহিত করে, তখন বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা ও ডিয়াগো ম্যারাডোনার ভক্ত-সমর্থকরা। সেই সময় ম্যারাডোনাও ফিফার এমন সিদ্ধান্তে বিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ম্যারাডোনাই পরে স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, পেলেই সর্বকালের সেরা।

তবুও ফুটবল বিশ্ব একপক্ষ পেলেকে, অন্যপক্ষ ম্যারাডোনাকে সেরা মানতে চান। কিন্তু যেখানে ম্যারাডোনা নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলেই সেরা সেখানে আর বিতর্কের কোনো অবকাশ থাকে না।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনার সঙ্গে পেলের সম্পর্ক ভালো নয় বলেও আলোচনা হত। কিন্তু দু’জনের সম্পর্ক একে অপরের সঙ্গে যে মধুর ছিল সেটা নানা সময়ে দু’জনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবিতে দেখলেই বোঝা যায়। এই দুই কিংবদন্তি একে অপরকে গভীরভাবে শ্রদ্ধাও করতেন।

পেলে এবং ম্যারাডোনা কখনই একে অপরের বিপক্ষে খেলেননি। কারণ, ম্যারাডোনার ক্যারিয়ার যখন শুরু, পেলে তখন সাবেকদের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। ১৯৭৭ সালে নিউইয়র্ক কসমসের জার্সিতে পেলের ফুটবলকে বিদায় জানানোর ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার পর জার্সিতে খেলা শুরু করেন।

ব্রাজিলকে ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জেতান পেলে। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতান এই নায়ক। তিনিই একমাত্র ফুটবলার, যার নামের পাশে শোভা পাচ্ছে তিনটি বিশ্বকাপের ট্রফি।

অন্যদিকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ম্যারাডোনা উপহার দিতে পেরেছেন কেবল ১টি বিশ্বকাপের স্বাদ। তবে ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও জার্মানির কাছে হারতে হয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে।

জাতীয় দল এবং ক্লাবের জার্সিতে সমান ১৪টি করে শিরোপা জিতেছেন পেলে এবং ম্যারাডোনা। তবে দেশের জার্সিতে গোলের দিক দিয়ে ম্যারাডোনা অবশ্য পেলের চেয়ে বেশ পিছিয়ে। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯০ ম্যাচে ৭৭ গোল পেলের। তবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেন ম্যারাডোনা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top