সকল মেনু

নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর মেসি

হটনিউজ ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পর্দা নেমেছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ২২তম আসরের। প্রথমবারের মতো মুসলিমপ্রধান দেশে অনুষ্ঠিত এই বিশ্ব আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। অথচ, মরুর বুকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই লিওনেল মেসিরা হেরে গিয়েছিল শক্তি, সামর্থ কিংবা পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে যোজন যোজনে পিছিয়ে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের কাছে। এরপর তো ফুটবল বিশেষজ্ঞদের অনেকেই লে আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় দেখে ফেলেছিল। কিন্তু খাদের কিনারা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেদের বার বার প্রমাণ করে সেই দলটিই জিতে নিয়েছে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির মুকুট।

এ জন্যই বুঝি ফুটবল বিশ্বকাপকে বলা হয় ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।’ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজেয় দল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের আগে থেকেই অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছিল তাদেরকে। সেই ১৯৮৬ সালে ডিয়াগো ম্যারাডোনার হাত ধরে তাদের সবশেষ বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরা। এরপর দীর্ঘ ৩৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শিরোপা খরা কাটেনি, তাই বিশ্বকাপের আগে থেকেই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে একরাশ কষ্ট ও পরাজয়ের বেদনা তাড়া করছিল। মাঝে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে মারাকানার সেই ফাইনালে জার্মানির কাছে স্বপ্ন বিসর্জনের বুক চাপা কান্না তো ছিলই। সবমিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপের আগেই লিওনেল মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্বকাপই তার ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপের মঞ্চ।

তাই নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নামার আগে মেসি জানিয়ে দিয়েছিলেন, কাতারে শিরোপা জয়ের জন্য নিজের সম্ভাব্য সব চেষ্টাই তিনি করবেন। বিশ্বকাপের আগে লাতিন আমেরিকা উপমহাদেশের লড়াইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ট্রফি আর ইতালিকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালিসিমার শিরোপা জয়ের উল্লাসে লিওনেল স্কালোনির দলকে এবার আশাও জাগিয়েছিল বেশ। তবে বাস্তবতায় যে তা আকাশ পাতাল ফারাক, তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি গোটা আর্জেন্টিনা দলকে।

কাতার বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে পোল্যান্ড, মেক্সিকো আর সৌদি আরবের সঙ্গী হয়েছিল আর্জন্টিনা। উদ্বোধনী ম্যাচের দুদিন পর সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার প্রথম খেলা। এই ম্যাচে জিতলেই এবারের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা ইতালির সঙ্গে টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়বে আকাশি নীল শিবির। ম্যাচ শুরুর মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরুও করেছিলেন মেসি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানেই জোড়া গোল হজম করে পরাজয়ের করুণ বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় দি পল, ডি মারিয়াদের।

মরুর বুকে বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের শিকারে আর্জেন্টিনার বিদায়ের শঙ্কা জাগে সমর্থকদের মনে। কারণ, গ্রুপের অন্য দুই প্রতিপক্ষের চেয়ে সৌদি আরবই ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল। তাই নিজের শেষ বিশ্বকাপে খেলতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন মেসি। কারণ ফুটবল তো এমন নয় যে তিনি একাই সব করে দিবেন। তখনই ঘুমের ঘোরে থাকা আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়দের ভুল ভাঙতে শুরু করে। দলের সবাই বুঝতে শেখে যে, ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।’

তারুণ ও অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক মেসির সব সতীর্থরাই মনে প্রাণে চায়, যেন ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে বিশ্বকাপের ট্রফি যেন উঁচিয়ে ধরতে পারে মেসি। তাই হারানোর ভয় কাটিয়ে মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। এবার মেসির এক গোলের সাথে তরুণ মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজের দারুণ এক গোলে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ফলে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হয়ে দাঁড়ায় ডু অর ডাই, জয় পেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্ব নিশ্চিত হবে আর্জেন্টিনার। ড্র হলে গ্রুপের অন্য দলের ওপর ভরসা আর হেরে গেলে তো সোজা বিদায়।

এমন সমীকরণের ম্যাচে জালের দেখা পায়নি সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী তারকা লিওনেল মেসি। তাকে পোলিশ রক্ষণভাগে বারবার পরাস্ত করে ফেলছিল। এমনকি ৩৯তম মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও তা মিস করে বসেন মেসি। ফলে প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকায় বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইটাও বেশ জমে উঠেছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই মেসির সেই ব্যর্থতাকে গোলের মাধ্যমে হাসিতে রূপান্তর করেন অ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার। এরপর দ্রুত আরেকটি গোল করেন ২২ বছর বয়সী জুলিয়ান আলভারেজ। ফলে শেষ পর্যন্ত সব অনিশ্চয়তাকে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে পা রাখে স্কালোনির দল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top